পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

সূচিপত্র

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2, 3, 5) | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর
পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 2)

১. “রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছিলুম,…”-সেই কারণে প্রাবন্ধিক কী বলতে চেয়েছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছিলেন বলে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী প্রথাগত মূল্যায়নের বাইরে গিয়ে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দেখতে চেয়েছিলেন। সেই কারণে সুশীল পাঠক এবং সহৃদয় পাঠিকাদের কাছে তিনি ক্ষমাও চেয়ে নিয়েছেন।

২. প্রথাগত মূল্যায়নে সাহিত্যসৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের যেসব গুণের দিকে ইঙ্গিত করা হয় তা উল্লেখ করো।

উত্তর: প্রথাগত মূল্যায়নে রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস সৃষ্টির দক্ষতাকে স্বীকার করা হয়, ছোটোগল্পে তিনি মপাসাঁ, চেকভ-কে ছাপিয়ে গিয়েছেন কিংবা নাট্যসাহিত্যে তিনি যে-কোনো মিস্টিক-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন, কবি হিসেবে তিনি বিশ্বজনীন প্রশংসার অধিকারী এবং শব্দতত্ত্ব নিয়ে তাঁর গবেষণা পণ্ডিতদের নির্বাক করে দেয় এরকমটা ভাবা হয়।

৩. “…নির্বাক করে দিয়েছে,”-কাদের, কী নির্বাক করে দিয়েছে লেখো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ শব্দতত্ত্ব বিষয়ে যে গবেষণা করেছেন তার গভীরতা পণ্ডিতদের নির্বাক করে দিয়েছে বলে সৈয়দ মুজতবা আলী মনে করেছেন। মারাত

৪. “…তার ইয়ত্তা নেই”-কীসের ইয়ত্তা নেই বলে লেখক মনে করেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি আগামী বহু বছর ধরে ভারতবাসীকে যেসব নানা নতুন শিক্ষা দেবে তার কোনো ‘ইয়ত্তা নেই’ বলে লেখক মনে করেছেন।

৫. “…সে বিষয়েও কোনো সন্দেহ নেই।”-কোন্ বিষয়ে কোনো সন্দেহ না-থাকার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: উপন্যাস, নাটক, কবিতা সৃষ্টিতে, শব্দতত্ত্ব নিয়ে গবেষণায়, রাজনৈতিক দূরদৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথ চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। এসবের পাশাপাশি গুরুদেব হিসেবে তিনি যে শান্তিনিকেতন নির্মাণ করেছিলেন তার স্নিগ্ধছায়ায় পৃথিবীর মানুষ একদিন ‘সুখময় নীড়’ লাভ করবে সে বিষয়ে লেখকের কোনো সন্দেহ নেই।

৬. “সুরের দিক দিয়ে বিচার করব না।”-কেন প্রাবন্ধিক এ কথা বলেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গান রবীন্দ্রনাথের অমরত্বের জন্য বিশেষ ভূমিকা রাখে প্রাবন্ধিক এ কথা মনে করলেও, তিনি সুরের দিক থেকে সেই গানের বিচার করতে চাননি। কারণ তাঁর মনে হয়েছে যে, শান্তিদেব ঘোষ তাঁর ‘রবীন্দ্র-সঙ্গীত’-এ এমন কোনো জিনিস বাদ দেননি, যা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।

৭. “…সে হচ্ছে গীতিরস।”-কোন্ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক এ কথা বলেছেন?

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী বারবার কবিতা বা গানের দ্বারস্থ হয়েছেন যে প্রত্যাশা নিয়ে, তা হচ্ছে রসের আস্বাদন। রস বলতে তিনি গীতিরসকেই বুঝিয়েছেন। সাহিত্যের অন্য রসে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না।

৮. “…এ জীবন ধন্য মেনেছি…” কখন প্রাবন্ধিকের এই উপলব্ধি হয়েছিল?

উত্তর: শেলি, কীটস, গ্যেটে, হাইনে, হাফিজ আত্তার, কালিদাস, জয়দেব, গালিব, জওক্ এঁদের গান কিংবা কবিতার রসাস্বাদন করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী নিজের জীবনকে ধন্য মনে করেছেন।

৯. “তখন সর্ব-প্রকারের বিশ্লেষণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পায়।” -কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গানের আবেদন লেখকের কাছে অখণ্ড এবং সম্পূর্ণ। সেই অখণ্ড রূপ লেখকের সমস্ত হৃদয়-মনকে অধিকার করে নেয়। আর তারফলে তাঁর সমস্তরকম বিশ্লেষণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ লোপ পায়।

১০. “… আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত জাতীয় কিঞ্চিৎ রস পেয়েছি।”- কোন্ প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছেন নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্যে যে রসাবেদন প্রাবন্ধিকের মনকে অভিভূত করে দেয়, তা বিশ্ব সাহিত্যের দিক্কাল কবি বা গীতিকারদের কবিতা-গানে তিনি খুঁজে পাননি। কেবল জার্মানদের ‘লীডার’ এবং ইরানিদের গজলে তিনি সেই জাতীয় অনুভূতি কিছুটা পেয়েছেন। এই প্রসঙ্গেই সৈয়দ মুজতবা আলী উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

১১. রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে ‘লীডার’ বা গজল-এর যে পার্থক্য প্রাবন্ধিক লক্ষ করেছেন তা লেখো।

উত্তর: রসাবেদনের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে জার্মানদের ‘লীডার’ বা ইরানের গজল গানের কিছু সাদৃশ্য রয়েছে। কিন্তু মূল পার্থক্য হল রবীন্দ্রনাথের গান যেখানে অখণ্ড, সেখানে ‘লীডার’ বা গজল শুনে মনে হয় সেই গান হঠাৎই শেষ হয়ে গেছে অর্থাৎ তা অসম্পূর্ণ।

১২. “…শুধু যে অতৃপ্ত রেখে গিয়েছে তাই নয়, অসম্পূর্ণ বলেই মনে হয়েছে”-যে বিষয়ে লেখক এ কথা বলেছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রসংগীতের স্বাদ কিছুটা পেয়েছিলেন জার্মানদের ‘লীডার’ এবং ইরানিদের গজল গানে। কিন্তু তাঁর মনে হয়েছে যে, লীডার কিংবা গজল আরও কিছুক্ষণ ধরে চললে ভালো হত। অর্থাৎ তা যেন সম্পূর্ণ তৃপ্তির আগেই শেষ হয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গেই লেখক উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

১৩. “…তখন মনে হয়,”-কী মনে হওয়ার কথা এখানে বলা হয়েছে?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গান অন্তিমে যদি কোনো অতৃপ্তি রেখে যায় তা তার অসম্পূর্ণতা নয়। তা আসলে অতৃপ্তির মধ্য দিয়ে আকাঙ্ক্ষার জন্ম দেয়। লেখক মনে করেছেন যে, সে গান তাঁর সামনে যে ভুবন গড়ে দিয়েছে প্রথম পরিচয়ে তার সবকিছু জানা না হলেও কোনো দুঃখ নেই। সে গান আবার শুনতে হবে এবং সেই ভুবনের আরও অনেকটা তাঁর কাছে উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে।

১৪. “…কিন্তু আরেকটি কথা তার চেয়েও সত্য:”-কীসের থেকে, কী সত্য বলে প্রাবন্ধিক মনে করেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গানে অন্তরে যে অতৃপ্তি থাকে তা আসলে তাঁর গান শুনতে আরও আগ্রহী করে তোলে এবং এই ভাবেই গানের ভিতর দিয়ে অন্তর্ভুবনের সন্ধান পাওয়া যায়। এই বিষয়টির থেকে অধিকতর সত্যের কথা লেখক এখানে বলতে চেয়েছেন।

অধিকতর যে সত্যের কথা প্রাবন্ধিক বলতে চেয়েছেন তা হল, তাঁর মতে রবীন্দ্রনাথের কোনো গানই কখনও নিজেকে সম্পূর্ণ নিঃশেষ করে না।

১৫. “….নটরাজের প্রত্যেকটি অঙ্গ-ভঙ্গির মত রবীন্দ্রনাথের গানের প্রত্যেকটি শব্দ।”-এ কথা বলার কারণ কী?

উত্তর: নটরাজের মূর্তি দেখে মনে হয় যে, অন্য কোনো অঙ্গভঙ্গিতে নটরাজের নৃত্য রূপায়িত হতে পারত না। ঠিক সেরকমই রবীন্দ্রনাথের গান শোনার পরে মনে হয় যে, সে গান অন্য কোনো রূপ নিতে পারত না, তার প্রতিটা শব্দ এতটাই সুনির্বাচিত এবং ভাব ও অর্থপূর্ণ। এই কারণেই লেখক মন্তব্যটি করেছেন।

১৬. “…তাঁর নৃত্য বন্ধ হয়ে গেল।”- প্রাবন্ধিকের মন্তব্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর : নটরাজ-এর নৃত্যের ভঙ্গি সুনির্দিষ্ট। ঠিক সেরকম ভাবেই রবীন্দ্রসংগীতেরও প্রত্যেকটি শব্দের নিজস্ব মাধুর্য রয়েছে। কেউ যদি সেই ‘শব্দ-সম্মান’ বজায় না রাখতে পারেন, তাহলে যেন মনে হয় নটরাজের প্রতিটা অঙ্গ আড়ষ্ট হয়ে গিয়ে তাঁর নৃত্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

১৭. “…তখন এই মৃত্তিকাই স্বর্গের চেয়ে অধিকতর ‘মধুময় হয়ে ওঠে’।”-মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গান স্বর্গ থেকে মর্ত্যে অনায়াসে যাতায়াত করে। মৃত্তিকার বন্ধন থেকে রবীন্দ্রনাথ বহুবার আমাদের নিয়ে গিয়েছেন ‘নীলাম্বরের মর্মমাঝে’। আবার যখন রবীন্দ্রনাথ, গানের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন তখন এই মৃত্তিকাকে স্বর্গের থেকেও অধিকতর সুন্দর লাগে।

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 3)

১. “তাই যদি তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে দেখি….”-প্রাবন্ধিক কার সম্পর্কে এ কথা বলেছেন? ‘ব্যক্তিগতভাবে’ দেখা বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

• রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ছিল প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত সাহচর্য। এই কারণে শিল্প বা সাহিত্য-সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভাবতে চাননি। উপন্যাসে, নাটকে, ছোটোগল্পে, কবিতায়, কথায় সামগ্রিক সাহিত্য সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের যে দক্ষতা; শব্দতত্ত্ব নিয়ে তাঁর যে গবেষণা কিংবা রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি অথবা শান্তিনিকেতন নির্মাণে তাঁর যে বিকল্প ভাবনা; সবই সমালোচক কিংবা বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয় হয়েছে বারে বারে। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথকে ধরতে চেয়েছেন ব্যক্তিগত অনুভবে, বিশেষত তাঁর গানের মধ্য দিয়ে। তিনি উপলব্ধির নিবিড়তায়, নিজস্ব অনুভবে রবীন্দ্রনাথকে দেখেন বলেই সেখানে তাঁর ‘ব্যক্তিগত ভাব’ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

২. “….অপরাধ নেবেন না।”-কোন্ বিষয়ে লেখক এ কথা বলেছেন আলোচনা করো।

উত্তর: যেহেতু লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথের সাহচর্য পেয়েছিলেন, তাই রবীন্দ্রনাথকে তিনি প্রথাগতভাবে কবি ও ঔপন্যাসিক, নাট্যকার পরিচয় বা তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক কাজকর্মের বিশ্লেষণে যেতে চাননি। রবীন্দ্রনাথকে তিনি বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত অনুভবে এবং সেজন্যই সুশীল পাঠক বা সহৃদয় পাঠিকারা যেন অপরাধ না দেন সেই অনুরোধ রেখেছেন লেখক।

৩. “আমার কিন্তু ব্যক্তিগত বিশ্বাস,”-লেখক কোন্ প্রসঙ্গে, কী ব্যক্তিগত বিশ্বাসের কথা বলেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের মূল্যায়ন সাধারণভাবে হয় তাঁর উপন্যাস, ছোটোগল্প, নাটক, কবিতা অর্থাৎ সাহিত্য সৃষ্টি নিয়ে। তা নিয়ে তাঁর গবেষণা পন্ডিতদের মাফ করে দেয়। তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি কিংবা সমাজ সংগঠন শিক্ষার বিকল্প ভাবনা এসবও আলোচনার বিষয় হতে পারে। প্রথাগত এই রবীন্দ্র মূল্যায়ন প্রসঙ্গেই প্রাবন্ধিক নিজের বিশ্বাসের কথা জানিয়েছেন।

প্রাবন্ধিকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস হল, রবীন্দ্রনাথ এই সমস্ত প্রথাগত আলোচনার বাইরে আসলে অমর হয়ে থাকবেন তাঁর গানের জন্য।

৪. “….কতকগুলো অপূর্ব গুণের সমন্বয় হলে পর এ রকম গান সৃষ্ট হতে পারে।”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর কথামতো তিনি সাহিত্যে সবসময় যার সন্ধান করেছেন তা হল গীতিরস। শেলি, কীটস থেকে কালিদাস, জয়দেব কিংবা গালিব সর্বত্রই এই রসাস্বাদনই ছিল তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে তিনি এমন এক অখণ্ড রূপের সন্ধান পেয়েছিলেন, যা হৃদয় এবং মনকে অভিভূত করে রাখে। এমনকি তার কোনো বিশ্লেষণ করার ইচ্ছাও জাগে না। এই মুগ্ধতা থেকেই লেখক উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।

৫. “…এ জীবন ধন্য মেনেছি কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে বার বার বলেছি…”-কখন প্রাবন্ধিক ধন্য হয়েছেন এবং তিনি কী বলেছেন?

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলী কবিতা বা গানের কাছে চিরজীবন দ্বারস্থ হয়েছেন রসের সন্ধানে। সে রস হচ্ছে গীতিরস। শেলি, কীটস, গ্যেটে, হাইনে, হাফিজ আত্তার, কালিদাস, জয়দেব, গালিব, জওক্ এঁদের গান কিংবা কবিতার রসাস্বাদন করতে গিয়ে তিনি নিজের জীবনকে ধন্য মনে করেছেন।

• রসাস্বাদনে ধন্য হলেও বারবার প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছে, “এমনটি আর পড়িল না চোখে,/আমার যেমন আছে!” অর্থাৎ তাঁর নিজের যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ তিনি আর কোথাও খুঁজে পাননি। সেই সম্পদেরই নাম রবীন্দ্রনাথ।

৬. “তার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বার বার হার মেনেছি।”-কারণ এবং এই ‘হার মানা’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন?

উত্তর: শেলি, কীটস, গ্যেটে, হাইনে, হাফিজ আত্তার, কালিদাস, জয়দেব, গালিব, জওক্ এঁদের গান কিংবা কবিতার রসাস্বাদন করতে গিয়ে প্রাবন্ধিক নিজের জীবনকে ধন্য মনে করলেও কোথাও একটা অতৃপ্তি মনের মধ্যে থেকে গিয়েছে এবং নিজের মনেই তিনি বারবার বলেছেন-“এমনটি আর পড়িল না চোখে,/আমার যেমন আছে!” এরই কারণ তিনি বিশ্লেষণ করতে চেয়েছেন।

• প্রাবন্ধিক উপলব্ধি করেছেন যে, এর কারণ হলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের গান এমন এক অখণ্ড রূপ নিয়ে হৃদয় ও মনকে অভিভূত করে দেয় যে, সমস্ত রকমের বিশ্লেষণ ক্ষমতা তখন সম্পূর্ণ লোপ পায়।

৭. “…তুলনা করে ঈষৎ বিশ্লেষণ করা যায়।”-কোল্ তুলনার কথা বলা হয়েছে? মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: উল্লিখিত অংশে জার্মানদের ‘লীডার’ কিংবা ইরানিদের গজল গানের সঙ্গে রবীন্দ্রসংগীতের তুলনার কথা বলা হয়েছে।

শেলি, কীটস, গ্যেটে, হাইনে, হফিজ আত্তার, কালিদাস, জয়দেব, গালিবে সৈয়দ মুজতবা আলী মুগ্ধ হলেও কোথাও একটা অতৃপ্তি তাঁর মধ্যে ছিল। রবীন্দ্রনাথের গানে তিনি পেয়েছিলেন সেই অখণ্ড রূপ, যা তাঁর মনকে অভিভূত করে দিয়েছিল। লেখক বলেছেন যে, জার্মানদের ‘লীডার’ কিংবা ইরানিদের গজল গানেই একমাত্র রবীন্দ্রসংগীতের মতো রস তিনি কিঞ্চিৎ পরিমাণে পেয়েছেন। তাই তাদের মধ্যে কিছুটা হলেও তুলনা করা যায়।

৮. “তখন ধরা পড়ে?” -কখন, কী ধরা পড়েছিল?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে জার্মানদের ‘লীডার’ এবং ইরানিদের গজল গানের তুলনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের গানে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন এক অখণ্ড সম্পূর্ণ রূপ। কিন্তু রসাবেদনে মিল থাকলেও ‘লীডার’ এবং গজল শুনে তাঁর মনে হয়েছে যে, এ গান যদি আরও বহু সময় ধরে চলত তাহলে আরও ভালো লাগত অর্থাৎ সেগুলি আমাদের মনকে শুধু অতৃপ্ত রেখে গিয়েছে তা-ই নয়, সেগুলিকে অসম্পূর্ণ বলে মনে হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গান কখনোই এরকম অসম্পূর্ণরূপে আমাদের সামনে দাঁড়ায়নি বলে প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছে।

৯. “…তবে তার কারণ তার অসম্পূর্ণতা নয়,”-কীসের কারণের কথা বলা হয়েছে? কারণটি কী ছিল?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গান, প্রাবন্ধিকের মতে, কখনোই অসম্পূর্ণরূপে তাঁর সামনে দাঁড়ায়নি। তবে কখনো-কখনো সেই গান তাঁকে অতৃপ্ত রেখে যেতেও পারে, তার কারণের কথাই এখানে বলা হয়েছে।

এই অতৃপ্ত রেখে যাওয়ার কারণ হল, অতিশয় উচ্চাঙ্গের যত রসসৃষ্টি আছে সবই ব্যঞ্জনা এবং ধ্বনিপ্রধান। তার ধর্মই হল অতৃপ্ততা। এইভাবে অতৃপ্তি দিয়ে হৃদয়-মনকে ভরে দেওয়ার ফলে সৌন্দর্য এবং রসস্বরূপের সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য মনের মধ্যে আকুলতা তৈরি হয়। সে কারণে গান শোনার আগ্রহও আবার মনের মধ্যে তৈরি হয়।

পঁচিশে বৈশাখ প্রবন্ধের প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 5)

১. “…একদিন সে ভুবন আমার নিতান্ত আপন হয়ে উঠবে।” -কোন্ ভুবনের কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তা লেখকের আপন হয়ে উঠবে?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্য দিয়ে লেখক যে ভুবনের সন্ধান পান এখানে তার কথাই বলা রয়েছে।

• রবীন্দ্রনাথের গান কখনোই অসম্পূর্ণ নয়, কিন্তু তা কখনো-কখনো অতৃপ্তি রেখে যায়। কারণ এই অতৃপ্তি কবিতা বা গানের রস-সার্থকতা ও ব্যঞ্জনার স্বাভাবিক ধর্ম। শ্রোতা হিসেবে প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছে যে, প্রথম পরিচয়ে গান অন্তর্ভুবনের সবটুকুর সন্ধান দিতে না পারলেও আবার যে শোনার আগ্রহ তৈরি হয় তা ওই ভুবনকে আবার উদ্ভাসিত করে তুলবে এবং একদিন তা শ্রোতার নিতান্ত আপন হয়ে উঠবে।

২. “গান যখন সাঙ্গ হয়…”-গান কীভাবে সাঙ্গ হয়? লেখক তখন কী উপলব্ধি করেন?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে শব্দচয়ন, সেই শব্দগুলো বিশেষ স্থানে সংস্থাপন এবং হৃদয় ও মনকে অভাবিত, কল্পনাতীত নতুন শব্দের ভিতর দিয়ে উন্মুখ রেখে এক ভাব, অর্থ ও মাধুর্যপূর্ণ পরিসমাপ্তিতে পৌঁছে দিয়ে গান সাঙ্গ হয়।

• গান যখন শেষ হয় লেখক প্রতিবারই উপলব্ধি করেন যে, সেই গান আর অন্য কোনো রূপ নিতে পারত না।

৩. “এ গান আর অন্য কোন রূপ নিতে পারতো না…”-কখন প্রাবন্ধিকের এই উপলব্ধি হয়েছে? নিজের ধারণাটিকে তিনি কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?

উত্তর: রবীন্দ্রনাথের গান যখন শেষ হয়, প্রাবন্ধিকের মনে হয় যে সেই গান আর অন্য কোনো রূপ নিতে পারত না।

• নিজের ধারণার ব্যাখ্যায় লেখক বলেছেন যে, নটরাজের মূর্তি দেখে মনে হয় অন্য কোনো অঙ্গভঙ্গি দিয়ে চোখের সামনে নটরাজের সেই নৃত্যকে রূপায়িত করা সম্ভব নয়। সেই প্রত্যেকটি অঙ্গভঙ্গির মতোই হল রবীন্দ্রনাথের গানের প্রত্যেকটি শব্দ। সেগুলির উপযুক্ত চয়ন ও সংস্থাপন না হলে রবীন্দ্রনাথের গান তার তাৎপর্য হারাবে।

৪. “লক্ষ্য করেছেন নিশ্চয়ই”-কী লক্ষ করার কথা বলা হয়েছে? এ বিষয়ে লেখকের অভিমত কী?

উত্তর: চমৎকার সুর-তাল-জ্ঞান, কণ্ঠ থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো গায়কের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান যথেষ্ট আবেদন রাখতে পারে না। এই বিষয়টার দিকেই প্রাবন্ধিক লক্ষ করতে বলেছেন।

• এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে, গায়কের ‘যথেষ্ট শব্দ-সম্মান বোধ’ থাকে না। তাই প্রতিটি শব্দ তিনি রসিয়ে গাইতে পারেন না। এর ফলে গানের আবেদন হয়ে যায় ‘ফিকে’ এবং ‘পানসে’।

৫. “….তার কারণ অনুসন্ধান করলে অধিকাংশ স্থলেই দেখতে পাবেন,”-কীসের কারণ? অনুসন্ধানের ফলে কী দেখা যাবে?

উত্তর: প্রাবন্ধিক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে, কোনো কোনো গায়কের চমৎকার সুর-তাল জ্ঞান, কণ্ঠের মাধুর্য ইত্যাদি থাকলেও তার গাওয়া গান নিতান্তই ‘পানসে’ অর্থাৎ ভালো লাগে না। এর কারণ অনুসন্ধানের কথাই লেখক বলেছেন।

• কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গায়কের যথেষ্ট শব্দের গুরুত্ব বিষয়ক বোধ নেই। ফলে প্রতিটি শব্দকে তার নিজস্ব তাৎপর্যে তিনি গাইছেন না। সে কারণে গান চূড়ান্ত বিচারে তার আকর্ষণ ক্ষমতা হারাচ্ছে।

৬. “তারায় তারায় দীপ্ত শিখার অগ্নি জ্বলে”-এই গানটি ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে উদ্ধৃত করার কারণ কী?

