আধুনিক বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো
আধুনিক বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান
অবদান
বাংলার কাব্যজগতে আখ্যানকাব্য ও মহাকাব্য রচনাধারার বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত (১৮২৪-১৯৭৩)। পাশ্চাত্য সাহিত্যের ব্ল্যাংক ভার্স ছন্দের অনুরূপ বাংলায় অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তনই মাইকেল মধুসূদন দত্তের বিশিষ্টতাকে সুচিহ্নিত করে। মধুসূদনের রচিত কাব্যগুলি হল-
‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০)
এটি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রচিত কবির প্রথম কাব্য। যদিও কল্পনার বিস্তার, ভাষার ওজস্বিতা ও মহাকাব্যোচিত ব্যাপকতা থাকলেও কাব্যটিকে পূর্ণকাব্য বলা যায় না।
‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬১)
এই কাব্যে মধুসূদন ‘বৈয়ব পদাবলি’-র রাধার রূপান্তর সাধন করেছেন ও মানবিক আবেগের যে অনবদ্য লিপিচিত্র – এঁকেছেন তা অভিনব।
‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (১৮৬১)
নয়টি সর্গে বিন্যস্ত মোট তিন দিন ও দু-রাত্রির • ঘটনা সংবলিত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ (প্রথম খণ্ড-১৮৬১) মধুকবির সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি। পয়ার, ত্রিপদী ছন্দের আড়াল থেকে বাইরে এসে অমিত্রাক্ষর ছন্দের মাধ্যমে ভাবের প্রবহমানতাকে এই কাব্যে প্রকাশ করেছেন কবি মধুসূদন। ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬২): মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দের যথার্থ রূপটি প্রকাশিত হয় ‘বীরাঙ্গনা কাব্য’-এ। রোমান কবি ওভিদের পত্রকাব্য ‘Heroides’-এর আদর্শে এই কাব্যেও ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনির নায়িকারা প্রেমাস্পদের উদ্দেশে চিঠি লিখেছেন। এই প্রসঙ্গে পত্রের আঙ্গিকে ভারতীয় নারীর অবদমিত স্বপ্ন, আশা-আকাঙ্ক্ষা, অভিমান রূপলাভ করেছে।
চতুৰ্দ্দশপদী কবিতাবলী’ (১৮৬৬)
গীতিকাব্যের একটি বিশেষ ধারা সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতাকে আশ্রয় করে কবি আত্মগত ভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
মধুসূদন তাঁর আপন প্রতিভাবলে বাংলা কাব্যজগৎকে ভাব, ভাষা ও ছন্দের দিক থেকে নতুন দিশা দেখিয়ে নবযুগের যথাযথ পথিকৃতের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রথাগত গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে মধুসূদনই প্রথম বাংলা ছন্দ তথা বাংলা কাব্যের মুক্তি সাধন করেন। বাংলা সাহিত্যে আধুনিক রীতির প্রবর্তক হিসেবে মধুসূদন সম্পর্কে শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন-“… বাংলা সাহিত্যে সেই আধুনিকতা-মহাদেশের আবিষ্কারকের জয়মাল্য চিরদিন তাঁহার কণ্ঠে অম্লান হইয়া থাকিবে।” (বাংলা সাহিত্যের বিকাশের ধারা)
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর