বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিবেকানন্দের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো
উনিশ শতকীয় নবজাগরণে বাংলায় যে কয়েকজন মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছিল, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। সংস্কারাচ্ছন্ন, সংকীর্ণচিত্ত, পরাধীন ভারতবাসীর অন্তরে তিনি জাগিয়েছিলেন পুনরুজ্জীবনের চেতনা। ধর্মসাধনা, দেশপ্রেম, ভক্তি ও আবেগের পাশাপাশি হুতোমের পথ ধরেই বাংলা গদ্যসাহিত্যে স্বামীজির আবির্ভাব। স্বামীজি স্বদেশবাসীর বোধোদয় ঘটানোর উদ্দেশ্যে নিজের কথা ও চিন্তাকে ব্যাখ্যা করার জন্য ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ (১৯০২), ‘বর্তমান ভারত’ (১৯০৫), ‘পরিব্রাজক’ (১৯০৫), ‘ভাববার কথা’ (১৯০৭), ‘পত্রাবলী’ (১৯০৫-২৫) প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন।
অবদান : স্বামীজির রচনায় তৎকালীন ভারতবর্ষের অবস্থা বর্ণনার পাশাপাশি প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দর্শন, বেদ-উপনিষদ-পুরাণ-শাস্ত্রের প্রসঙ্গও অনিবার্যভাবে এসেছে। তাঁর সাহিত্যে দেশাত্মবোধ ও মানবতার কল্যাণের আদর্শ প্রতিধ্বনিত। ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে তিনি বৈজ্ঞানিক পন্থায় ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র, রাজতন্ত্র, ক্ষত্রিয়তন্ত্র, বৈশ্যতন্ত্র ও শূদ্রতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজ বিবর্তনের চিত্র দেখিয়েছেন।
ভাষারীতি: স্বামীজির ‘বর্তমান ভারত’ সাধুরীতিতে রচিত, আবার ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’, ‘পরিব্রাজক’ ও ‘ভাববার কথা’ (কিছুটা) এবং ‘পত্রাবলী’ চলিতরীতিতে রচিত। সাধুগদ্যে ‘বর্তমান ভারত’ রচিত হলেও স্বামীজি মুখের ভাষা বা চলিত কথ্যরীতিকে আদর্শ গদ্য বলে স্বীকার করেন এবং সে সম্পর্কে জোরালো মন্তব্য রাখেন। তাঁর মতে, সংস্কৃত ভাষা বাংলার প্রধান আশ্রয় হলেও সংস্কৃতের অনুকরণ বাংলায় কাম্য নয়। মানুষের মুখের ভাষা, চলতি কথাই রচনাকে জীবন্ত করে তোলে। তাঁর প্রাঞ্জল, গতিময় ভাষা ব্যবহার তাঁর ব্যক্তিস্বভাবেরই প্রতিরূপ হয়ে সাহিত্যে প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা ভাষাকে নতুন আদর্শে গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় স্বামীজি গদ্যে এনেছেন সাবলীলতা, ঋজুতা, ওজস্বিতা। বাংলা গদ্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগর, বঙ্কিমচন্দ্রের পাশাপাশি স্বামীজির অবদানও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর