নিষ্কাম কর্মের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো

অথবা, নিষ্কাম কর্মের ধারণা শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতার কোন অধ্যায়ে কোন্ প্রসঙ্গে অবতারণা করা হয়েছে?

নিষ্কাম কর্মের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো
নিষ্কাম কর্মের প্রেক্ষাপট আলোচনা করো

নিষ্কাম কর্মের প্রেক্ষাপট

ভগবদ্গীতার দ্বিতীয় অধ্যায় ‘সাংখ্যযোগ’ অংশে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে নিষ্কাম কর্মের নৈতিকতা সম্পর্কে উপদেশ দিয়েছেন। হিন্দুদের পবিত্র শাস্ত্র-গ্রন্থ মহাকাব্য মহাভারতের একটি বিশেষ অংশ হল শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা। শ্রীকৃষ্ণের মুখনিঃসৃত এই নৈতিকতত্ত্ব ভারতীয় চিন্তাধারায় মর্যাদা ও শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত। ধর্ম ও নৈতিক তত্ত্বের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উদার ও মুক্ত চিন্তাধারা এই গ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে। সেই সময়ের বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এমনকি অধিবিদ্যক ও নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা এই গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। গীতায় বিভিন্ন আদর্শের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে ওই আদর্শগুলির বিভিন্ন ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। হিন্দু চিন্তাধারার সবথেকে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল সহনশীলতা। এ কথা এই গ্রন্থের ছত্রে ছত্রে প্রকাশিত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, গ্রন্থটি মূলত তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুন ও তাঁর সারথি শ্রীকৃষ্ণের মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের রথের সারথি ছিলেন শ্রীকৃয়। শ্রীকৃয় হলেন স্বয়ং ভগবান। অবতাররূপে ধর্মকে গ্লানি মুক্ত করার জন্য তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে অর্জুন দেখলেন, তাঁকে অস্ত্রধারণ করতে হবে তাঁর স্বজাতি, অত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিরুদ্ধে। এই কথা ভেবে তাঁর শরীর ও মন অবশ হয়ে এল, তিনি অস্ত্র ত্যাগ করলেন। তাঁর মনে হতে লাগল এই যুদ্ধের ফলে কত প্রাণ, কত সম্পদ নষ্ট হবে। সমাজে কত অবক্ষয় ঘটবে।

শ্রীকৃষ্ণ কতগুলি যুক্তির সাহায্যে অর্জুনকে এই যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তা বোঝান। সেগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল-

  • আত্মা অমর এবং শরীরের দ্বারা বন্ধ নয়। মানুষের সারধর্ম হল- অপরিবর্তনীয় ও অবিনশ্বর আত্মা, তার শরীর বা ইন্দ্রিয় নয়।
  • কর্তব্যের প্রতি একনিষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ আনুগত্য জীবনের নীতি। অতএব ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ ক্ষত্রিয়দের বাধ্যতামূলক কর্তব্য।

অর্জুন আরও যে সব প্রশ্ন তুলেছিলেন, সেগুলির উত্তর প্রদানের মাধ্যমে শ্রীকৃষ্ণ নিজের নৈতিক ও অধিবিদ্যক মতবাদ তুলে ধরেছিলেন। তাদের কথোপকথনে তিনি বারবার অর্জুনকে নিরাসক্তভাবে তাঁর কর্তব্য পালনের উপদেশ দেন- “সুখ ও দুঃখে সমভাব রেখে লাভ ও ক্ষতি, জয় ও পরাজয়ে এক থেকে যুদ্ধে যুক্ত হও, পাপ তোমাকে বদ্ধ করবে না।” গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ এভাবে কর্মযোগের এবং নিষ্কাম কর্ম সম্বন্ধে সেটির যে উপদেশ সেটির অবতারণা করেন।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment