পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
পাঠাগার বলতে কি বুঝায়
ইংরেজিতে যাকে লাইব্রেরী বলি বাংলায় তাকে বলা হয় পাঠাগার। জ্ঞান-পিপাসু ব্যক্তির কাছে পাঠাগারের গুরুত্ব খুব বেশি। এক সময় মানুষ মুখে মুখে শুনে মনে রাখত, তখন ছন্দবদ্ধ কবিতাকে বলা হত ছান্দোস ভাষা। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ফলে মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কার হল। তার আগে তালপাতা, বাকল প্রভৃতিতে লিখে রাখার প্রচলন ছিল। ভাষা ও লিপির উদ্ভবের ফলে মানুষ মনের ভাবকে লিখিত ভাষায় ধরে রাখতে শিখেছে। সেই লিখিত ভাষা গ্রথিত হয়েছে গ্রন্থ বা পুঁথিতে। গ্রন্থ সঞ্চিত থাকে পাঠাগারে। পৃথিবীর যে জাতি যত উন্নত সেই জাতির পাঠাগার ততই উন্নত। গ্রন্থকে বলা হয় জ্ঞান চক্ষু। আর জ্ঞান চক্ষুর আধার হল গ্রন্থাগার বা পাঠাগার।
প্রাচীন গ্রন্থাগার বা পাঠাগার
প্রাচীনকালে নালন্দা, তক্ষশীলা, মথুরা, বিক্রমশীলা, বারণসী প্রভৃতি স্থান ছিল জ্ঞানচর্চার বিশেষ কেন্দ্র। এইসব বিদ্যাচর্চার স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল পুঁথি-সংগ্রহশালা। তখন সংগ্রহশালায় রক্ষিত ছিল অসংখ্য পুঁথি। তবে সেসব পুঁথি ছিল হাতে লেখা। তখন পাঠাগারের খ্যাতি ছিল সুদূর প্রসারী। কিন্তু দিগ্বিজয়ী বস্তিয়ার ও দন্তপুরী বিহারে যেখানে অসংখ্য পুথি সংগৃহীত ছিল দুর্গ ভেবে আগুনে পুড়িয়ে দেন। এইভাবে বিভিন্ন সময়ে অজস্র পুঁথি ধ্বংস হয়ে গেছে।
বর্তমানের পাঠাগার
সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে পাঠাগারের গুরুত্ব ও বৃদ্ধি পেয়েছে। আবিষ্কার হয়েছে মুদ্রণের নতুন নতুন পদ্ধতি। আগে বই ছাপা হত লেটার প্রেসে। এখন আরও সহজ পদ্ধতিতে কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে বই মুদ্রণ হচ্ছে। পাঠাগারের ভূমিকা সম্বন্ধে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল, কেহ যদি এমন করিয়া বাঁধিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাদেশের সহিত এই লাইব্রেরীর তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে মানবাত্মার অমর আলোক কালো অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে- হিমালয়ের মাথার ওপরে কঠিন বরফের মধ্যে কত কত বন্যা বাঁধা আছে, তেমনি এই লাইব্রেরীর মধ্যে মানব হৃদয়ের বন্যাকে বাঁধিয়া রাখিয়াছে।”
পাঠাগার শহর ও গ্রামে
পাঠাগারের গুরুত্ব যে জ্ঞান-পিপাসুদের কাছে খুবই বেশি তেমনি বর্তমানে গ্রাম-গঞ্জে, এমন কি বিদ্যালয়, কলেজেও লাইব্রেরী রয়েছে। বড় বড় শহরে যেমন ‘জাতীয় গ্রন্থাগার’, ‘এশিয়াটিক সোসাইটি‘ প্রভৃতি গ্রন্থাগার আছে তেমনি সরকারী উদ্যোগে গ্রামে গ্রামে ও গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। বড়ো বড়ো মনীষী যেমন রবীন্দ্রনাথ, আশুতোষ মুখোপধ্যায়, বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত পাঠাগার রয়েছে জাতীয় গ্রন্থাগারে।
উপসংহার
বই প্রেমিকের নিকট বই সংগ্রহ করা একপ্রকার শখ বা হবি। তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে গ্রন্থাগার গড়ে তোলেন। ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে যেমন সুদ প্রাপ্তির ফলে টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি হয়, তেমনি বই বাড়িতে থাকলে জ্ঞান বৃদ্ধি হয়। কারণ, হাতের কাছে বই থাকলে সহজে পড়ার সুযোগ পাওয়া যায় এবং পড়লে জ্ঞান অর্জন হয়। তাই লাইব্রেরী বা পাঠগার হল মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এক বিশেষ সোপান।
আরও পড়ুন – ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা