বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, বিজ্ঞান আজ আমাদের নিত্যসঙ্গী। সভ্যতার আদিলগ্নে মানুষ অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারত না, কিন্তু আজ বিজ্ঞানের জয়যাত্রার যুগে প্রকৃতির রহস্য মানুষ উন্মোচন করতে পেরেছে। কেবলমাত্র সাধারণ জ্ঞানের পরিসরে আবদ্ধ না থেকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষ বিজ্ঞানের সাহায্য নিয়ে দুর্বার গতিতে অন্ধকার থেকে আলোর জগতে এসে পৌঁছেছে, আজ এই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে আমাদের জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞানচেতনার প্রসার বিশেষভাবে প্রয়োজন।
বিজ্ঞানচেতনা ও বিজ্ঞানমানসিকতা
চলমান সভ্যতায় আধুনিক জীবনের দ্বারে পৌঁছে মানবসমাজ বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের আশীর্বাদে কুসংস্কারগ্রস্ত জীবন থেকে পেয়েছে অনেকটাই মুক্তি। সুদূর অতীতে মানুষ যা অন্ধের মতো গ্রহণ করত, বিচার-বিবেচনা না করে মেনে নিতে বাধ্য হত, কিন্তু আজ একবিংশ শতাব্দীর মানুষ যুক্তি দিয়ে বিচার করতে জানে। অন্ধের মতো সবকিছুকে মেনে না নিয়ে বিচার-বিবেচনা করে গ্রহণ করার যে মানসিকতা আজ বিজ্ঞানের যুগে পরিলক্ষিত হয়, তাকেই আমরা বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে পারি। বারংবার পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্য দিয়ে প্রকৃত বিষয়কে জানার যে প্রচেষ্টা তাকেই আমরা বিজ্ঞানচেতনা বলে অভিহিত করি। অন্ধকারময় জীবন থেকে জ্ঞানের আলোকতীর্থে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞানচেতনার প্রসার অপরিহার্য।
জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞানচেতনার প্রয়োজনীয়তা
মানবজীবনে চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে বিজ্ঞান। অন্ধকুসংস্কার, অলৌকিকতার বিরুদ্ধেই বিজ্ঞানের অভিযান যুগে যুগান্তরে। আজ বিজ্ঞান বিশ্ববিজয় করেছে, সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে বিজ্ঞানের অবদানে। সভ্যতার আদিলগ্নে চর্মকি ঠুকে আগুন জ্বালানোর প্রয়াস থেকে রকেটের যুগ পর্যন্ত বিজ্ঞানের অগ্রগতির রথ ছুটে চলেছে উদ্দাম বেগে। কুসংস্কার থেকে সে অনেক পরিমাণে মুক্ত। যদিও আজকের বিশ্বায়নের যুগেও আমরা পুরোপুরি কুসংস্কারমুক্ত হতে পারিনি। শহরের শিক্ষিত মানুষ আজও অন্ধ কুসংস্কারে যেমন বিশ্বাস করে তেমনি গ্রামবাংলার কোটি কোটি নিরীহ অশিক্ষিত মানুষের জীবনে আজও কুসংস্কার একটা বিরাট অভিশাপ। তাই মানবজীবনে বিজ্ঞানচেতনার প্রসার ব্যতীত কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ধর্মান্ধতার অভিশাপ থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারবে না।
মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে সাফল্যের পথে শিক্ষাকে বাহন করে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার মানবজীবনকে যে অন্ধকারের মধ্যে নিমজ্জিত রাখে সে অন্ধকার থেকে আলোকের পথে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য চাই শিক্ষা। বিজ্ঞানের চেতনাই মানুষকে মুক্তি দেয় অন্ধবিশ্বাস থেকে। বিজ্ঞানশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজ এগিয়ে যায় প্রকৃত উত্তরণের পথে। তাই মানুষের শিক্ষায় বিজ্ঞানের শুভচেতনার প্রসার ও জাগরণ একান্ত প্রয়োজনীয়।
বিজ্ঞানচেতনার প্রসারে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
শিক্ষার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানচেতনা বেড়ে চলেছে, সমাজ-সভ্যতার পটপরিবর্তন ঘটেছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার কারণে। বিজ্ঞাননির্ভর এই সভ্যতার যুগে বিজ্ঞানচর্চার যে প্রয়াস, তাকেই আমরা বিজ্ঞানমনস্কতা বলতে পারি। বারংবার পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে প্রকৃত বিষয়কে জানার যে প্রচেষ্টা তাকেই আমরা বিজ্ঞানচেতনা বলে অভিহিত করি। অন্ধকারময় জীবন থেকে জ্ঞানের আলোকতীর্থে পৌঁছানোর জন্য বিজ্ঞানচেতনার প্রসার অপরিহার্য।
উপসংহার
চলমানতাই জীবন, থেমে যাওয়া মৃত্যু। চলমান জীবনের তথা সভ্যতার যুগে অবস্থান করে বিজ্ঞানচেতনার যথার্থ প্রসার ঘটলে সর্বজনীন ও সামগ্রিক উন্নতি হবে সমাজ-সভ্যতার। অজ্ঞতার তমসায় লিপ্ত সমাজের আকাশে ফুটবে প্রভাতের অরুণ আলো। রাত্রির গভীর বৃন্ত থেকে জেগে উঠবে ফুটন্ত সকাল। বিজ্ঞানমানসিকতা ও বিজ্ঞানচেতনার প্রসার জয়টিকা পরিয়ে দেবে সভ্যতার কপালে।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা