বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।
বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা
বিজ্ঞান ও মানবসভ্যতা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
সৃষ্টির প্রথম লগ্নে মানুষ যখন চোখ খুলে দেখল, তখন চারদিকে প্রকৃতির ভয়াল রূপ তাদেরকে করে তুলল ভয়াতুর। তখন মানুষের শরীরে ছিল না কোন আভরণ, কুটিল ভয়ংকরী প্রকৃতির বুকে তারা অসহায়। হাতের কাছে ছিল না খাদ্য, নিরান অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নিজের শাণিত বুদ্ধির দ্বারা নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবনের চেষ্টা শুরু করল।
মানুষের জয়
জীবনকে সুখময় ও নিরাপদ করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে স্মরণাতীত কাল থেকে। সেই প্রচেষ্টা অক্লান্ত, অপ্রতিহত। মানুষের এই সুদীর্ঘকালের যাত্রার ইতিহাস, উদ্ধত প্রকৃতির সাথে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের কাহিনি। তখনকার জীবন ছিল সংগ্রামের, কঠোর বাস্তবের মুখোমুখি হওয়ার জীবন। সেদিন ছিল বিজ্ঞানের শৈশবের পথ চলা, তার বিরাম নেই, বাধা দেখে হয় না বিরত। প্রকৃতির সাথে এই সংগ্রামে অবশেষে মানুষেরই বিজয় বার্তা ঘোষিত হয়েছে। মানুষ কেড়ে নিয়েছে প্রকৃতির কাছ থেকে তার রহস্য ভান্ডারের চাবি, জেনে নিয়েছে তার বিপুল ব্যাপ্ত জড়-বিশ্বের বিচিত্র সব তথ্য, যা গ্রথিত
বিজ্ঞানের অভিযান
বিজ্ঞানের জন্মলগ্নে মানুষের প্রয়োজনের তাগিদ করে কার্যকারণ সূত্রে সূচিত হল নবজন্ম বিজ্ঞানের। থাকলেও পরে প্রয়োজনের সীমা অতিক্রম করে ক্রমশ সে তার পা রেখেছে অপ্রয়োজনের উদার ক্ষেত্রে, সীমাহীন কৌতূহলের জগতে। জানার আনন্দ, প্রকৃতির রহস্যাবরণ উন্মোচনের মহতী প্রেরণা ও প্রচেষ্টা মানুষকে আকর্ষণ করেছে দুরাধিগম্য অজানার দিকে। তাই বিজ্ঞানের অভিযান অক্লান্ত, বিজ্ঞানীর সাধনা অতন্দ্র, তাঁরা নিয়োজিত নিত্যনতুন উদ্ভাবনায়। বিজ্ঞান তার জয়ধ্বজা উড়িয়েছে জল-স্থল-মহাকাশে, পরিদৃশ্যমান এই বিশাল বিশ্বজগতের সর্বত্র। দূরকে করেছে নিকট, অদৃশ্যকে করেছে দৃশ্যমান। মানবসভ্যতার যে-অভ্রংলিহ সৌধ আজ সুপ্রতিষ্ঠিত, তা বিজ্ঞান সাধনার ফসল। আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞান অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পৃক্ত। মানুষ প্রতিমুহূর্তে অনুভব করছে বিজ্ঞানের স্নেহমাখা স্বর্গ। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা চাঁদকে স্পর্শ করে পা রেখেছে, মঙ্গল গ্রহে পৌঁছে গেছে মানুষের সৃষ্ট মহাকাশ যান। কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরের অজানা জগৎ এখন আর অধরা নয় বিজ্ঞানের কাছে।
বিজ্ঞান ও তার প্রয়োগ
বিজ্ঞানের আশীর্বাদ নির্ভর করে তার প্রয়োগের ওপর। মানুষকে একটি প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলছে, বিজ্ঞান কি চায়- সভ্যতার অগ্রগতি, না বিনাশ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানুষ দেখল বিজ্ঞানের ভয়ংকর রূপ, হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে মিত্রপক্ষ নিক্ষেপ করল মাত্র দুটি আণবিক বোমা, জাপানের দুটি শিল্প-সমৃদ্ধ নগরী মুহূর্তে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। কি ভয়াবহ, মারাত্মক, হিংস্র তার রূপ। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সমরনীতি ও রণনীতির অভাবনীয় পরিবর্তন হয়েছে। এখন যুদ্ধ আর বাহুবলের নয়, অস্ত্রবলের।
উপসংহার
বিজ্ঞান যখন চেষ্টা করছে মানুষের জীবনকে সুখ-স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে দিতে তখন এক শ্রেণির মানুষ লিপ্ত ধ্বংসলীলায়। নতুন নতুন ওষুধ, নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করে বিজ্ঞান যখন চেষ্টা করছে মানুষ তথা জীবকুলকে বাঁচিয়ে রাখতে তখন বিজ্ঞানের অপব্যবহারে প্রকৃতিকে করে তুলছে ক্ষিপ্ত, বিষের জ্বালায় এগিয়ে আসছে ধ্বংসের বিভীষিকা-তা কি বিজ্ঞানের অভিশাপ? বিজ্ঞান কি চায় ধ্বংস না সৃষ্টি, বিশ্বজয় না লয়?
এই প্রশ্নের উত্তর সত্যি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে যত দিন যাচ্ছে। বিজ্ঞানের সুফল নির্ভর করছে তার প্রয়োগের ওপর। বিজ্ঞান ধ্বংস করতে পারে আবার সুপ্রয়োগের দ্বারা মানবসভ্যতাকে আনন্দনিকেতনের স্বর্গীয় সুখ ও দিতে পারে। তাই বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য ধ্বংস নয়, সৃষ্টি, সুন্দর পৃথিবী, হাসি উচ্ছ্বল মানুষের মুখের ছবি ফুটিয়ে তোলার জন্য বিজ্ঞানী নিরলস সাধনায় মগ্ন।
আরও পড়ুন – ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো