পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
- ভূমিকা
- স্বাধীনদেশে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার উদ্যোগ
- পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা
- পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতী ব্যবস্থায় গ্রামীণ উন্নয়ন
- সফলতা বা ব্যর্থতার পরিচয়
- কুফল
- উপসংহার
ভূমিকা
আমাদের দেশ ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান ও গ্রামপ্রধান দেশ। আদমশুমারি অনুযায়ী এদেশের জনসংখ্যার 90%-এর বেশি মানুষ গ্রামে বসবাস করে। তাই একথা বলা যায়, গ্রামের উন্নতি না হলে কখনোই দেশের ও জাতির উন্নয়ন হওয়া সম্ভব নয়। এই সত্য উপলব্ধি করেই পঞ্চাশের দশকে আমাদের দেশে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থার পটভূমি নির্মিত হয়েছিল। পঞ্চায়েতীরাজ প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী সময়ে গ্রামীণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা বলতে ছিল সমাজপতিদের নিয়ে গড়া স্থানীয় অঞ্চলভিত্তিক বা গ্রামভিত্তিক বিভিন্ন সভা-সমিতি বা কমিটি। কিন্তু বাস্তব সত্য এই যে, তৎকালীন সময়ে এই জাতীয় প্রশাসনিক কাঠামোতে সুষ্ঠু আইনকানুন ও নিয়মের বিধান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত না থাকাতে সমাজপতিদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপরেই চলত গ্রামীণ সমাজের ব্যবস্থাপনা। তাই সেখানে মাত্রাহীন অন্যায়-অবিচার, শোষণ, স্বজনপোষণ, নির্যাতন প্রভৃতি দেখা যেত। আশার কথা, ভারতবর্ষে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা সূচনার পর একদিকে যেমন গ্রামবাংলার উন্নতি সাধিত হয়েছে তেমনি অনেকাংশেই দূরীভূত হয়েছে শোষণ-পীড়নের মাত্রা।
স্বাধীনদেশে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার উদ্যোগ
ভারতবর্ষ স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর ভারতীয় সংবিধানের চল্লিশ নং ধারায় পঞ্চায়েত ব্যবস্থা প্রচলন করার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। তবে উল্লেখ করা যায় যে, স্বাধীনতার প্রথম দশকেই তা ফলপ্রসূ হয়নি। পরবর্তীকালে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে বলবন্ত রাই মেহতার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠিত হয়, সেই কমিটির সুপারিশ অনুসারে রাজস্থান রাজ্যে ১৯৫৯ সালে প্রথম পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তী অধ্যায়ে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থা সারা ভারতবর্ষে প্রচলিত হয়। তবে একথা বলা যায়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে এই ব্যবস্থা পুরোপুরি সফল হতে পারেনি।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা
যদিও সারাদেশব্যাপী ষাটের দশকে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছিল, তবু পশ্চিমবঙ্গে সত্তর দশকের শেষে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা পুরোপুরি গৃহীত হয় এবং অভূতপূর্ব সাফল্য লাভ করে। ১৯৭৭ সালের গঠিত তৎকালীন সরকার পঞ্চায়েতীরাজ প্রচলনের জন্য দৃঢ় ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করেন। এরই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ১৯৭৮ সালে পশ্চিমবাংলায় প্রথম ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন (Three-Tire-Panchayat Election) অনুষ্ঠিত হয়। গ্রামবাংলার মানুষের স্বনির্ভরতার জন্য ও তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে-(ক) গ্রাম পঞ্চায়েত, (খ) পঞ্চায়েত সমিতি, (গ) জেলা পরিষদ। গ্রামাঞ্চলের প্রাপ্তবয়স্ক ভারতীয় নাগরিকরা প্রত্যেকেই এই তিনটি স্তরে ভোট দিতে পারেন। পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থার সর্বনিম্নস্তরে আছে-গ্রাম পঞ্চায়েত, মধ্যবর্তী স্তরটি হল-পঞ্চায়েত সমিতি এবং সর্বোচ্চ স্তর বলতে জেলা পরিষদকে বোঝায়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ ভোটদানের মাধ্যমে তাদের মনোনীত প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করতে পারেন। কোনো একটি জেলার জেলা পরিষদের সভাধিপতির নেতৃত্বে সেই জেলার পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। এককথায় বলা যায়, পঞ্চায়েতী রাজ ব্যবস্থা প্রকৃত অর্থেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি অন্যতম সোপান।
পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতী ব্যবস্থায় গ্রামীণ উন্নয়ন
সারাদেশে পঞ্চায়েতীরাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাফল্য এসেছে পশ্চিমবাংলায়। ভূমিসংস্কার ও ভূমি সংরক্ষণ, কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচ প্রকল্পের উন্নতি, কৃষিশিল্পের বাণিজ্যকরণ, স্বনির্ভর প্রকল্প রূপায়ণ, সমবায় সমিতি স্থাপন, আর্থিক সম্পদের বৃদ্ধি প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। গ্রামের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত প্রান্তিক মানুষদের জন্য গৃহ-নির্মাণ, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ঋণদান, কৃষকদের জন্য সার ও বীজ সরবরাহ আশাতীত সাফল্য লাভ করেছে। এ ছাড়াও, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়ন, স্বাস্থ্যব্যবস্থার উন্নয়ন, সামাজিক বনসৃজন, স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প প্রভৃতিতে আশানুরূপ সাফল্য পরিলক্ষিত হয়। সাম্প্রতিককালে গ্রামের রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎব্যবস্থা, পানীয় জল প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়। এককথায় গ্রামবাংলার সামাজিক, আর্থসামাজিক প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ফলে গ্রামীণ জীবনের সেই অন্ধকারময় যুগ আর নেই।
সফলতা বা ব্যর্থতার পরিচয়
সমস্ত ধরনের ব্যবস্থাতেই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুটি দিক লিখিত হয়। ত্রিস্তরভিত্তিক পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা বহুক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগও এসেছে। শুধু তাই নয়, দলীয় সংকীর্ণতা, পক্ষপাতমূলক আচরণ, সরকারি অর্থের আত্মসাৎকরণ ইত্যাদি অভিযোগ অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ করা যায়। তবে বলা যায়, দলমত নির্বিশেষে যাবতীয় নেতিবাচক দিকগুলি অবসানকল্পে ও সহযোগিতার পূর্ণ মনোভাবে পঞ্চায়েতী ব্যবস্থা আরও অনেক বেশি সফল হতে পারে।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৪। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ছাত্রসমাজের ভূমিকা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৫। ভূমিকম্প – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৬। মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা