বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

সূচিপত্র

বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ
বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ

বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ (Marks 2)

১. বাংলাদেশে কোন্ সাময়িকপত্র প্রকাশের মাধ্যমে সাময়িকপত্রের সূচনা হয়েছিল? পত্রিকাটি কোথা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে ‘দিগ্দর্শন’ মাসিক পত্রিকাটি প্রকাশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাময়িকপত্রের সূচনা হয়েছিল।

• শ্রীরামপুর মিশন থেকে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল।

২. ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব কী? কাদের সম্পাদনায় এই পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়?

উত্তর: ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব ছিল-পত্রিকাটি বাংলা ভাষায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাঙালিদের প্রথম উদ্যোগ।

হরচন্দ্র রায় এবং গঙ্গাকিশোর সম্পাদনায় ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে প্রথম ‘বেঙ্গল গেজেট’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়।

৩. ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? এটি কী ধরনের পত্রিকা ছিল?

উত্তর: ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলে জে সি মার্শম্যান।

১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ২৩ মে প্রথম প্রকাশিত এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ছিল খ্রিস্টধর্মের মহিমা প্রচারমূলক পত্রিকা।

৪. ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ পত্রিকাটি কে প্রকাশ করেন? কবে এই পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়?

উত্তর: রামমোহন রায় ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ পত্রিকাটি প্রকাশ করেন।

• পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে।

৫. ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকার বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উত্তর: ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

• ‘সমাচার চন্দ্রিকা’ পত্রিকাটির বৈশিষ্ট্য ছিল-এটি রক্ষণশীল হিন্দুদের মুখপত্র। রামমোহন রায়ের সতীদাহ প্রথা রদ করার আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করা হয় এই পত্রিকার মাধ্যমে।

৬. ভারতীয় ভাষায় প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র কোন্টি? এটি কে সম্পাদনা করেছিলেন?

উত্তর: ভারতীয় ভাষায় প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র হল ‘সংবাদ প্রভাকর’।

পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত।

৭. উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বিজ্ঞান বিষয়ক দুটি পত্রিকা কী? পত্রিকা দুটির প্রকাশকাল উল্লেখ করো।

উত্তর: উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বিজ্ঞান বিষয়ক দুটি উল্লেখযোগ্য পত্রিকা হল ‘জ্ঞানোদয়’ এবং ‘বিজ্ঞান সেবধি’।

• ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে রামচন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘জ্ঞানোদয়’ পত্রিকা, সেখানে পুরাবৃত্ত, জীবনচরিতের পাশাপাশি প্রাণীবৃত্তান্ত এবং বিজ্ঞান বিষয়ে নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হত। অন্যদিকে, ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে শুধু বিজ্ঞানচর্চার জন্য প্রকাশিত হয় ‘বিজ্ঞান সেবধি’।

৮. ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-টি প্রথম প্রকাশিত হয় কবে? কার সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: ১৮৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’-টি প্রথম প্রকাশিত হয়।

• অক্ষয় কুমার দত্তের সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল।

৯. বাংলা ভাষার প্রথম সচিত্র মাসিক পত্রিকা কী? পত্রিকাটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল?

উত্তর: বাংলা ভাষার প্রথম সচিত্র মাসিক পত্রিকাটি হল ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’।

রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সম্পাদনায় পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে।

১০. ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? কোন্ কোন্ সামাজিক বিষয়ে পত্রিকাটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল?

উত্তর: ‘সোমপ্রকাশ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ। © কৃষকদের সচেতন করা, নীলকরদের অত্যাচারের প্রতিবাদ, বিধবা- বিবাহকে সমর্থন, স্ত্রীশিক্ষা ইত্যাদি সামাজিক বিষয়ে এই পত্রিকা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল।

১১. ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়? প্রথম প্রকাশের সময়ে পত্রিকাটির সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে।

• প্রথম প্রকাশের সময়ে পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

১২. ‘ভারতী’ পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়? এই পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে মূল অবদান কার ছিল?

উত্তর: ‘ভারতী’ পত্রিকাটি প্রথম ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।

• এই পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে মূল অবদান ছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের।

১৩. ‘যুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’ কোন্ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়? এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’ ‘সাধনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

• ‘সাধনা’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

১৪. ‘প্রবাসী’ কী ধরনের পত্রিকা ছিল? এই পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: ‘প্রবাসী’ ছিল মাসিক পত্রিকা; যেখানে রাজনীতি, সমাজনীতি, সংগীত, চিত্রকলা, ভাস্কর্য ইত্যাদি বিষয়ে নানা প্রবন্ধ প্রকাশিত হত।

‘প্রবাসী’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়।

১৫. ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাটি প্রথম কার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল? পরবর্তীকালে কে এই পত্রিকাটি সম্পাদনা করেন?

উত্তর: ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাটি প্রথমে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছিল।

• পরবর্তীকালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মৃত্যুর পর এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন জলধর সেন।

১৬. ‘যমুনা’ পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকাটি কেন খ্যাতি লাভ করেছিল?

উত্তর: ‘যমুনা’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ পাল।

• শরৎচন্দ্রের বহু বিখ্যাত রচনা যেমন, ‘রামের সুমতি’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘নিষ্কৃতি’, ‘পরিণীতা’, ‘নারীর মূল্য’ ইত্যাদি প্রকাশের কারণে এই পত্রিকা খ্যাতি লাভ করেছিল।

১৭. বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোন্ পত্রিকার অবদান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ? পত্রিকাটি কবে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার অবদান সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।

১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রমথ চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘সবুজপত্র’ পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

১৮. সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত পত্রিকাটির কী নাম ছিল? এই পত্রিকার প্রধান উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: সজনীকান্ত দাস সম্পাদিত পত্রিকাটির নাম ছিল ‘শনিবারের চিঠি’।

‘শনিবারের চিঠি’ মূলত দুটি উদ্দেশ্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিল,- প্রথমত, ‘কল্লোল’ পত্রিকা এবং তার লেখকগোষ্ঠীর বিরোধিতা; দ্বিতীয়ত, রবীন্দ্র-বিরোধিতা।

১১. ‘কালিকলম’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কারা? এই পত্রিকার সঙ্গে অন্য কোন্ পত্রিকার ভাবনাচিন্তার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়?

উত্তর: ‘কালিকলম’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়।

আদর্শের দিক থেকে ‘কল্লোল’ পত্রিকার সঙ্গে ‘কালিকলম’ পত্রিকার সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

২০. ‘প্রগতি’ পত্রিকা কবে প্রথম প্রকাশিত হয়? এই পত্রিকার সম্পাদক কে ছিলেন?

উত্তর: ‘প্রগতি’ পত্রিকা ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়।

এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন অজিত দত্ত।

২১. বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত পত্রিকার নাম কী ছিল? পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত পত্রিকার নাম ছিল ‘কবিতা’।

পত্রিকাটি ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়।

২২. ‘দেশ’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন? পত্রিকাটি প্রথম কবে প্রকাশিত হয়?

উত্তর: ‘দেশ’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার।

১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ‘দেশ’ পত্রিকা প্রথম প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ (Marks 3)

১. দিগ্দর্শন থেকে সমাচার চন্দ্রিকা পর্যন্ত বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাস সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: বাংলা ভাষায় মুদ্রিত ও প্রকাশিত প্রথম পত্রিকা ‘দিগ্দর্শন’ (এপ্রিল, ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ)। শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত এই পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ মে হরচন্দ্র রায় ও গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘বাঙ্গাল গেজেটি’। বাঙালির উদ্যোগে প্রকাশিত প্রথম সংবাদপত্র এটি। ওই একই বছরে ২৩ মে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘সমাচার দর্পণ’ পত্রিকাটি, যেটি মূলত মিশনারিদের উদ্যোগে খ্রিস্টধর্মের মহিমা প্রচারমূলক পত্রিকা। রামমোহন রায় ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশ করেন ‘ব্রাহ্মণ সেবধি’ নামে একটি মাসিক পত্রিকা। ওই একই বছরের ডিসেম্বর মাসে তিনি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ করেন, যার নাম ‘সম্বাদ কৌমুদী’। এটি ছিল ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র। ধর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান, দেশ-বিদেশের খবর ইত্যাদি নানা বিষয় এখানে প্রকাশিত হত। এই পত্রিকা প্রকাশে রামমোহনের সঙ্গী ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মতপার্থক্যের কারণে ১৮২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে নিজে প্রকাশ করেন ‘সমাচার চন্দ্রিকা’, যেটি রক্ষণশীল হিন্দুদের মুখপত্র ছিল। এই পত্রিকায় রামমোহনের সতীদাহ নিবারণের প্রচেষ্টার বিরোধিতা করা হয়।

২. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর : ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে কবি ঈশ্বর গুপ্তের সম্পাদনায় ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে-র পরে সাময়িকভাবে এই পত্রিকা প্রকাশ বন্ধ হয়। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে পত্রিকাটির পুনঃপ্রকাশ ঘটে। পত্রিকাটি প্রথমে সাপ্তাহিক, পরে সপ্তাহে তিনবার এবং ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দে দৈনিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়। ভারতীয় ভাষায় প্রথম দৈনিক পত্রিকা এটি। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেখকদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে ‘সংবাদ প্রভাকর’-এর পাতায়। ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, রামনিধি গুপ্তর মতো কবিদের জীবনী এবং সৃষ্টিকর্মের সন্ধান করেছে এই পত্রিকা। পাশাপাশি নারীশিক্ষা ও বিধবাবিবাহের পক্ষে সওয়াল করেছে এই পত্রিকা। বাংলার নবজাগরণ ও নীল বিদ্রোহের প্রতি মানুষকে সহানুভূতিশীল করে তোলার ক্ষেত্রে এই সংবাদপত্র বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। এই পত্রিকার উদ্যোগে ‘কালেজীয় কবিতা যুদ্ধ’ এক উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় আয়োজন হয়ে আছে।

৩. ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়।

• ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত ‘জ্ঞানান্বেষণ’ ছিল ইয়ং বেঙ্গল সম্প্রদায়ের মুখপত্র এবং সাপ্তাহিক পত্রিকা। প্রথম যুগে লেখক তালিকায় ছিলেন প্যারীচাঁদ মিত্র, গোবিন্দচন্দ্র বসাক, রামগোপাল ঘোষ, কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রমুখ। দক্ষিণারঞ্জনের পরে এই পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন রসিককৃয় মল্লিক এবং মাধবচন্দ্র মল্লিক। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের সূচনা থেকে এই পত্রিকার ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় প্রকাশিত লেখাগুলি ছিল প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার বাহক। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে ‘জ্ঞানান্বেষণ’ পত্রিকাটির প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

৪. বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তত্ত্বাবধানে এবং অক্ষয় কুমার দত্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকা। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ঠাকুরবাড়ির বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা বিভিন্ন সময়ে এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তত্ত্ববোধিনী সভার মুখপত্র হিসেবে পৌত্তলিকতা, অবতার তত্ত্ব ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্রায় ধর্মের মূল আদর্শ তুলে ধরতেই এই পত্রিকার পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু অক্ষয় কুমারের সুযোগ্য পরিচালনায় সাহিত্য, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজনীতি, রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধচর্চার ক্ষেত্র হয়ে ওঠে এই পত্রিকা। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সঙ্গে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও মননের সংযোগ তৈরি করা এই পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ছিল। পত্রিকার লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, অক্ষয় কুমার দত্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ণ বসু প্রমুখ।

৫. ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক কে ছিলেন? এই পত্রিকাটি সম্পর্কে যা জান লেখো।

উত্তর: ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন রাজেন্দ্রলাল মিত্র।

• ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে ঐতিহাসিক রাজেন্দ্রলাল মিত্রের সম্পাদনায় যে ‘বিবিধার্থ সংগ্রহ’ পত্রিকা প্রকাশিত হয় তার আদর্শ ছিল বিলিতি পেনি ম্যাগাজিন। এটি ছিল বাংলা ভাষায় প্রথম সচিত্র মাসিক পত্রিকা। এই পত্রিকাতেই মধুসূদন দত্তের ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্যের প্রথম সর্গ প্রকাশিত হয়। মনীষীদের জীবনকথা, তীর্থক্ষেত্র পরিচিতি থেকে ব্যাবসাবাণিজ্য, সাহিত্য সমালোচনা ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ের চর্চা হত এই পত্রিকায়। লেখক তালিকায় ছিলেন ক্ষেত্রমোহন ভট্টাচার্য, কালীপ্রসন্ন সিংহ, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শ্রীপতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘জীবনস্মৃতি’-তে এই পত্রিকার স্মৃতি লিখে রেখে গিয়েছেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্রের পরে কালীপ্রসন্ন সিংহ এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

৬. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘বঙ্গদর্শন’-এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের ১২ এপ্রিল বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা। অর্থনীতি- রাজনীতি-সমাজনীতি-বিজ্ঞান-দর্শন ইত্যাদি বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধের আধার ছিল ‘বঙ্গদর্শন’। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “বঙ্কিমের ‘বঙ্গদর্শন’ আসিয়া বাঙালির হৃদয় একেবারে লুঠ করিয়া লইল।” চন্দ্রনাথ বসু, দীনবন্ধু মিত্র, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজকৃয় মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রশেখর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ ছিলেন লেখকগোষ্ঠীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। বঙ্কিমচন্দ্রের পরে তাঁর অগ্রজ সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শ্রীশচন্দ্র মজুমদার ‘বঙ্গদর্শন’ সম্পাদনা করেন। ‘বঙ্গদর্শন’-এর পাতাতেই বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বিষবৃক্ষ’, ‘ইন্দিরা’, ‘চন্দ্রশেখর’, ‘রাধারাণী’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ইত্যাদি উপন্যাস এবং ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ ইত্যাদি রচনা প্রকাশ পেয়েছে। ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাস ও ‘বন্দেমাতরম্’ স্তোত্র এখানে প্রকাশিত হয়েছিল।

৭. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা ‘ভারতী’-র অবদান আলোচনা করো।

উত্তর: ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে ‘ভারতী’ পত্রিকা প্রকাশের মূল উদ্দেশ্যই ছিল ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সৃজনশীলতার আত্মপ্রকাশ ঘটানো। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। যদিও পত্রিকা প্রকাশে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তীকালে স্বর্ণকুমারী দেবী, হিরন্ময়ী দেবী, সরলা দেবী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ এই পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ছোটো গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, রম্যরচনা, গ্রন্থ সমালোচনা ইত্যাদিতে সমৃদ্ধ এই পত্রিকা বাংলা গদ্যরীতির বিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। কিশোর রবীন্দ্রনাথের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’র তির্যক সমালোচনা, যাকে রবীন্দ্রনাথ পরবর্তীকালে বলেছেন ‘অল্পবয়সের স্পর্ধা’ এবং ‘নিজেকে অমর করিয়া তুলিবার সর্বাপেক্ষা সুলভ উপায় অন্বেষণ’ তা ‘ভারতী’ পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ‘কবিকাহিনী’র প্রকাশস্থানও ছিল এই পত্রিকা।

৮. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ঠাকুরবাড়ির পত্রিকা ‘সাধনা’-র ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: ‘সাধনা’ পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে। এই পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন সুধীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকার প্রধান স্তম্ভ ছিলেন। চতুর্থ বছরে রবীন্দ্রনাথ পত্রিকাটি সম্পাদনার দায়িত্ব নেন, যদিও তার এক বছর পরেই ‘সাধনা’র প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়। সাহিত্য, সংগীত, শিল্প, দর্শন, রাজনীতিকেন্দ্রিক সমস্ত ধরনের রচনাই ‘সাধনা’-তে মুদ্রিত হত। মূলত ঠাকুরপরিবারের সদস্যরাই ছিলেন এই পত্রিকার লেখক। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন-বলেন্দ্রনাথ, সুধীন্দ্রনাথ, ঋতেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘কথা ও কাহিনী’র কবিতাসমূহ, ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’, ‘সম্পত্তি সমর্পণ’, ‘কঙ্কাল’, ‘একটি আষাঢ়ে গল্প’, ‘জীবিত ও মৃত’, ‘আপদ’, ক্ষুধিত পাষাণ’ ইত্যাদি গল্পগুচ্ছের অসংখ্য গল্পের প্রথম প্রকাশ হয়েছিল ‘সাধনা’-য়। ‘য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরি’-ও এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

৯. ‘প্রবাসী’ পত্রিকাটি কবে প্রথম প্রকাশিত হয়? বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে এই পত্রিকার গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ‘প্রবাসী’ পত্রিকাটি ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত হয়।

রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসি’ পত্রিকাটি ছিল বিংশ শতাব্দীর সূচনাপর্বে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাময়িক পত্রিকা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেখকরা এখানে নিয়মিত লিখতেন। রাজনীতি, সমাজনীতি, সংগীত, দর্শন, চিত্রকলা ইত্যাদি বিষয়ে মননশীল প্রবন্ধ এখানে প্রকাশিত হত। উচ্চমানের দেশি-বিদেশি চিত্রকলা এবং ভাস্কর্যের ছবির মুদ্রণ ছিল এই পত্রিকার আর-একটি বিশেষত্ব। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু প্রমুখের শিল্পীসত্তার বিকাশ ঘটেছিল ‘প্রবাসী’ পত্রিকাতেই। রবীন্দ্রনাথের বহু স্মরণীয় রচনা প্রথম ‘প্রবাসী’-তে প্রকাশিত হয়। তার মধ্যে রয়েছে ‘গোরা’, ‘চোখের বালি’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘শেষের কবিতা’ প্রভৃতি উপন্যাস; ‘অচলায়তন’, ‘রক্তকরবী’, ‘মুক্তধারা’ প্রভৃতি নাটক; ‘জীবনস্মৃতি’, ‘পশ্চিম যাত্রীর ডায়েরি’ ইত্যাদি।

১০. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: বিংশ শতকে বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সম্পাদনায় সচিত্র মাসিক পত্রিকা হিসেবে ‘ভারতবর্ষ’ প্রকাশিত হয়। দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পরে জলধর সেন এই পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব নেন। রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জসিমউদ্দিন এই পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধায়, ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের প্রবন্ধ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’, ‘দেনাপাওনা’, ‘দত্তা’ ইত্যাদি উপন্যাস ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকাতেই প্রথম প্রকাশিত হয়।

১১. ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদকের ছদ্মনাম কী ছিল? বাংলা সাময়িক পত্রের ইতিহাসে সবুজপত্রের গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর: ‘সবুজপত্র’ পত্রিকার সম্পাদক প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম ছিল ‘বীরবল’।

• বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে সবুজপত্রের গুরুত্ব ছিল সাধু রীতি পরিত্যাগ করে চলিত ভাষার ওপরে গুরুত্ব প্রদান। এই পত্রিকাকে কেন্দ্র করে একটা নতুন সাহিত্যিক গোষ্ঠী তৈরি হয়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অতুলচন্দ্র গুপ্ত, কিরণশঙ্কর রায়, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। রবীন্দ্রনাথ এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাঁর ‘সবুজের অভিযান’ কবিতা, ‘অপরিচিতা’, ‘হৈমন্তী’ ইত্যাদি গল্প, ‘চার অধ্যায়’ উপন্যাস ইত্যাদি এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

