নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

নিষ্কাম কর্মের বৈশিষ্ট্য

কর্মের কর্তা যখন কর্মফলের আকাঙ্ক্ষা বর্জন করে শুধুমাত্র কর্ম সম্পাদনের জন্য কর্ম করেন, ফলাকাঙ্ক্ষামুক্ত সেই কর্মই হল নিষ্কাম কর্ম। নিষ্কাম কর্মের যে বৈশিষ্ট্যগুলি থেকে নিষ্কাম কর্মের প্রকৃতি সম্পর্কে জানা যায় সেগুলি হল –

ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন

কর্মফলের আশা না করে ঈশ্বরে সমর্পিত কর্মই হল ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত কর্ম আর ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত কর্মই নিষ্কাম কর্ম।

কর্তৃত্বাভিমান বর্জন

কর্মকর্তা নিজের জন্য কাজটি করছেন না। ঈশ্বরের ইচ্ছায় কর্মটি করছেন এবং ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন কর্মটি করার পর কর্মফলে তার কোনো অধিকার নেই। কারণ তা ঈশ্বরে সমর্পিত। কোনো কর্ম কেবল কর্তব্য ভেবে করাই হল কর্তৃত্বাভিমানবর্জিত কর্ম। নিষ্কাম কর্মই হল কর্তৃত্বাভিমানবর্জিত কর্ম।

কামনারহিত কর্ম

যে কর্ম সম্পাদনের পশ্চাতে জীবের কোনো কামনা থাকে না, অর্থাৎ কামনারহিত যে কর্ম সেই কর্মকে নিষ্কাম কর্ম বলে। নিষ্কাম কর্ম হল এমন একপ্রকার কর্ম যেখানে বিষয়ের প্রতি আসক্তি থাকে না, ফললাভের জন্য জীবকে বারবার জন্মগ্রহণ করতে হয় না। কারণ ফলের আকাঙ্ক্ষা না থাকায় নিষ্কাম কর্ম বন্ধনের হেতু হয় না।

নিস্বার্থভাবে সেবা কর্ম

নিষ্কাম কর্মের অর্থ হল নিঃস্বার্থভাবে সেবা করা। নিজ অহংবোধ ত্যাগ করে যে কর্ম সম্পাদন করা হয় তাই হল নিষ্কাম কর্ম। মনে রাখতে হবে যে, ত্যাগের মাধ্যমেই মানুষ অমৃত শান্তি লাভ করতে পারে, শুধুমাত্র যারা শান্তির খোঁজ করে তারাই চাইলে এই নিষ্কাম কর্মে নিয়োজিত হতে পারে। যেমন- একটি জাম গাছ রোপন করার সময় চিন্তা করলাম যে গাছটি বড়ো হলে অনেক পাখি, জীবজন্তু এর ছায়ায় বসে স্বস্তি বোধ করবে, ফল খেয়ে ক্ষুধা মেটাবে। অর্থাৎ নিজের স্বার্থ বিষয়ে আশা না রেখে করা কাজ হল ‘নিষ্কাম কর্ম’।

ঈশ্বরে সর্ব কর্ম সমর্পন

নিষ্কাম কর্মের ক্ষেত্রে কর্মকর্তা মনে করেন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছায় তিনি ঈশ্বরের কর্ম সম্পাদন করছেন মাত্র। তিনি কেবলমাত্র নিমিত্ত কর্তা, আর ঈশ্বরই হলেন প্রকৃত কর্তা।

নিষ্কাম কর্মের কর্তাকে কোনো ফলভোগ করতে হয় না

যেহেতু নিষ্কাম কর্ম ঈশ্বরে সমর্পিত তাই এই কর্ম থেকে কোনো সংস্কার উৎপন্ন হয় না। নিষ্কাম কর্মের কর্তা নিমিত্ত কর্তা হওয়ায় তিনি ফলভোগের অধিকারী নন। তাই প্রকৃত কর্তা ঈশ্বরই কর্মফল ভোগ করেন।

নিষ্কাম কর্ম সম্পাদনের উপাযাগিতা

নিষ্কাম কর্মের ফল কর্মকর্তাকে ভোগ করতে হয় না। সুতরাং কর্মফল ভোগের জন্য পুনরায় জন্মগ্রহণও করতে হয় না। ফলত, মুক্তিলাভ সম্ভব হয়।

নিষ্কাম কর্মের অর্থ নিষ্ক্রিয়তা বা কর্মত্যাগ নয়

‘নিষ্কাম’ শব্দের অর্থ হল অহংকারবর্জিত, ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত, কর্তৃত্বাভিমানবর্জিত কর্ম। এইজন্য গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ক্ষত্রিয়ের ধর্ম অর্থাৎ তাঁর কর্তব্যকর্ম অর্থাৎ ধর্মযুদ্ধ করতে উপদেশ দিয়েছেন। কর্তৃত্বাভিমান ও ফলাকাঙ্ক্ষাবর্জিত হয়ে কর্তব্যের জন্য কর্তব্য করাই হল নিষ্কাম কর্ম

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment