বিশাল ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়ো গল্পের বিষয়বস্তু
লাতিন আমেরিকার প্রসিদ্ধ লেখক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের এক জাদু-বাস্তবতার গল্প ‘বিশাল ডানাওয়ালা এক থুরথুরে বুড়ো’। এই গল্পে এমন এক অদ্ভুতদর্শন মানুষের গল্প বলা হয়েছে যার বাস্তব অস্তিত্ব কল্পনা করা কষ্টকর। এই অদ্ভুত মানুষটিকে কেন্দ্র করেই মানুষের মনোজগতের উদ্ঘাটন করেছেন লেখক। তাকে ঘিরে গড়ে উঠেছে গদ্যের শৃঙ্খল। তিনদিনের টানা বৃষ্টির মধ্যে প্রকৃতি যখন বিপর্যস্ত তখন পেলাইও ও এলিসেন্দা তাদের বাড়িতে এক অদ্ভুতদর্শন মানুষকে দেখতে পায়। উঠোনের পেছন কোণে কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে শুয়ে সে কাতরাচ্ছে। মানুষের মতোই দেখতে। কিন্তু তার রয়েছে বিশাল দুটো ডানা। কিন্তু সেই ডানায় যেন ওড়বার শক্তি নেই।
পেলাইও-এলিসেন্দা ভাবল এই বুড়ো হয়তো ভিনদেশি জাহাজের কোনো নিঃসঙ্গ নাবিক। চারদিকে খবর রটে গেল ডানাওয়ালা বুড়ো সম্পর্কে। এক পড়োশিনি তাকে দেখতে এসে ‘দেবদূত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। পেলাইও-এলিসেন্দার জ্বরগ্রস্ত বাচ্চাকে নিতে এসে সে হয়তো তুমুল বৃষ্টিতে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। নানা জনে তার সম্পর্কে নানা ধরনের মন্তব্য করে। তাকে পাড়ার লোকেরা দেখতে এসে ছুড়ে ছুড়ে খাবার দিয়েছে। কেউ তাকে নিয়ে মজা করছে কেউ তার গায়ে ঢিল মেরেছে। সে যেন হয়ে উঠেছে কোনো সার্কাসের জন্তু। এমনকি যাজক পাদ্রে গোনসাগার লাতিন সুপ্রভাতের উত্তরে সে যে গুনগুন করে কী বলল তা বোঝাই সম্ভব হল না। ফলে তিনি তাকে জোচ্চর, ফেরেববাজ বলে আখ্যা দিলেন।
সবথেকে বড়ো কথা, এত হাজার অত্যাচারের পরও ডানাওলা বুড়ো নির্লিপ্ত, নিশ্চুপ হয়ে থাকল। গরম লোহার ছ্যাঁকা খেয়েও সে অসীম ধৈর্য নিয়ে চুপ করে থাকল। অথচ এই বিকারহীন অতিপ্রাকৃত জীবনটিকে দেখার জন্য পেলাইওর বাড়ির সামনে লোক ভেঙে পড়তে লাগল। তখন পেলাইও ও এলিসেন্দার মাথায় এক বুদ্ধি খেলে গেল এবং তারা ডানাওয়ালা থুরথুরে বুড়োর দর্শনি বাবদ পাঁচ সেন্ট বরাদ্দ করল। এর ফলে তারা প্রচুর লাভবান হল এবং কিছুদিনের মধ্যেই তারা বেশ ধনী হয়ে উঠল। ঠিক সেই সময় শহরে এল এক ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী।
সেই ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর মাকড়শারূপী মেয়েটি ডানাওয়ালা দেবদূত বুড়োর থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠল। ফলে পেলাইও-এলিসেন্দার উপার্জনের ধারায় কিছুটা টান পড়ল কিন্তু তাদের মধ্যে এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না। এইখানেই লেখক জাদু-বাস্তবতার এক অপূর্ব সম্মোহন শক্তিকে প্রকাশ করেছেন। প্রকৃত অর্থে মানবমনের এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিকে তুলে ধরাই তাঁর লক্ষ্য। প্রচুর ধনী হয়ে ওঠার পর এই অতিপ্রাকৃত জীবের প্রতি তাদের কোনো বিশেষ আকর্ষণ কাজ করছিল না। দেখা গেল শীতকাল আসার পর বুড়োর ডানায় ধীরে ধীরে পালক গজাল।
একদিন রান্নাঘরে বসে সবজি কাটতে কাটতে এলিসেন্দা দেখতে পেল বুড়ো তার ডানা দিয়ে ওড়বার চেষ্টা করছে, এবং হঠাৎই সেই অতিপ্রাকৃত জীব উড়তে উড়তে দিকচক্রবালে মিলিয়ে যাচ্ছে। তখন সে যেন নিছকই একটা কাল্পনিক ফুটকির মতো। সে আর কোনো উৎপাত বা জ্বালাতন নয় পেলাইও-এলিসেন্দার জীবনে। তাদের জীবনে এখন সে অপ্রয়োজনীয়। কোনো মায়া মমতা বেদনা কেউ অনুভব করছে না তার জন্য।
আরও পড়ুন – ভারতে প্রচলিত ভাষা পরিবার MCQ