বাংলা সাময়িক পত্রের উদ্ভব ও বিকাশ (Marks 5)

১. বাংলা সাহিত্যে ‘কল্লোল’ পত্রিকার অবদান আলোচনা করো।

উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে যখন যুবমনে তীব্র হচ্ছে হতাশা এবং গ্লানিবোধ, সেই সময়ে ‘কল্লোল’ পত্রিকার আত্মপ্রকাশ। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকায় সমকালীন যুবমনের যে বিদ্রোহ ও ক্ষোভ, তার বিচ্ছুরণ ঘটেছিল। সেই যুগযন্ত্রণার প্রকাশ ঘটানোর জন্য তারা প্রকাশ্যে রবীন্দ্র ভাবাদর্শ থেকে সরে আসার ঘোষণা করেছিলেন। প্রেমেন্দ্র মিত্র, মোহিতলাল মজুমদার, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, নজরুল ইসলাম, যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, মনীশ ঘটক প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক ‘কল্লোল’ পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন।

২. বাংলা সাহিত্যে ‘পরিচয়’ পত্রিকার অবদান বিষয়ে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: সুধীন্দ্রনাথ দত্তের সম্পাদনায় ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ‘পরিচয়’ পত্রিকা প্রকাশিত হয়। ‘পরিচয়’ পত্রিকার লক্ষ্য ছিল সাম্যবাদী চিন্তাচেতনার বিস্তার ঘটানো। সেই উদ্দেশ্যে প্রগতিশীল সাহিত্যচর্চা এই পত্রিকার বিষয় হয়। দুর্ভিক্ষ, দেশভাগ এবং স্বাধীনতার সময়ের উত্তাল আবহাওয়া ‘পরিচয়’-এর মননচর্চাকে প্রভাবিত করেছিল। নীরেন্দ্রনাথ রায়, বুদ্ধদেব বসু, ধূর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সমর সেন প্রমুখ এই পত্রিকায় লিখেছেন। সুধীন্দ্রনাথের পরবর্তীকালে গোপাল হালদার, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ এই পত্রিকায় সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

৩. বাংলা সাময়িকপত্রের ইতিহাসে ‘কালিকলম’, ‘প্রগতি’ এবং ‘কবিতা’ পত্রিকার অবদান সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘কালিকলম’ পত্রিকা। সমকালীন বিখ্যাত পত্রিকা ‘কল্লোল’-এর সঙ্গে এর আদর্শগত মিল ছিল। সম্পাদকদ্বয় ছাড়াও মোহিতলাল মজুমদার, নজরুল ইসলাম, জগদীশ গুপ্ত, প্রমথনাথ বিশী ছিলেন লেখক তালিকায়।

‘প্রগতি’ পত্রিকার (১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ) সম্পাদক ছিলেন বুদ্ধদেব বসু, অজিত দত্ত। জীবনানন্দ দাশ, বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত, মণীশ ঘটক, পরিমল রায় প্রমুখের লেখা নিয়মিত এই পত্রিকায় প্রকাশিত হত। মাত্র দু-বছর চলার পরে আর্থিক অনটনের কারণে ‘প্রগতি’র প্রকাশ বন্ধ হয়ে যায়।

‘প্রগতি’র ব্যর্থতার পরে ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে বুদ্ধদেব বসু ও প্রেমেন্দ্র মিত্রের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘কবিতা’ পত্রিকা। রবীন্দ্রনাথের লেখাকে এই পর্যায়ে শিরোধার্য করা হয়। জীবনানন্দ, সমর সেন, বিষ্ণু দে, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত প্রমুখ ছিলেন লেখক তালিকায়।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment