বাংলা পৌরাণিক নাটক রচনার ধারায় গিরিশচন্দ্র ঘোষের অবদান আলোচনা করো
রচনাসমূহ: ধর্মপ্রবণ বাংলাদেশে পৌরাণিক নাটকের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে পৌরাণিক নাটক রচনায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি তাঁর পৌরাণিক নাটকে রামায়ণ ও মহাভারত থেকে বহু কাহিনি গ্রহণ করেছিলেন। জীবনে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দের সান্নিধ্য তাঁর মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রভাবিত করেছিল। তাই তাঁর পৌরাণিক নাটকগুলির ক্ষেত্রে দুটি স্তর পরিলক্ষিত হয়। প্রথম স্তরের নাটকগুলি হল- ‘রাবণবধ’, ‘সীতাহরণ’, ‘সীতার বনবাস’, ‘লক্ষ্মণবর্জন’, ‘দক্ষযজ্ঞ’, ‘পান্ডবের অজ্ঞাতবাস’, এবং ‘অভিমন্যু বধ’। পরবর্তী পর্যায়ে রামকৃষ্ণ- বিবেকানন্দের সান্নিধ্যপ্রাপ্তির প্রভাবজনিত রচনাগুলি হল- ‘পান্ডব গৌরব’, ‘জনা’ ইত্যাদি।
নাটক বিশ্লেষণ: বীর ও করুণরসের একত্র সমাবেশে মহাভারতের মূলকাহিনি অনুসরণে গিরিশচন্দ্র রচনা করেছেন ‘অভিমন্যু বধ’ (১৮৮১)। এ ছাড়া গিরিশচন্দ্রের অন্যতম মঞ্চসফল নাটক ‘পাণ্ডব গৌরব’ (১৮৮৩) রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দের ধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ এই নাটকে প্রভাব বিস্তার করে। মহাভারতের কাহিনি অবলম্বনে রচিত পৌরাণিক নাটক ‘জনা’-য় একাধারে মাতৃহৃদয় এবং ক্ষত্রিয় রমণীর বীর হৃদয়ের তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে। ভক্তিরসে প্রবাহিত কাহিনি অংশে জনার ট্র্যাজিক পরিণতি দর্শককে আপ্লুত করে।
অবদান: পৌরাণিক নাটকে গিরিশচন্দ্রের মৌলিকতা ফুটে উঠেছে তাঁর ভাষা ও ছন্দের অভিনব সৃজনে। পৌরাণিক নাটক রচনার প্রয়াসে তিনি পূর্বসূরি মনোমোহন বসু থেকে রাজকৃয় রায়ের ধারাকে অনুসরণ করলেও নিজস্বতার গুণে তাঁর পৌরাণিক নাটক অতি সহজেই সমাদৃত হয়েছিল।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা