নুন কবিতার প্রশ্ন উত্তর | Class 11 Second Semester WBCHSE
১। ‘নুন’ কবিতাটি কোন্ কবির লেখা, কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? এই কবির একটি বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থের নাম লেখো। ১+১
‘নুন’ কবিতাটি কবি জয় গোস্বামীর লেখা ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
কবি জয় গোস্বামীর একটি কাব্যগ্রন্থ হল ‘যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল’।
২। কবি জয় গোস্বামীর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থ এবং প্রাপ্ত দুটি পুরস্কারের নাম উল্লেখ করো।
কবি জয় গোস্বামীর লেখা দুটি কাব্যগ্রন্থ হল-‘ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ’ এবং ‘পাগলী তোমার সঙ্গে’। কবি জয় গোস্বামীর প্রাপ্ত দুটি পুরস্কার হল- ‘বঙ্গবিভূষণ’ এবং ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার’।
৩। “আমরা তো অল্পে খুশি; ‘-অংশটির উৎস নির্ণয় করো। এখানে ‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? ১+১
আলোচ্য পঙ্ক্তিটি আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুম ভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে। এখানে ‘আমরা’ বলতে কবিতার কথক ও তার পরিবারের মানুষজনের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কবিতার কথক ও তার পরিবারের মানুষজন হল নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, অর্ধাহার, অনাহারক্লিষ্ট মানুষের প্রতিনিধি।
৪। ‘নুন’ কবিতায় ‘নুন’-কে কবি কীসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন? ‘নুন’ কবিতায় কবি কাদের কথা তুলে ধরেছেন? ১+১
‘নুন’ কবিতায় ‘নুন’-কে কবি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম অপরিহার্যতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
‘নুন’ কবিতায় কবি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন।
৫। “কী হবে দুঃখ করে?”-অংশটির বক্তা কে? বক্তা কেন দুঃখ করতে চান না? ১+১
আলোচ্য অংশটির বক্তা নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক।
কবিতার কথক জানেন, তারা নিম্নবিত্ত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। তাদের জীবনে এমনও কোনো কোনো দিন যায় যেদিন খাওয়া জোটে না। তাদের বেঁচে থাকার মৌলিক চাহিদা খাদ্য- বস্ত্র-বাসস্থানেরই ঠিক নেই। এরা জানে সমাজ তথা রাষ্ট্র তাদের কথা চিন্তা করে না। তাই তারা তাদের জীবনের অপ্রাপ্তির কথা ভেবে দুঃখ করতে চান।
*৬। “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।”-পঙ্ক্তিটি কোন্ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে? ‘সাধারণ ভাতকাপড়ে’ দিন চলে যাওয়ার কারণ কী? ১+১
আলোচ্য পঙ্ক্তিটি কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষেরা ভাতকাপড় অর্থাৎ ন্যূনতম খাদ্য-বস্ত্র নিয়ে জীবন অতিবাহিত করে। এর মধ্য দিয়েই তারা সব চাহিদা পূরণ করে। বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু মিটলেই তারা হেসেখেলে জীবন কাটিয়ে দেয়। এ কথা এখানে ব্যক্ত করা হয়েছে।
৭। “চলে যায় দিন আমাদের…”-অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কাদের কীভাবে দিন চলে যায়? ১+১
আলোচ্য পঙ্ক্তিটি জীবনানন্দ দাশ উত্তর আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুমভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
এখানে নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের জীবন অতিবাহিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই গরিব মানুষগুলি খেয়ে, না-খেয়ে অসুখ ও ধারদেনা করে তাদের দিন কাটিয়ে নেয়।
৮। “… টান দিই গঞ্জিকাতে।”-গঞ্জিকা কী? কারা, কখন এবং কেন গঞ্জিকাতে টান দেয়? ১+১
‘গঞ্জিকা’ শব্দের অর্থ গাঁজা। এই গঞ্জিকা একপ্রকার মাদক দ্রব্য, নেশার উপকরণ।
নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষগুলি, সামাজিক সম্ভ্রমবোধ ভুলে বাবা- ছেলে একসঙ্গে সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রাত্রিবেলা গঞ্জিকাতে টান দিয়ে সাময়িক আনন্দ লাভ করার চেষ্টা করে।
৯। “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে…”-কার লেখা, কোন্ কবিতার অংশ? দু-ভাই বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে এবং দু-ভাই মিলে রাত্তিরে কী করে? ১+১
আলোচ্য পঙ্ক্তিটি আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে সংগৃহীত।
দু-ভাই হল দুই সহোদর। কিন্তু কবিতায় দু-ভাই বলতে হতদরিদ্র মানুষদের, এমনকি বাবা-ছেলের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।
এই হতদরিদ্র, অর্ধাহারী, অনাহারী মানুষগুলি তাদের নিজেদের জীবনযন্ত্রণা ভুলতে গঞ্জিকা সেবন করে অর্থাৎ গাঁজার নেশায় আসক্ত হয়ে ওঠে।
১০। “সব দিন হয় না বাজার”- ‘বাজার’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সব দিন বাজার না হওয়ার কারণ কী? ১+১
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী ‘বাজার’ অর্থে প্রতিদিনের জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কথা বলেছেন। নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষগুলি অভাব, আর্থিক অনটনের কারণে প্রতিদিন জীবনযাপনের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারে না।
১১। “…হলে হয় মাত্রাছাড়া”-‘মাত্রাছাড়া’ কী হয়? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য লেখো। ১+১
‘মাত্রাছাড়া’ শব্দের অর্থ সীমাহীন, অতিরিক্ত। নিম্নবিত্ত গরিব মানুষগুলির হাতে যদি কোনোদিন কিছু অর্থ চলে আসে তাহলে তারা মাত্রাছাড়া বাজার করে অর্থাৎ কেনাকাটা করে। কবি জয় গোস্বামী ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষগুলির বেহিসাবি ও অসংযমী জীবনযাত্রার কথা বলতে চেয়েছেন। অর্থের অভাবে এই মানুষগুলি প্রতিদিন বাজার করতে পারে না, শখ-আহ্লাদ পূরণ অতৃপ্ত থেকে যায়। তাই যেদিন বেশি রোজগার হয়, সেদিন চিন্তাভাবনাহীন, বেহিসাবি খরচ করে নিজেদের স্বপ্নপূরণের চেষ্টা করে।
১২। “বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা”- ‘গোলাপচারা’ কীসের প্রতীক? কেন গোলাপচারা কিনে আনে? ১+১
কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় ‘গোলাপচারা’ নিম্নবিত্ত মানুষের শখ, শৌখিনতার স্বপ্ন ও সৌন্দর্য অনুভূতির প্রতীক। শখ, শৌখিনতা, সৌন্দর্যপ্রবিলাস মানুষের সহজাত প্রবণতা। নিম্নবিত্ত মানুষগুলি তাই শত অভাবের মধ্যে নিজেদের জীবনযন্ত্রণা ভুলে শখ, স্বপ্নপূরণের জন্য গোলাপচারা কিনে আনে।
১৩। “কিন্তু পুঁতব কোথায়?”-কার লেখা, কোন্ কবিতার অংশ? এই মন্তব্যের তাৎপর্য লেখো। ১+১
আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর লেখা ‘নুন’ কবিতার অংশ এটি। হতদরিদ্র গরিব মানুষগুলির খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো মৌলিক চাহিদাগুলিই ঠিকমতো পূরণ হয় না। তাদের নিজেদের সামান্য মাথা গোঁজার জায়গা থাকে বা কখনও তাও থাকে না-এর মধ্যে গোলাপচারা পোঁতা অর্থাৎ স্বপ্ন, শখ, আহ্লাদ পূরণের কোনো স্থান থাকে না। সুতরাং, এই অনিশ্চয়তার মধ্যে গোলাপচারা কিনে এনে পোঁতা নিছকই বিলাসিতা মাত্র।
১৪। “ফুল কি হবেই তাতে?”-কোন্ ফুলের কথা বলা হয়েছে? এরকম সংশয়ের কথা কেন বলা হয়েছে? ১+১
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী কথকের মুখ দিয়ে গোলাপ ফুলের কথা বলেছেন। গোলাপ ফুল বা গোলাপ গাছ কবিতায় শখ, শৌখিনতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কারণ হতদরিদ্র গরিব মানুষগুলির প্রতিদিন খাদ্য জোটে না। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করে। সেখানে তারা কীভাবে গোলাপ গাছের রক্ষণাবেক্ষণ করবে-এই সংশয়ের কথা বলা হয়েছে।
১৫। “সে অনেক পরের কথা।”-‘পরের কথা’ কী? অংশটির তাৎপর্য লেখো। ১+১
‘নুন’ কবিতায় কথক শখপূরণের জন্য বাজার থেকে যে গোলাপচারা কিনে এনেছিলেন, সেই গাছ কোথায় পোঁতা হবে বা পোঁতার পর আদৌ ফুল ফুটবে কিনা তা জানা নেই-এটি হল পরের কথা।
নিম্নবিত্ত গরিব মানুষগুলি শখ, স্বপ্নপূরণের জন্য চেষ্টা করে। কিন্তু তা সার্থকতা লাভ করবে কিনা তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। এই অনিশ্চয়তা থেকেই মন্তব্যটি করা হয়েছে।
১৬। “আমরা তো এতেই খুশি; বলো আর অধিক কে চায়?”-‘আমরা’ কারা এবং তারা কীজন্য খুশি? তাদের অধিক না-চাওয়ার কারণ কী? ১+১
‘নুন’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষের কথা বলা হয়েছে। দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলি হেসেখেলে কোনোরকমে দিন কেটে গেলেই খুশি থাকে। হতদরিদ্র মানুষগুলি অর্ধাহারে অনাহারে থেকেও কোনোক্রমে হেসেখেলে দিন অতিবাহিত করে। দু-মুঠো খাদ্য ও তার ন্যূনতম উপকরণ পেয়েই তারা খুশি থাকে। এর বেশি কিছু তারা সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে আশা করে না।
১৭। “হেসে খেলে, কষ্ট করে, আমাদের দিন চলে যায়”-আমাদের বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? কথকের এ কথা বলার কারণ কী? ১+১
‘নুন’ কবিতায় ‘আমাদের’ বলতে কবিতার কথক ও তার সমাজের মানুষজনের অর্থাৎ নিম্নবিত্ত গরিব শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে।
কবিতার কথক অর্থাৎ হতদরিদ্র মানুষগুলির অভাবের তাড়নায় প্রতিদিন বাজার করা বা খাদ্য জোগাড় করা সম্ভব হয় না। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ প্রবাদটি এদের জীবনে চরম সত্য। অভাব তাদের নিত্যসঙ্গী। এই পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিয়ে কষ্টকে সহ্য করে হাসিমুখে দিন কাটিয়ে দেয়। একথাই এখানে কথক বলতে চেয়েছেন।
১৮। “মাঝে মাঝে চলেও না দিন”,-অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কাদের মাঝে মাঝে দিন চলে না? মাঝে মাঝে দিন না চলার কারণ কী?
আলোচ্য অংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুমভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘নুন’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে ।
কবিতার কথক অর্থাৎ নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষগুলির মাঝে মাঝে দিন চলে না অর্থাৎ দিন অতিবাহিত করা কষ্টকর হয়ে ওঠে।
এই হতদরিদ্র গরিব শ্রমজীবী মানুষগুলি মাঝে মাঝে কাজ পায় না, অর্থের অভাব দেখা যায়। তখন তারা জীবন কাটানোর জন্য খাদ্য ও খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণটুকুও জোগাড় করতে পারে না। তাই তাদের কখনো-কখনো অর্ধাহারে বা অনাহারেও দিন কাটাতে হয়। এ প্রসঙ্গে কথক আলোচ্য উক্তিটি বলেছেন।
১৯। “বাড়ি ফিরি দুপুররাতে”- ‘দুপুররাত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে এবং কে দুপুররাতে বাড়ি ফেরে? এই দুপুররাতে বাড়ি ফেরার কারণ কী? ১+১
‘দুপুররাত’ বলতে মধ্যরাত্রি বা গভীর রাতের কথা বোঝানো হয়েছে। হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক দুপুররাতে বাড়ি ফেরেন।
এই নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের জীবনে অভাব নিত্যসঙ্গী। কাজ না করলে তাদের ন্যূনতম খাদ্যের সংস্থান হয় না। জীবনধারণের জন্য এরা কঠোর পরিশ্রম করে। তাই সামান্য অর্থ রোজগারের আশায় কঠোর পরিশ্রম করে মাঝরাতে বা গভীর রাতে ক্লান্ত- পরিশ্রান্ত হয়ে এরা বাড়ি ফেরে।
২০। “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়,”-কার খেতে বসে রাগ চড়ে যায়? এই রাগ চড়ে যাওয়ার কারণ কী? ১+১
সমাজের নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথকের সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে মাঝরাতে খেতে বসে রাগ চড়ে যায়।
রাগ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু দীর্ঘ অপ্রাপ্তির ফলে সেই রাগের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে। নিম্নবিত্ত মানুষগুলি রাতে খেতে বসে যখন খাদ্য ও খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণটুকু পায় না, তখন তাদের সেই রাগের চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
২১। “নুন নেই ঠান্ডা ভাতে”-পঙ্ক্তিটি কার লেখা, কোন্ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে? ‘নুন’ ও ‘ঠান্ডা ভাত’ কবিতায় কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে? ১+১
পঙ্ক্তিটি আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে গৃহীত হয়েছে।
‘নুন’ হল খাদ্যের একটি ন্যূনতম উপকরণ আর ‘ঠান্ডা ভাত’ হল বাসি ভাত বা পান্তা ভাত। কিন্তু কবিতায় ‘নুন’ শব্দটি মানুষের জীবনধারণের ন্যূনতম অপরিহার্যতার প্রতীক এবং ‘ঠান্ডা ভাত’ দরিদ্র মানুষের প্রতিদিন রান্না না-হওয়া, বাসি খাদ্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
২২। “রাগ চড়ে মাথায় আমার, আমি তার মাথায় চড়ি”-এখানে ‘আমি’ বা ‘আমার’ বলতে কার কথা বলা হয়েছে? কার মাথায়, কেন, কী চড়ে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য কী?
এখানে ‘আমি’ বা ‘আমরা’ বলতে নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথকের কথা বলা হয়েছে। শ্রমজীবী গরিব মানুষের প্রতিনিধি কথক রাতের বেলা খেতে বসে খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণটুকু না পেয়ে সংযম হারিয়ে অধিক রাগের বহিঃপ্রকাশ করেন অর্থাৎ রাগ তার মাথায় চড়ে। হতদরিদ্র মানুষগুলি দু-বেলা দু-মুঠো পেটভরে না খেতে পেয়ে এবং খাবারের ন্যূনতম উপকরণটুকুর অভাবে অসংযমী হয়ে চিৎকার চ্যাঁচামেচি করে পাড়া মাতিয়ে তোলে।
২৩। “বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি”-বাপব্যাটা কে কে? পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে কী বলা হয়েছে, তা আলোচনা করো। ১+১
‘বাপব্যাটা’ হল বাবা-ছেলে। কবিতায় বাপব্যাটা হল কথকের বাবা ও কথক। শ্রমজীবী দরিদ্র মানুষগুলির সারাদিন পরিশ্রমের শেষে বাড়ি ফিরে দু-মুঠো ভাত ও সামান্য নুনের অভাবে মেজাজ চড়ে যায়। এর ফলে বাবা-ছেলের মধ্যে সম্পর্ক, মর্যাদা, সম্মানবোধ লোপ পায়। আলোচ্য পঙ্ক্তিতে এ কথাই বলা হয়েছে।
২৪। “কবি তো কার তাতে কী?”- কী করার কথা বলা হয়েছে? পঙ্ক্তিটির মাধ্যমে কবি কীসের ইঙ্গিত করছেন? ১+১
আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় রাত্রিবেলা কথক ও তাঁর বাবার মধ্যে হওয়া অশান্তি চিৎকারে সারা পাড়া মাথায় করার কথা বলা হয়েছে।
জয় গোস্বামী রচিত ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত গরিব মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক রাতে খেতে বসে ঠান্ডা ভাতের সঙ্গে ন্যূনতম খাদ্য উপকরণ না পেয়ে ক্রোধের অসংযমী বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। বাবা-ছেলের সংযমহীন পারিবারিক অশান্তি, চিৎকার চ্যাঁচামেচির ফলে সারা পাড়ার শান্তি বিঘ্নিত হয়। আলোচ্য পঙ্ক্তির মাধ্যমে কবি এ কথা ইঙ্গিত করছেন।
২৫। “আমরা তো সামান্য লোক”- অংশটির উৎস নির্ণয় করে ‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে লেখো। ‘সামান্য লোক’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
আলোচ্য অংশটি কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতায় ‘আমরা’ বলতে নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে।
‘সামান্য লোক’ বলতে কবি সমাজের একেবারে নীচুতলায় বসবাসকারী হতদ্ররিদ্র, সর্বহারা, শ্রমজীবী মানুষদেরকে বুঝিয়েছেন। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’-প্রবাদ এদের জীবনে চরম সত্য আকারে প্রকাশিত। অভাব-অর্ধাহার-অনাহার এদের জীবনসঙ্গী। সুশীল সমাজ তথা রাষ্ট্র এদের কথা চিন্তা করে না, তাচ্ছিল্য করে দূরে সরিয়ে রাখে।
২৬। “আমাদের শুকনো ভাতে…”-‘আমাদের’ বলতে কবি কাদের কথা বুঝিয়েছেন? ‘শুকনো ভাত’-এই শব্দগুলি কীসের ইঙ্গিত বহন করে? ১+১
‘আমাদের’ বলতে কবি জয় গোস্বামী ‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত, দরিদ্র, সর্বহারা মানুষদের কথা বুঝিয়েছেন।
‘শুকনো ভাত’ হল তরকারি বা ব্যঞ্জন ছাড়া শুধুমাত্র নীরস ভাত। নিম্নবিত্ত, দরিদ্র মানুষের সীমাহীন অভাবের ইঙ্গিত বহন করে ‘শুকনো ভাত’ শব্দগুলি।
২৭। “আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”-কারা, কাদের কাছে এই আবেদন করেছে? এই দাবি করার কারণ কী? ১+১
‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষ আমাদের সুশীল সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে এই আবেদন করেছে। পাঠ
গরিব, সর্বহারা, শ্রমজীবী মানুষ নিত্য অভাব, অর্ধাহার, অনাহারকে সঙ্গী করে জীবন অতিবাহিত করে। সামান্য দু-মুঠো ভাত ও ভাতের ন্যূনতম উপকরণটুকু থেকেও তারা বঞ্চিত। এই অভাব জীবনযন্ত্রণা সহ্য করতে করতে একদিন ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তারা শিক্ষিত সমাজ, রাষ্ট্রের কাছে নিজেদের প্রত্যাশা পূরণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
২৮। ‘নুন’ কবিতায় নুন কীসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা আলোচনা করো।
লবণ বা নুন সামান্য খাদ্য উপকরণ। নুন ছাড়া খাদ্য বা তরকারিতে স্বাদ হয় না, খেয়ে তৃপ্তি হয় না। কবিতায় হতদরিদ্র, সর্বহারা, শ্রমজীবী মানুষগুলি সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে খেতে বসে একমুঠো বাসি ভাত পেলেও, ভাতের ন্যূনতম উপকরণ পায় না। অর্থাৎ এই মানুষগুলির জীবনধারণের ন্যূনতম অপরিহার্যতার প্রতীক হিসেবে ‘নুন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
২৯। ‘নুন’ কবিতায় সমাজের কোন্ শ্রেণির মানুষের জীবনচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে? কবিতার শেষ চরণে নুন শব্দের পরিবর্তে ‘লবণ’ শব্দটি ব্যবহারের তাৎপর্য কী? ১+১
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী সমাজের নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের জীবনচিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।
কবিতার শেষ চরণে কবি ‘নুন’ শব্দের পরিবর্তে ‘লবণ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন কারণ তিনি শব্দটিকে শুদ্ধ করে ভদ্র সুশীল সমাজের কাছে নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের জীবনের দাবি জানিয়েছেন।
৩০। ‘নুন’ কবিতাটি কার লেখা, কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত? ‘নুন’ কবিতায় নুন বা লবণ-ই কি মুখ্য বিষয়? আলোচনা করো। ১+১
‘নুন’ কবিতাটি জীবনানন্দ দাশ উত্তর আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘ভুতুমভগবান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
‘নুন’ কবিতায় নুন বা লবণ গৌণ বিষয় অর্থাৎ উপলক্ষ্য মাত্র। আসলে নুন বা লবণ শব্দের মাধ্যমে হতদরিদ্র সর্বহারা মানুষের জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
নুন কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর / একাদশ শ্রেণি
২। “কী হবে দুঃখ করে?”- কী নিয়ে দুঃখ না করার কথা বলা হয়েছে? এই মন্তব্যের কারণ কী? ১+২
‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষগুলি সামান্য মোটা ভাত আর মোটা কাপড় পেলেই খুশি। এর বেশি তারা আর কিছু আশাও করে না। এই সর্বহারা গরিব মানুষগুলির জীবনে অনেক কিছুরই অভাব রয়েছে। সেই সমস্ত অপ্রাপ্তিগুলি চিন্তা করে তারা দুঃখ করে না।
মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান হতদরিদ্র মানুষগুলি পায় না। অভাব, অপ্রাপ্তি, অনাহারকে নিত্যসঙ্গী করে এরা বেঁচে থাকে। সামান্য ভাত কাপড়ের বেশি এরা কিছু আশা করে না। তাই নিতান্তই বাধ্য হয়ে সামান্য উপকরণের মধ্যে থেকেও জীবনযন্ত্রণা ভুলে আনন্দে থাকার চেষ্টা করে।
৩। “আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে।”-‘নুন’ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষের দিনযাপনের যে চিত্র ধরা পড়েছে, তা আলোচনা করো।
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন এবং তীব্র জীবনযন্ত্রণার ছবি
ফুটিয়ে তুলেছেন। স্বাধীনতার পর সমাজের অন্যান্যদের মতো নিম্নবিত্ত মানুষও সুস্থ জীবনধারণের স্বপ্ন দেখেছিল, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জীবন বদলের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। অভাব, অনাহার, অর্ধাহারকে নিত্যসঙ্গী করে আজও তারা জীবন অতিবাহিত করে চলেছে। বিলাসব্যসন, শখ, শৌখিনতার স্বপ্ন দেখলেও তা সার্থকতা লাভ করে না। তাই বেঁচে থাকার ন্যূনতম উপকরণ ভাত কাপড়েই এরা খুশি হয়ে জীবন অতিবাহিত করে থাকে।
৪। “রাত্তিরে দু-ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে”- অংশটির তাৎপর্য লেখো।
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের জীবনযন্ত্রণার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। নিম্নবিত্ত গরিব শ্রমজীবী মানুষগুলি শখ-শৌখিনতা-বিলাসব্যসনের স্বপ্ন দেখলেও, তা বাস্তবায়িত হয় না। মোটা ভাত মোটা কাপড় আর একটু মাথা গোঁজার জায়গা পেলেই এরা খুশি হয়ে যায়। অপ্রাপ্তি, অনাহার প্রভৃতি নিত্য জীবনযন্ত্রণাকে দূরে সরিয়ে রেখে এরা সামাজিক এবং পারিবারিক সম্ভ্রম ভুলে গাঁজার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
৫। “সব দিন হয় না বাজার; হলে হয় মাত্রাছাড়া”- ‘মাত্রাছাড়া’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সব দিন বাজার না হওয়ার কারণ কী? ১+২
‘মাত্রাছাড়া’ শব্দের অর্থ প্রয়োজন অতিরিক্ত। ‘নুন’ কবিতায় ‘মাত্রাছাড়া’ শব্দটি ব্যবহার করে কবি নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষদের বেহিসাবি অসংযমী জীবনযাপনের কথা বোঝাতে চেয়েছেন।
নিম্নবিত্ত গরিব শ্রমজীবী মানুষগুলির জীবনে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাদের জীবনে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ প্রবাদ চরম সত্য। তারা অর্থের অভাবে নিত্য জীবনধারণের ন্যূনতম প্রয়োজনীয় উপকরণগুলিও সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়। তাই অনেক দিনই তাদের অর্ধাহার বা অনাহারে দিন কাটাতে হয় কিন্তু যেদিন সামান্য কিছু রোজগার করে, সেদিন তারা বেহিসাবি, অসংযমীভাবে কোনো কিছু চিন্তা না করে বাজার থেকে প্রয়োজন অতিরিক্ত জিনিস কেনে-শখ, শৌখিনতা পূরণের চেষ্টা করে। এ কথাই কবি এখানে বলতে চেয়েছেন।
৬। “বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা”-বক্তা কে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য লেখো।
আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতা থেকে সংগৃহীত আলোচ্য পঙ্ক্তিটির বক্তা হল নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র মানুষের প্রতিনিধি কবিতার কথক। নিম্নবিত্ত গরিব শ্রমজীবী মানুষগুলির জীবনে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’-এর মতো সীমাহীন অভাবের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত হয়। জীবনধারণের জন্য মোটা ভাত কাপড়ের বেশি আশা না করে হেসেখেলে দিন কাটিয়ে দেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও এদের অন্তরের সুপ্ত স্বপ্ন, সৌন্দর্যের অনুভূতিগুলি মাঝে মাঝে প্রকাশিত হয়। কারণ তাদের অভাব-অনটন চরম সত্য হলেও তারা তাদের শখ-শৌখিনতা বা সৌন্দর্যের অনুভূতিগুলির মৃত্যু ঘটাতে পারে না। কবিতায় গোলাপচারা কেনার মধ্য দিয়ে কবি নিম্নবিত্ত মানুষের হৃদয়াঅনুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
৭। “কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে?/সে অনেক পরের * কথা।”-কী পোঁতা বা ফুল হওয়ার কথা বলা হয়েছে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য লেখো। ১+২
কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় কথক বাজার থেকে গোলাপচারা কিনে কোথায় পুঁতবেন বা সেই গোলাপ গাছে ফুল হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পঙ্ক্তিটিতে।
হতদরিদ্র সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষগুলি বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান পূরণ করতে পারে না। তাদের নিজেদের কোনোক্রমে মাথা গোঁজার জায়গাটুকু ছাড়া শখ-আহ্লাদ, সৌন্দর্য অনুভূতি পূরণের কোনো জায়গা থাকে না। আবার যদি শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্য কোনোক্রমে গাছ পৌঁতে, তাকে সঠিক পরিচর্যা করার মতো সংগতি থাকে না। তাই ওই শখের গাছে ফুল ফুটে তাদের স্বপ্নপূরণ হবে এমন নিশ্চয়তা থাকে না। জীবনযন্ত্রণায় ক্ষতবিক্ষত নিম্নবিত্ত মানুষগুলির অনিশ্চয়তাপূর্ণ জীবনের করুণ কাহিনি ফুটে উঠেছে পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে।
৮। “আমরা তো এতেই খুশি; বলো আর অধিক কে চায়?”-‘আমরা’ বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? ‘এতেই খুশি’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তাদের অধিক না চাওয়ার কারণ কী? ১+১+১
আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় ‘আমরা’ বলতে নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষের কথা বলা হয়েছে।
‘এতেই খুশি’ বলতে মোটা ভাত কাপড়ের কথা অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদা খাদ্য ও বস্ত্রের কথা বলা হয়েছে।
হতদরিদ্র সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষগুলির অভাব-অনটন-অনাহার নিত্যসঙ্গী। দু-মুঠো ভাত ও সামান্য কাপড় পেলেই তারা খুশি হয়ে হেসেখেলে জীবন কাটিয়ে দেয়। তারা নিজেদের আর্থসামাজিক অবস্থানকে মেনে নিয়ে এর বেশি কিছু আশা করে না। নিম্নবিত্ত মানুষের ন্যূনতম চাহিদার কথা আলোচ্য পঙ্ক্তিতে চিত্রিত করেছেন কবি।
৯। “বাড়ি ফিরি দুপুররাতে”- ‘দুপুররাত’ বলতে কী বলা হয়েছে এবং কে দুপুররাতে বাড়ি ফেরে? এই দুপুররাতে বাড়ি ফেরার কারণ কী-আলোচনা করো। ১+২
‘দুপুররাত’ বলতে মাঝরাত বা গভীর রাতের কথা বলা হয়েছে এবং নিম্নবিত্ত, হতদরিদ্র, শ্রমজীবী শ্রেণির প্রতিনিধি ‘নুন’ কবিতার কথক দুপুররাতে বাড়ি ফেরেন।
এই হতদরিদ্র সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষগুলির জীবনে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। কাজ না করলে পেট চলে না এদের। তাই এই মানুষগুলি উপার্জনের জন্য সারাদিন অক্লান্ত, অমানুষিক পরিশ্রম করে গভীর রাতে বাড়িতে ফেরে। হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের কঠোর জীবনসংগ্রামের কথা অংশটির মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে।
১০। “খেতে বসে রাগ চড়ে যায়,”- ‘রাগ চড়ে যায়’-এর অর্থ কী? কেন রাগ চড়ে যায়? ১+২
রাগ চড়ে যাওয়া হল রাগের তীব্র বহিঃপ্রকাশ। অর্থাৎ অসংযমীভাবে বা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটানো অর্থে অংশটি ব্যবহৃত হয়েছে।
সর্বহারা হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষগুলি সারাদিন সামান্য উপার্জনের আশায় অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানসিক ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে অনেক রাতে বাড়ি ফিরে এসে খেতে বসে। কিন্তু তাদের ভাগ্য এবং আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, খাদ্য হিসেবে সামান্য বাসি খাবার জুটলেও ভাতের সঙ্গে ন্যূনতম উপকরণ থাকে না। তখন তারা রেগে যায় এবং রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
১১। “আমি তার মাথায় চড়ি”-কে, কার মাথায় চড়ে? পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য লেখো। ১+২
আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় দরিদ্র, সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি কথক সারাদিনের শেষে রাতে খেতে বসে ভাতের সঙ্গে নুন না পেয়ে চরম রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটান-কবিতায় একেই রাগের মাথায় চড়া বলা হয়েছে।
অভাব-অনটন, অর্ধাহার-অনাহারে জর্জরিত হতদরিদ্র মানুষগুলির বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য ও খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণগুলিই একমাত্র চাহিদা। অনেক পরিশ্রম ও মানিয়ে নেওয়ার পর এই চাহিদা থেকে বঞ্চিত হলে তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তীব্র রাগের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এই চরম বাস্তবতা অংশটিতে ফুটে উঠেছে।
১২। “বাপব্যাটা দু-ভাই মিলে সারাপাড়া মাথায় করি”- ‘বাপব্যাটা’কে দু-ভাই বলা হয়েছে কেন? কথক কেন সারা পাড়া মাথায় করেন? ১+২
‘বাপব্যাটা’ হল বাবা ও ছেলে। বাবা-ছেলের সম্পর্কের মধ্যে থাকে সম্মান, সম্ভ্রমবোধ। কিন্তু নিম্নবিত্ত মানুষগুলির সাংসারিক অভাব
এতটাই প্রকট যে, সেখানে রাগের মাথায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পারিবারিক সম্ভ্রমবোধ নষ্ট হয়ে বাবা-ছেলের সম্পর্কও লঘু, তুচ্ছ হয়ে যায়। তাই বাপব্যাটাকে দু-ভাই বলেছেন কবি।
কথক দরিদ্র, সর্বহারা, শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি। এই মানুষেরা দুঃখ- অভাবকে সঙ্গী করে জীবন অতিবাহিত করে। এই জীবনযন্ত্রণাকে তারা হাসিমুখে মেনে নেয়। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন তারা সামান্য খাদ্য ও খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণ থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তাদের রাগের মাত্রাছাড়া বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ফলে পাড়ার পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে।
১৩। “আমরা তো সামান্য লোক”-‘সামান্য লোক’ কারা? তাদের ‘সামান্য লোক’ বলা হয়েছে কেন? ১+২
‘নুন’ কবিতায় কবি জয় গোস্বামী আমাদের সমাজের হতদরিদ্র, সর্বহারা, শ্রমজীবী মানুষদের ‘সামান্য লোক’ বলেছেন। সমাজের নিম্নশ্রেণির হতদরিদ্র মানুষগুলির চাহিদা অতি সামান্য। জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজনটুকু ‘মোটা ভাত, মোটা কাপড়’ পেলেই এরা হেসেখেলে জীবন কাটিয়ে দেয়। এদের শুকনো বাসি ভাতের
সঙ্গে লবণ অর্থাৎ খাদ্যের ন্যূনতম উপকরণটুকুও জোটে না। স্বাধীনতা উত্তর দেশে এরা তুচ্ছ, নগণ্য উপেক্ষার পাত্র-সমাজ তথা রাষ্ট্র এদের কথা চিন্তা করে না।
১৪। “আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক।”-কারা, কাদের কাছে এই দাবি করেছে? এই দাবি করার কারণ কী? ১+২
কবি জয় গোস্বামীর ‘নুন’ কবিতায় সমাজের নিম্নবিত্ত হতদরিদ্র সর্বহারা শ্রমজীবী মানুষেরা আমাদের সুশীল সমাজ তথা রাষ্ট্রের কাছে এই দাবি করেছে।
সমাজের নীচু শ্রেণির হতদরিদ্র মানুষেরা অভাব-অনটন, অর্ধাহার- অনাহারকে নিত্যসঙ্গী করে হাসিমুখে দিন অতিবাহিত করে। তারা তাদের জীবনযন্ত্রণা ভুলে সাময়িক আনন্দ পেতে গাঁজা সেবন করে থাকে। কিন্তু যখন সহ্যের সীমা অতিক্রম করে, জীবনধারণের জন্য খাদ্য ও ন্যূনতম উপকরণগুলি থেকে বঞ্চিত হয়, তখন তাদের ধৈর্যশক্তির সীমা লঙ্ঘন করে ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। সুশীল সমাজের কাছে তারা দু-মুঠো ভাত এবং একটু ভাতের সঙ্গে ন্যূনতম খাদ্য উপকরণের দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর