বাংলা গদ্যের বিকাশে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো
অথবা, ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী’ ঈশ্বরচন্দ্রের অবদান সম্বন্ধে আলোচনা করো
ভূমিকা: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০-১৮৯১) ‘বাংলা গদ্যের প্রথম যথার্থ শিল্পী’ রূপে পরিচিত। অনুবাদ, মৌলিক রচনা, শিশুপাঠ্য গ্রন্থ-সহ বাংলা গদ্যের সর্বক্ষেত্রেই তিনি স্মরণীয়।
গ্রন্থসম্ভার: বিদ্যাসাগরের অনুবাদকৃত রচনাগুলি হল- ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ (হিন্দি ‘বৈতাল পচ্চিসী’, ১৮৪৭), ‘শকুন্তলা’ (‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’, ১৮৫৪), সীতার বনবাস’ (ভবভূতির ‘উত্তরচরিত’ ও বাল্মীকির রামায়ণের উত্তরকাণ্ড, ১৮৬০), ‘ভ্রান্তিবিলাস’ (শেকসপিয়রের ‘Comedy of Errors’)।
এ ছাড়াও তিনি কতকগুলি পাঠ্যপুস্তক অনুবাদ করেছিলেন। এগুলির মধ্যে ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১৮৪৮), ‘জীবনচরিত’ (১৮৪৯), ‘বোধোদয়’, (১৮৫১) ‘কথামালা’ (১৮৫৬) উল্লেখযোগ্য।
মৌলিক রচনা: বিদ্যাসাগরের মৌলিক রচনার মধ্যে ‘সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব’ গ্রন্থটি বাঙালির লেখা সংস্কৃত সাহিত্যের প্রথম ইতিহাস। রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌত্রী প্রভাবতীর অকালপ্রয়াণে বেদনাহত বিদ্যাসাগর রচনা করেন ‘প্রভাবতী সম্ভাষণ’। তিনি ছদ্মনামে কতকগুলি সরল কৌতুকও রচনা করেছিলেন। যেমন- ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য’ ছদ্মনামে রচনা করেছিলেন ‘অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩), ‘আবার অতি অল্প হইল’ (১৮৭৩) এবং ‘ব্রজবিলাস’ (১৮৮৪)। এ ছাড়া ‘কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপো সহচরস্য’ ছদ্মনামে রচিত হয় ‘রত্নপরীক্ষা’ (১৮৮৬)। তাঁর আত্মজীবনী ‘বিদ্যাসাগর চরিত’ বাংলা জীবনীসাহিত্যের সম্পদবিশেষ।
শিশুপাঠ্য গ্রন্থ: ‘আখ্যানমঞ্জুরী’ ও ‘বর্ণপরিচয়’ প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ (১৮৫৫) তাঁর রচিত শিশুপাঠ্য গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।
সমাজসংস্কারমূলক রচনা: সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের পক্ষে ও বহুবিবাহের বিপক্ষে তাঁর যুক্তিগুলি প্রকাশ করেছেন ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৫), ‘বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার’ (প্রথম-১৮৭১, দ্বিতীয়-১৮৭৩) প্রভৃতি রচনায়।
ভাষার ব্যবহার: বিদ্যাসাগর রামমোহনের যতিচিহ্নহীন সরল গদ্যকে যথাযথ যতির বিন্যাসে সার্থক রূপ দান করেন। বাংলা গদ্যের অন্তর্গত সুরবিন্যাস তথা ছন্দস্পন্দনটি তিনিই অনুভব করেন। তাঁর পরিকল্পিত সাধু গদ্যই বাঙালির লেখনীর আদর্শ রূপ হিসেবে চিহ্নিত।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর