বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্যারীচাঁদ মিত্রের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভূমিকা: বাংলা গদ্যভাষাকে তৎসম শব্দবাহুল্য থেকে মুক্ত করে সাধারণ জনমানসের ভাষার ছোঁয়া দিতেই বাংলা সাহিত্যের প্রাঙ্গণে অবতীর্ণ হন প্যারীচাঁদ মিত্র (১৮১৪-১৮৩৩) বা টেকচাঁদ ঠাকুর, তাঁর ‘আলালের ঘরের দুলাল’ গ্রন্থটি নিয়ে। প্যারীচাঁদের গদ্যভাষা ‘আলালী গদ্য’ নামে খ্যাত। রাধানাথ শিকদারের সহযোগিতায় তিনি ‘মাসিক পত্রিকা’ (১৮৫৪) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন, যার উদ্দেশ্যই ছিল স্বল্পশিক্ষিত স্ত্রী সমাজের উপযোগী সরল ভাষায় গদ্যরচনা প্রকাশ।
রচনাসমূহ: বাংলা গদ্যসাহিত্যের বহু ধারায় প্যারীচাদের লেখনী ছিল সৃষ্টিশীল। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ হল-
তাঁর রচিত জীবন-আখ্যানমূলক ‘ডেভিড হেয়ারের জীবনচরিত’, ‘কৃষিপাঠ’, ‘যৎকিঞ্চিৎ’ উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ।
তাঁর সমাজসংস্কারমূলক রচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্বাবস্থা’।
ব্যঙ্গাত্মক নকশা জাতীয় ‘আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৮) ও ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত থাকার কি উপায়’ (১৮৫৯) প্রভৃতি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ রচনা।
এ ছাড়াও ‘রামারঞ্জিকা’, ‘অভেদী’, ‘আধ্যাত্মিকা’, ‘বামাতোষিণী’ ইত্যাদি কথোপকথনমূলক নীতি আখ্যানের রচয়িতাও তিনিই।
আখ্যানধর্মিতা: প্যারীচাঁদ মিত্র সমাজের রীতিনীতিকে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতে চেয়েছিলেন বলেই ছদ্মনাম (টেকচাঁদ ঠাকুর) ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর ‘আলালের ঘরের দুলাল’ গ্রন্থটি আখ্যানধর্মিতার জন্য বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস নামে পরিচিত।
ভাষার ব্যবহার: প্যারীচাঁদ মিত্র যথার্থই তৎসম শব্দের বাহুল্য থেকে বেরিয়ে এসে বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার সাহায্যে হালকা কৌতুকরসের কথ্যরীতিকে সাহিত্যিক গদ্যের মর্যাদা প্রদান করেন।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর