নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

সামাজিক স্বাধীনতার ধারণা

সুভাষচন্দ্র বসুর সামাজিক স্বাধীনতার ধারণাটি একটি মুক্ত, আত্মনির্ভরশীল এবং সামাজিকভাবে ন্যায়পরায়ণ ভারত গঠনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তিনি সামাজিক স্বাধীনতার দৃষ্টিভঙ্গির যে সমস্ত দিকগুলির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন সেগুলি হল-

  • প্রান্তিক গোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন: নেতাজির স্বাধীনতার ধারণায় সমস্ত ধরনের বৈষম্য ও শোষণ থেকে মুক্ত সমাজ এবং সামাজিক সমতাকে প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য নেতাজি সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, দলিত শ্রেণি, মহিলা ও অন্যান্য দুর্বল শ্রেণির মানুষদের স্বপক্ষে স্বাধীনতার কথা তুলে ধরেছিলেন। এবং তাদের উন্নয়নের জন্য জাতীয় উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সামাজিক সংস্কার ও শিক্ষার বিস্তারের কথা বলেছিলেন।
  • মহিলাদের অধিকার: নেতাজি মহিলাদের অগ্রগতি ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণকে সমর্থন করেছিলেন।
  • জাতীয় ঐক্য: নেতাজির কাছে সামাজিক স্বাধীনতা ছিল জাতীয় ঐক্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। তার মতে কেবলমাত্র সাম্প্রদায়িক বিভাজন কাটিয়ে একটি সুসংহত ও শক্তিশালী জাতি গঠনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব হবে।
  • সাম্য ও ন্যায়বিচার: নেতাজি তরুণ বয়স থেকে স্বামী বিবেকানন্দের

 স্বাধীনতার বাণীর দ্বারা উদবুদ্ধ হয়েছিলেন। নেতাজি এমন একটি সমাজের কল্পনা করেছিলেন যেখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত ব্যক্তি সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু বিশ্বাস করতেন যে জাতিভেদ, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় অসহিষুতার পরিসমাপ্তি ঘটলে প্রকৃত স্বাধীনতা গড়ে উঠবে। ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি কতগুলি পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। সেগুলি হল-

  • বিভাজন ও শাসন নীতির বিরোধিতা: ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জন্য সাম্প্রদায়িক ভাগ বাঁটোয়ারার ভিত্তিতে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে, নেতাজি তার তীব্র বিরোধিতা করেন। কারণ শ্বেতপত্রের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতকে আরও খন্ডিত করা, ভারতীয়দের মধ্যে বিভেদ তৈরি করা। ব্রিটিশদের এই ‘Divide and Rule’ (বিভাজন ও শাসন) নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন সুভাষচন্দ্র।
  • সাম্প্রদায়িকতার প্রতিরোধ: ভারতবাসীকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বে ওঠার আহবান জানিয়ে নেতাজি বলেন- “আমাদের কেবল নিজেদের অতীতের দিকে তাকাতে হবে এবং ঐতিহাসিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে। এর মধ্যে হিন্দু বা মুসলিমের কোনো ব্যাপার নেই। এটা বহু সংস্কৃতির মিলনের ফল।”
  • ধর্ম থেকে রাজনীতির পৃথক্করণ: তিনি চেয়েছিলেন ধর্ম থেকে রাজনীতিকে আলাদা করতে। ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সুভাষচন্দ্র শুধু বলেননি, সেই কথাকে কাজেও পরিণত করেছিলেন।** যদিও তিনি বলেন, যতদিন না মুসলিমদের যথোপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব থাকছে ততদিন তাদের বিশেষ সংরক্ষণ দেওয়া হবে। তিনি বলেছিলেন রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও উর্দুর সংমিশ্রনে ‘হিন্দোস্থানি’ হওয়া দরকার। তিনি সকল ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মধ্যে দিয়েই ভারতকে ব্রিটিশমুক্ত করার কথা বলেছিলেন।
  • বাস্তব প্রয়োগ: সুভাষচন্দ্রের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ পাওয়া যায় আজাদ হিন্দ ফৌজের (INA) যুদ্ধক্ষেত্রে এক নৈশভোজন সভায়। সেই নৈশভোজের সভায় তিনি হিন্দু এবং মুসলিম সৈন্যদের একত্রে নিয়ে ভোজনপর্ব সেরেছিলেন।

উক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, তিনি কোনোরকম ধর্মীয়, জাতিগত, লিঙ্গগত বৈষম্যকে প্রশ্রয় দেননি।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment