নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার উৎস লেখো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার উৎস লেখো

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার উৎস লেখো
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার উৎস লেখো

ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইতিহাসে এক সর্বভারতীয় জনপ্রিয় ঐতিহাসিক চরিত্রের নাম নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। তাঁর স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার উৎসগুলি নিম্নরূপ-

নেতাজির স্বাধীনতা এবং জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণার অনুপ্রেরণাসমূহ

  • প্রাথমিক প্রভাব: জীবনের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর পিতা জানকীনাথ বসুর কাছ থেকে দেশ ও রাজনীতি সম্পর্কে শিক্ষা নিয়েছিলেন। এ ছাড়া স্কুল জীবনে তাঁর প্রধান শিক্ষক বেণীমাধব দাসের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। শৈশব থেকেই তাঁর জীবনে তিনি স্বদেশী আন্দোলনকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, স্কুলে পড়াকালীন ইউরোপীয় বন্ধুদের জাতিগত ও বর্ণগত ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ তাঁর মধ্যে একটু একটু করে বিপ্লবী চেতনার সঞ্চার ঘটায়
  • রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের ধর্ম-নৈতিকতার প্রভাব: সুভাষচন্দ্রের কৈশোর জীবনে রামকৃয় ও বিবেকানন্দের ব্যাপক প্রভাব ছিল। নেতাজি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, “Vivekananda entered my life” (বিবেকানন্দ আমার জীবনে প্রবেশ করেছিল)। সুভাষচন্দ্রের জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত স্বদেশ চেতনার মূল উৎসই ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ না করে ভালোবাসার মন্ত্রে বেঁধেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তাকেই বৃহত্তর ক্ষেত্রে রূপদান করেছিলেন নেতাজি। বিভিন্ন জাতি, বিভিন্ন সম্প্রদায়, বিভিন্ন ধর্ম, ভাষার মধ্যে পার্থক্য থাকলেও ভারতবর্ষের আত্মা এক। এই শিক্ষাটি নেতাজি তাঁর কাছ থেকেই নিয়েছেন।
  • অরবিন্দ ঘোষ, হেগেলের তত্ত্ব ও বৈষ্ণব দর্শনের প্রভাব: তরুণ বয়সে সুভাষচন্দ্র ভারতীয় দর্শন অরবিন্দের আধ্যাত্মিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। হেগেলের দ্বন্দ্বমূলক ধারণা থেকেও তিনি অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। আবার বৈষ্ণব দর্শন অধ্যয়ন করে প্রেমের আদর্শকে গ্রহণ করেছিলেন।
  • পাশ্চাত্যের শিক্ষা ও নেতৃত্বকারী ভূমিকা: প্রথম জীবনে কলকাতায় পড়াশুনা, পরবর্তীকালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন তাঁকে বিভিন্ন জানা-অজানা জ্ঞানে সমৃদ্ধ করে এবং জাতীয়তাবাদী আদর্শ সম্পর্কে তিনি অনেক বেশি জ্ঞান অর্জন করেন। পরবর্তীকালে জাতীয় কংগ্রেসের নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ, আজাদ হিন্দ ফৌজ (INA) গঠনের মাধ্যমে এক জনপ্রিয় বিশ্বাসযোগ্য নেতায় পরিণত হন এবং ভারতকে বহিঃশত্রুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে স্বাধীনতা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন।
  • বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্যলাভ: দেশ-বিদেশের সমকালীন বহু বিশিষ্ট মনীষী তথা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সংস্পর্শে এসেছিলেন তিনি। বিংশ শতকের গোড়ার দিকে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তাঁর মনে গভীর প্রভাব ফেলে। বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের লেখায় বাংলায় জাতীয়তাবাদের যে প্রভাব ঘটেছিল তা সুভাষের নজরে আসে। বিশ্ববিখ্যাত মনীষী রোমাঁ রোঁলা, এইচ জি ওয়েলস, বার্ট্রান্ড রাসেল, ডি ভ্যালেরা, জে বি এস হ্যালডেন প্রমুখদের সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন। ভারতীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মহাত্মা গান্ধি, জওহরলাল নেহরু, সূর্য সেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, জগদীশচন্দ্র বসু, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখদের গুরুত্ব তাঁর উপর অপরিসীম। তাঁদের মতামত নিয়ে বা কখনো তাঁদের সাথে একত্রে তিনি কাজ করেছিলেন।

উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় একযোগে বিবিধ বিষয় নেতাজির স্বাধীনতা ও জাতীয়তাবাদী ধারণার উৎসরূপে কাজ করেছিল।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment