প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ রচনা – আজকের পর্বে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ রচনা আলোচনা করা হল।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ রচনা
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ছাত্রসমাজ রচনা
ভূমিকা
প্রকৃতি চলে নিজের নিয়মে, সে কারও বাধ্য নয়। খামখেয়ালী প্রকৃতি পৃথিবীর বুকে কখন কি বিপর্যয় ঘটাবে তা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়। যখন প্রকৃতির তান্ডবলীলায় পৃথিবীর বুকে নেমে আসে দুর্যোগ তখন অসহায় মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমাদের নৈতিক কর্তব্য। ছাত্র-ছাত্রী তথা ছাত্রসমাজ অফুরন্ত প্রাণৈশ্বর্যে ভরপুর। তাদের প্রধান কাজ অধ্যয়ন হলেও আপদে-বিপদে বন্ধুর মতো তাদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সেবা করা মহৎ এক গুণ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলতে বুঝায় ভূমিকম্প, বন্যা, ঝড়, দাবানল প্রভৃতি।
বিপর্যয়ের কারণ
গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টাব্দপূর্ব ৩৮৪-৩২২) বলেছিলেন, ভূ-অভ্যন্তরে জমে থাকা গ্যাস বেরিয়ে আসার জন্য শিলাস্তরে বার বার আঘাত করলে ভূমিকম্প হয়। আধুনিক ভূ-বিজ্ঞানীরা পরীক্ষার মাধ্যমে ভূমিকম্পের তিনটি যে কারণ জানতে পেরেছেন তা হল ভু-পৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরিজনিত ও শিলাচ্যুতিজনিত। পাহাড়ি অঞ্চলে যখন ধস নামে তখন ভূ-পৃষ্ঠ কম্পনজনিত ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়, আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের সময় বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হওয়ার ফলে ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি ব্যাপকতা সৃষ্টি হয় শিলাচ্যুতিজনিত ভূকম্পের ফলে।
পৃথিবীর অভ্যন্তরে রয়েছে গলিত লাভা। তার ওপর ভেসে আছে ভূ-পৃষ্ঠের শিলাস্তর। বিভিন্ন ধরনের চাপে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তূপের একটি অংশ বিপরীত দিকে নড়াচড়া করতে থাকলে শিলাস্তূপের দেওয়ালে বিপুল বেগে সংঘাত সৃষ্টি হতে থাকে ও শিলাস্তর ভেঙে পড়ে। একে বলা হয় ফল্ট বা চ্যুতির ফলে ভূমিকম্প। ১৯৬০ সালে আমেরিকার সানফ্রানসিকোতে এ ধরনের ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছিল। ভূকম্পজনিত ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি ধ্বংস এমনকি সুনামি সৃষ্টি হয়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে। ২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ায় যে সুনামির সৃষ্টি হয়েছিল তাতে ১,৬৬,৩২০ জন মানুষ মারা গেছল। ১৯৭০ সালে পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল ৩৬৯.৬ কোটি। এই জনসংখ্যার ৫.৩৩ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়ে আক্রান্ত হয়েছিল। ১৯৯১ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৫৩৮.৫ কোটি এবং বিপর্যয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ৫.৬ শতাংশ মানুষ।
আমাদের দেশে বন্যার প্রকোপও খুব বেশি। মৌসুমি বায়ু থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বেশি বৃষ্টি হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু বৃষ্টিপাতের ফলে প্রায়ই বন্যার সৃষ্টি হয়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে নিম্নচাপের ফলে ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে যে সুনামি হয় তার তান্ডব নেমে এসেছিল ভারতের তামিলনাড়ুর সমুদ্র উপকূলে এবং আন্দামানে। ২০১৫ সালের ২৫শে এপ্রিল নেপালের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে শুধু নেপাল নয় ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ প্রাণ হারান।
দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা
যদিও বিজ্ঞান তার জয়যাত্রা অক্ষুণ্ণ রেখেছে তবুও তার পক্ষে প্রকৃতিকে জয় করা সম্ভব হয়নি। ছাত্র-ছাত্রীরা হয় বয়সে তরুণ ও শৃঙ্খলাপরায়ণ। তাদের জীবন সংসারের ঘূর্ণাবর্তে আবদ্ধ নয়। নৈতিকতা বোধ তাদের কাছে খুবই গুরুত্ব পায়। বিবেকের তাড়নায় তারা ছুটে আসে অসহায় মানুষকে সাহায্য করতে। ছাত্ররা হয় পরিশ্রমী, তাই তারা যেকোন কাজ করতে উৎসাহের সাথে এগিয়ে আসে। ভূমিকম্পে ঘরবাড়ির তলায় মানুষ চাপা পড়লে পুলিশ, সাধারণ মানুষ যেমন উদ্ধার কাজে হাত মেলায় তেমনি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মতো ছাত্র-ছাত্রীরাও এগিয়ে আসে উদ্ধার কার্যে। যখন বন্যা-ঝড়ঝঞ্ঝার ফলে দুর্যোগ হয় তখন ছাত্র-ছাত্রীরাই সমাজসেবার মনোভাব নিয়ে হৈ হৈ করে বেড়িয়েপড়ে। আবার আগুন লাগার মতো ঘটনাও ঘটে।
গ্রাম ও শহরে যেমন আগুন লাগে তেমনি দাবানল ঘটে যেখানে জঙ্গল আছে। শুধু মানুষ নয় দাবানলে আক্রান্ত হয় জীবজন্তু পশুপাখিও। কেউ বিপদে পড়লে মানবিকতার নিরিখে অসহায়কে সাহায্য করা মানুষের এক মহৎ গুণ। সরকারি ব্যবস্থায় সব কাজ সবসময় সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, এগিয়ে আসতে হবে ছাত্রসমাজকেও প্রত্যেকের তরে প্রত্যেকে আমরা এই মনোভাব নিয়ে। জনসমাজ ও ছাত্রসমাজ এগিয়ে না এলে কখনই কাঙ্খিত ফল পাওয়া যায় না। ছাত্রসমাজকে সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে সকলকে। ছাত্রসমাজ কোমলমতি হওয়ায় যারা এসব বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের পরামর্শ, অভিজ্ঞতা, পরিকল্পনা দুর্যোগ মোকাবিলায় বেশি সুফল দিতে পারে।
উপসংহার
আমাদের দেশে খনিতে ধস নেমে মানুষের সমাধি ঘটছে, সুনামিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছে, বন্যা-খরায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ, ঝড়ঝঞ্ঝায় মানুষ হচ্ছে নিরাশ্রয়। এই অবস্থা থেকে মানুষই বাঁচাতে পারে মানুষকে। তখন ছাত্রসমাজের ভূমিকা খুবই জরুরী হয়ে পড়ে। ছাত্র-ছাত্রীরা পরিচালিত হয় বিবেকের দ্বারা। তাই আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের উপর গভীর আশা পোষণ করি।
আরও পড়ুন – বাংলার উৎসব রচনা