উত্তর: সৈয়দ মুজতবা আলী রবীন্দ্রগানের সৌন্দর্যের সন্ধানে বলেছেন যে, রবীন্দ্রনাথের গান ‘নীলাম্বরের মর্মমাঝে’ বিচরণের পর আবার পৃথিবীতে ফিরে আসার কাহিনি। স্বর্গসভার মহাঙ্গন থেকে এই ‘শ্যামল মাটির ধরাতলে’, যেখানে ঘাসে ঘাসে রঙিন ফুলের আলপনা, আর বনের পথে আঁধার-আলোর আলিঙ্গন সেখানে খেলার ছলে কবির দিন কাটে। লোকোত্তর থেকে মর্ত্য-পৃথিবীতে কবির এই ফিরে আসার দৃষ্টান্ত হিসেবেই গানটির উল্লেখ করা হয়েছে।

৭. “…এ অলৌকিক কর্ম যিনি করতে পারেন তিনিই ‘বিশ্বকর্মা মহাত্মা’।”-কার সম্পর্কে এ কথা বলা হয়েছে? এরূপ মন্তব্যের কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে উল্লিখিত মন্তব্যটি করা হয়েছে।

• রবীন্দ্রনাথের গান কখনও শ্রোতা বা পাঠককে ‘মৃত্তিকার বন্ধন’ থেকে নিয়ে যায় ‘নীলাম্বরের মর্মমাঝে’। আবার সেই গান-ই মৃত্তিকাকে স্বর্গের থেকে মধুময় করে তোলে। এভাবে কখনও স্বর্গে, কখনও মর্ত্যে, কখনও ‘আপন অজানা’র সন্ধানে, কখনও মানুষকে দেবতা বানিয়ে আবার কখনও দেবতার থেকে মানুষকে মহৎ করে তুলে রবীন্দ্রনাথের গান শুধুমাত্র শব্দ আর সুরের সাহায্যে এক অদ্ভুত কাজ করে। প্রাবন্ধিকের ভাষায় এ হল ‘অলৌকিক কর্ম’ এবং যিনি এ কাজ করতে পারেন তিনি মহাত্মা বিশ্বকর্মার সঙ্গে তুলনীয়।

৮. ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলী গান ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্য কোন্ কোন্ গুণের উল্লেখ করেছেন? তাঁর কাছে কবির গান অসম্পূর্ণ রূপে প্রতিভাত হয় না কেন?

উত্তর: উপন্যাসে, নাটকে, ছোটোগল্পে, কবিতায়, কথায় সামগ্রিক সাহিত্য সৃষ্টিতে রবীন্দ্রনাথের যে দক্ষতা; শব্দতত্ত্ব নিয়ে তাঁর যে গবেষণা কিংবা রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি অথবা শান্তিনিকেতন নির্মাণে তাঁর যে বিকল্প ভাবনা; সবই সমালোচক কিংবা বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয় হয়েছে বারে বারে।

• রবীন্দ্রনাথের গান কখনোই অসম্পূর্ণ নয়, কিন্তু তা কখনো-কখনো অতৃপ্তি রেখে যায়। কারণ এই অতৃপ্তি কবিতা বা গানের রস-সার্থকতা ও ব্যঞ্জনার স্বাভাবিক ধর্ম। শ্রোতা হিসেবে প্রাবন্ধিকের মনে হয়েছে যে, প্রথম পরিচয়ে গান অন্তর্ভুবনের সবটুকুর সন্ধান দিতে না পারলেও আবার যে শোনার আগ্রহ তৈরি হয় তা ওই ভুবনকে আবার উদ্ভাসিত করে তুলবে এবং একদিন তা শ্রোতার নিতান্ত আপন হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment