নির্বাচন কমিশনের চারটি ত্রুটি উল্লেখ করো

নির্বাচন কমিশনের চারটি ত্রুটি উল্লেখ করো

নির্বাচন কমিশনের চারটি ত্রুটি উল্লেখ করো
নির্বাচন কমিশনের চারটি ত্রুটি উল্লেখ করো

অবাধ ও স্বাধীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় গণতন্ত্রকে সাফল্যমন্ডিত ক’রে তোলার জন্য সংবিধান-প্রণেতারা একটি নিরপেক্ষ সংস্থা হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচন

কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের পথে কতকগুলি প্রতিবন্ধকতা রয়েছে বলে সমালোচকরা মনে করেন। এগুলি হল-

[1] নির্বাচন কমিশন গঠনে শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকাই প্রধান

নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের যোগ্যতা, কার্যকালের মেয়াদ প্রভৃতি বিষয়ে যতদিন পর্যন্ত পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন না-করবে, ততদিন পর্যন্ত এইসব বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতা সংবিধান রাষ্ট্রপতির হাতে প্রদান করেছে। বলা বাহুল্য, রাষ্ট্রপতি নিয়মতান্ত্রিক শাসক হওয়ায় তিনি কার্যক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমেই ওইসব গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদন করেন। এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে এম. ভেঙ্কটরঙ্গাইয়া বলেছেন যে, এর ফলে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার কিংবা কমিশনের অন্যান্য সদস্য হিসেবে তাঁদেরই নিযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যাঁরা শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রতি বিশেষভাবে শ্রদ্ধাশীল। আঞ্চলিক কমিশনারদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।

[2] কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের ক্ষমতাহীনতা

নির্বাচনের মতো এক বিরাট কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের জন্য বিপুল সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগের প্রয়োজন। কিন্তু এঁদের নিয়োগ কিংবা চাকরির শর্তাবলি নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ক্ষমতা কমিশনের নেই। অথচ কেন্দ্রীয় জনকৃত্যক কমিশন, সুপ্রিমকোর্ট প্রভৃতির হাতে ওই ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।

[3] কমিশনের নিরপেক্ষভাবে কার্য সম্পাদনের পথে বাধা

শাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত ক’রে গড়ে তোলা না-হলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কার্য সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভের পর নির্বাচন কমিশনারদের কোনো চাকরি বা পদে নিযুক্ত হওয়ার পথে কোনোরূপ বাধানিষেধ সংবিধান কর্তৃক আরোপিত হয়নি। ফলে নির্বাচন কমিশনারদের অনেকেই ভবিষ্যতে সরকারি অনুগ্রহ লাভের আশায় সবসময় নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন না। আবার, পুনর্নিয়োগের পথে কোনো সাংবিধানিক বাধানিষেধ না-থাকায় নির্বাচন কমিশনাররা পুনর্নিযুক্ত হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দল বা মোর্চার হয়ে কাজও করতে পারেন। এরূপ ক্ষেত্রে কমিশনের নিরপেক্ষতা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায় বলে কে. ভি. রাও মন্তব্য করেছেন। একটি উদাহরণের সাহায্যে এই বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা যায়। সুকুমার সেন ও কে. ভি. কে. সুন্দরম্ ৪ বছর নিজ নিজ পদে অধিষ্ঠিত থাকলেও এস. এল. শাকধেরের কার্যকালের মেয়াদ কিন্তু বৃদ্ধি করা হয়নি। অনেকের মতে, 1981 সালের জুন মাসে উত্তরপ্রদেশের গাড়োয়াল লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ব্যাপক দুর্নীতি ও কারচুপির অভিযোগ এনে তদানীন্তন ডি. এস. পি.-নেতা এইচ. এন. বহুগুণা ওই নির্বাচন বাতিল করার আবেদন জানালে শাকধের সেই আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন। এইভাবে কংগ্রেস দলের বিরাগভাজন হওয়ায় তাঁকে পুনর্নিয়োগ করা হয়নি।

[4] কমিশনের সুপারিশ বাধ্যতামূলক নয়

নির্বাচন কমিশনের সুপারিশ ও পরামর্শ মেনে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার বাধ্য নয়। তাই কমিশনের যেসব সুপারিশ ক্ষমতাসীন দল বা মোর্চার অনুকূলে যায়, কেন্দ্রীয় সরকার কেবল সেগুলিকেই গ্রহণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন নির্বাচন বিভাগ (an Independent Elec- tion Department) গঠনের প্রস্তাব দিলেও সেই প্রস্তাব অদ্যাবধি বাস্তবে রূপায়িত হয়নি।

আরও পড়ুন – ভারতে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটি উদাহরণ-সহ আলোচনা করো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment