বাংলা গদ্যসাহিত্যে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের কৃতিত্বের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও
ভূমিকা: বাংলা গদ্যসাহিত্যের ধারায় এক স্বতন্ত্র শিল্পী হিসেবে ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের (১৮২৭-১৮৯৪) আবির্ভাব। ভারতীয় সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী ভূদেব মুখোপাধ্যায় ‘এডুকেশন গেজেট ও সাপ্তাহিক বার্তাবহ’ (১৮৫৬) এবং ‘শিক্ষাদর্পণ ও সংবাদসার’ (১৮৬৪) নামে দুটি সাময়িক পত্রিকা প্রকাশ করেন। প্রবন্ধধর্মী, আখ্যানমূলক ও শিক্ষা সংক্রান্ত সকল ধরনের গদ্যরচনাতেই তিনি দক্ষ শিল্পীর ভূমিকা নিয়েছেন।
রচনাসমূহ: বাংলা গদ্যরচনায় তিনি বাঙালি পাঠক মনে চিরস্মরণীয়। তাঁর গদ্য মার্জিত রুচির। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলিকে বিষয় অনুযায়ী কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়-
শিক্ষা সংক্রান্ত রচনা: ভূদেব তাঁর শিক্ষকতা জীবনে বেশ কয়েকটি শিক্ষা বিষয়ক গ্রন্থরচনায় প্রবৃত্ত হয়েছিলেন। সেগুলি হল- ‘শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাব’ (১৮৫৬), ‘প্রাকৃতিক বিজ্ঞান’ (প্রথম খণ্ড ১৮৫৮, দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৫৯), ‘পুরাবৃত্তসার’ (১৮৫৮), ‘ইংলন্ডের ইতিহাস’ (১৮৬২), ‘ক্ষেত্রতত্ত্ব’ (১৮৬২), ‘রোমের ইতিহাস’ (১৮৬৩), ‘বাঙ্গালার ইতিহাস’ (১৯০৪)। এই শ্রেণির রচনায় প্রাবন্ধিক সর্বত্র ভাষাপ্রয়োগে দক্ষতা দেখাতে না পারলেও ছাত্রছাত্রীদের পাঠের উপযোগী করে গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, পুরাকাহিনি ইত্যাদি যথাযথভাবে বিবৃত করেছেন।
আখ্যানমূলক রচনা: লেখক জে এইচ কাউন্টার-এর ‘Romance of History’ গ্রন্থের অনুসরণে ভূদেব লেখেন ‘ঐতিহাসিক উপন্যাস’ (১৮৫৭)। এটি তাঁর আখ্যানধর্মী রচনা। এই গ্রন্থের আখ্যান রচিত হয়েছে ‘সফল স্বপ্ন’ ও ‘অঙ্গুরীয় বিনিময়’ নামে দুটি কাহিনির সংযোগে। বলা বাহুল্য, আলোচ্য গ্রন্থে ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনার মিশেল ঘটার ফলে এটি ইতিহাসাশ্রয়ী রোমান্সের আকার নেয়।
রচনার ভাষারীতি: ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের রচনার প্রধান গুণ মৌলিকতা৷ তাঁর গদ্যরীতি মননশীল। তাঁর রচনার বক্তব্য পরিমিত, ভাষা অলংকারবর্জিত এবং বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গি সাবলীল। তাঁর লেখায় আবেগশূন্য যুক্তি এবং নির্ভুল তথ্যের যুগলবন্দি লক্ষ করা যায়। প্রাবন্ধিকের গদ্যরচনার এই বৈশিষ্ট্যগুলি বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশে এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে, যা বর্তমানেও আলোচনা ও চর্চার প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখেছে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর