বাংলা গদ্যে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

বাংলা গদ্যে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

বাংলা গদ্যে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো
বাংলা গদ্যে অক্ষয়কুমার দত্তের অবদান সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভূমিকা: উনিশ শতকের নবজাগরণের ফলে বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশের ধারায় অন্যান্য খ্যাতনামা গদ্য লেখকদের পাশাপাশি যে নামটি সমমাত্রায় স্মরণীয়, তিনি হলেন অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬)। গদ্যসাহিত্যে বিদ্যাসাগরের সমসাময়িক এক উজ্জ্বল নক্ষত্রস্বরূপ ছিলেন তিনি। গ্রিক, ল্যাটিন, হিরু, জার্মান প্রভৃতি ভাষা অধ্যয়নের পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, গণিতশাস্ত্র, বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান বিষয়েও গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিনি দীর্ঘ বারো বছর ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার সম্পাদক পদে আসীন ছিলেন। অক্ষয়কুমার এই পত্রিকায় নীলকর সাহেবদের প্রজাপীড়নের বিরুধে প্রতিবাদস্বরূপ ‘পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের দুরবস্থা বর্ণন’, ‘প্রাচীন হিন্দুদিগের সমুদ্রযাত্রা ও বাণিজ্য বিস্তার’ প্রভৃতি বিবিধ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৮৪২ সালে প্রসন্নকুমার ঘোষের সাহচর্যে ‘বিদ্যাদর্শন’ শীর্ষক একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশেও কৃতকার্য হন তিনি। বলা বাহুল্য, এই পত্রিকায় তিনিই প্রথম বহুবিবাহের কুফলের বিরোধিতা করে যুক্তিসংগত মন্তব্য পেশ করেন।

রচনাপঞ্জি: সাহিত্যে অক্ষয়কুমারের প্রথম আবির্ভাব ‘অনঙ্গমোহন’ (১৮৩৪) কাব্যরচনার মধ্য দিয়ে। এরপর একুশ বছর বয়সে রচিত ‘ভূগোল’ (১৮৪১) গদ্যগ্রন্থ দিয়ে তাঁর পথ চলা শুরু। জর্জ কুম্ব রচিত ‘Essay on the Constitution of Man and Its Relation to External Object’ গ্রন্থ অনুসরণে অক্ষয়কুমার লেখেন ‘বাহ্য বস্তুর সহিত মানব প্রকৃতির সম্বন্ধবিচার’ (প্রথম খন্ড ১৮৫১, দ্বিতীয় খন্ড ১৮৫৩), তিন খণ্ডে রচিত ‘চারুপাঠ’ (প্রথম খণ্ড ১৮৫৩, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৫৪ ও তৃতীয় খন্ড ১৮৫৯), ‘বাষ্পীয় রথারোহীদিগের প্রতি উপদেশ’ (১৮৫৫), ‘ধর্মোন্নতি সংসাধক প্রস্তাব’ (১৮৫৫), জর্জ কুম্ব প্রণীত ‘Moral Philosophy’ অবলম্বনে রচিত ‘ধর্মনীতি’ (১৮৫৬), ‘পদার্থবিদ্যা’ (১৮৫৬) এবং হোরেস হেম্যান উইলসনের *Essays and Lectures on the Religion of the Hindus’ অনুসরণে রচনা করেন ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ (প্রথম খন্ড ১৮৭০, দ্বিতীয় খন্ড ১৮৮৩) প্রভৃতি গ্রন্থসমূহ।

ভাষাশৈলী: অক্ষয়কুমারের গদ্য ছিল বাহুল্যবর্জিত অর্থাৎ তাঁর গদ্য চিন্তা ও বুদ্ধির গদ্য। সেখানে ভাবালুতার কোনো অবকাশ ছিল না। তাঁর গদ্যভাষা যুক্তির আধারে শৃঙ্খলাবদ্ধ হলেও সহজবোধ্য। বিজ্ঞানসম্বন্ধীয় প্রবন্ধরচনায় ব্যবহৃত পরিভাষাকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন। সমাজের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার ইত্যাদি দূর করাই ছিল তাঁর সাহিত্যসৃষ্টির লক্ষ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিনি সংস্কৃত-ঘেঁষা সমাসবদ্ধ শব্দ ব্যবহার করলেও তাঁর রচনারীতিকে লঘু ভাষায় প্রকাশ করেছেন।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment