নুন কবিতার বিষয়বস্তু
নুন কবিতার বিষয়বস্তু
কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় আমাদের সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের অভাব-অনটন, অর্ধাহার, অনাহারপূর্ণ জীবনযন্ত্রণা এবং তাদের জীবনযাপনের ন্যূনতম উপকরণের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়েছে। কবিতায় কবি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি এক কথকের মুখ দিয়ে অভাব-অভিযোগ, চাওয়া-পাওয়ার কথা তুলে ধরেছেন। কথক কবিতার শুরুতেই জানিয়েছেন যে, তারা অর্থাৎ নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষেরা খুব অল্পে খুশি। তাদের চাহিদা খুবই সীমিত। এই দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষদের চাহিদা এতটাই সীমিত শুধুমাত্র ভাতকাপড়ে অর্থাৎ খাদ্য, বস্ত্র পেলেই তাদের চাহিদা মিটে যায়। তাই তারা অহেতুক দুঃখ করে দিন অতিবাহিত করে না। এদের কঠিন অসুখ-বিসুখ হলে ধারদেনা করেও চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে। এভাবে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে দিন চলে যায়। এই অভাব-অনটন, দুঃখ যন্ত্রণাপূর্ণ জীবন থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে এরা রাত্রিতে ‘দু-ভাই মিলে’ অর্থাৎ বাপ-ব্যাটা দুজনে মিলে গাঁজার নেশায় বুঁদ হয়ে ওঠে।
নিম্নবিত্ত, অনাহার ক্লিষ্ট মানুষগুলোর প্রতিদিন ভাতের হাঁড়ি চড়ে না। কারণ অর্থের অভাবে সবদিন বাজার করতে পারে না। আবার যেদিন এদের হাতে কিছু আসে সেইদিন মাত্রাছাড়া, বেহিসাবির মতো বাজারে কেনাকাটা করে আনে এবং সখের বশবর্তী হয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করার বাসনায় বাড়ি ফেরার পথে গোলাপচারা কিনে আনে। কিন্তু তার পরের মুহূর্তে তাদের মনে উঁকি দেয় সংশয়। তারা চিন্তা করে যেখানে নিজেদেরই মাথা গোঁজার সুনির্দিষ্ট স্থান নেই, সেখানে আবার সখের গোলাপগাছ কোথায় পুঁতবে। কোনোক্রমে যদিও বা কোনো স্থান নির্বাচন করে পোঁতা হয় কিন্তু সেই গাছে ফুল ফুটবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাদের বেঁচে থাকার মতো গোলাপচারার বেঁচে থাকা এবং সেই গাছে ফুল ফোটা সংশয়াচ্ছন্ন। তাই এসব অনিশ্চয়তা, সমস্যা ভুলে থাকার জন্য তারা গাঁজার নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।
এই হতদরিদ্র মানুষগুলোর চাওয়া বেশি নয়, স্বল্প প্রাপ্তিতেই এরা খুশি ও সুখী হয়ে ওঠে। তাই দুঃখ-কষ্ট ভুলে হেসে-খেলে এরা জীবন অতিবাহিত করে। তবে মাঝে মাঝে এদের এমন অবস্থা হয় যে দুবেলা-দুমুঠো খাদ্যের সংস্থানও হয়ে ওঠে না। সারাদিন পরিশ্রম করে গভীররাতে বাড়ি ফিরে এসে ক্ষুধার জ্বালায় ঠান্ডা ভাত খেতে বসে। কিন্তু ভাতের সঙ্গে সামান্য নুনটুকুও জোটে না অর্থাৎ খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণটুকুও পায় না, তখন এদের মাথায় রাগ চড়ে যায়-এরা ক্ষুব্ধ ও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। এদের রাগ এতটাই চরমসীমায় পৌঁছায় যে, বাবা-ছেলের পারিবারিক কলহ শুরু হয়ে যায় এবং তার ফলে সারাপাড়া অতিষ্ট হয়ে ওঠে। এই রাগ বা ঝগড়া চিৎকার-চ্যাঁচামেচির জন্য এদের কোনো অনুতাপ বা চক্ষুলজ্জা থাকে না-ক্ষুধার জ্বালায় এবং বাঁচার ন্যূনতম প্রয়োজনের অভাবে এদের লজ্জা সম্ভ্রমবোধ লোপ পায়, হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে এই হতদরিদ্র, অনাহার, অর্ধাহারক্লিষ্ট মানুষগুলো শুকনো ভাতের সঙ্গে সামান্য লবণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে; অর্থাৎ জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু প্রত্যাশা করে।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর