নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা

নেতাজি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘স্বাধীনতার অর্থ কেবল রাজনৈতিক বন্ধনমুক্তি নয়, এই স্বাধীনতা সম্পদকে সমানভাবে বণ্টন করবে…।’

  • শ্রেণিবৈষম্য রোধ: একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি অনুভব করেছিলেন যে, সমাজে মালিক ও শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে যে অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম চলছে তাকে দীর্ঘায়িত করা যাবে না। বরং এই সংগ্রামের অবসান ঘটিয়ে শ্রেণিবৈষম্য রোধ করা দরকার।
  • সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পথ: তিনি সমাজতান্ত্রিক আদর্শের পথেই দারিদ্র্যতা, কৃষি বিষয়ক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন জমিদারতন্ত্রের বিলোপসাধন, কৃষি বিষয়ক ঋণ মুকুবের জন্য গ্রামীণ গরিব কৃষকদের বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে ঋণদানের জন্য ওকালতি করেছিলেন।
  • কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি: তাঁর মতে, গ্রাম হবে সমবায়ভিত্তিক। এর মাধ্যমে সুভাষচন্দ্র বসু সমাজের শ্রমিক-মজুর শ্রেণির বেঁচে থাকার অধিকারকে সুনিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তবে ভারতের অর্থনীতিতে কৃষি এবং কৃষকের ভূমিকা যেহেতু সর্বাধিক তাই তিনি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে আরও বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও তিনি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প স্থাপনের কথাও বলেছিলেন। ভারতীয় গ্রাম্য সমাজে যারা বসবাস করেন, তাদের কর্মসংস্থানের জন্য কুটির শিল্পের প্রয়োজন। এই কারণে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করার সঙ্গে সঙ্গে কিষান সভা গঠন করেছিলেন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ১০ জুন সারা ভারত ফরোয়ার্ড ব্লকের নাগপুর অধিবেশনে কৃষকদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা করেছিলেন।
  • স্বয়ংসম্পূর্ণতা: নেতাজি ভারতকে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য বিদেশি শক্তির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে ও দেশের শিল্প সম্পদগুলিকে শক্তিশালী করার উপর জোর দিয়েছিলেন।
  • শিল্পায়ন: তিনি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং ভারতের অর্থনীতির আধুনিকীকরণের উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত শিল্প-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিকল্পনার মাধ্যমে গড়ে তোলার পক্ষপাতী ছিলেন।
  • অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ: তিনি চেয়েছিলেন ভারতের অর্থনৈতিক সম্পদ এবং শিল্পের উপর ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণের অবসান ঘটিয়ে সমস্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলির জাতীয়করণ করা।
  • অর্থনৈতিক সমতা: নেতাজি সম্পদের বৈষম্য এবং সুবিধাবঞ্চিতদের উন্নয়নের জন্য অর্থনীতির সুষ্ঠু বণ্টনের কথাও বলেছিলেন।

পরিশেষে বলা যায়, সুভাষচন্দ্র বসুর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ধারণাটি স্বনির্ভর ভারত গঠনের লক্ষ্যের সঙ্গে জড়িত ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন যে প্রকৃত স্বাধীনতা কেবলমাত্র অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment