ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা 700+ শব্দে । Religion and Superstition Essay

ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

ভূমিকা

সংস্কৃত ধূ ধাতু থেকে ধারণ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে যার মানে হল ধারণ করা অর্থাৎ যাকে ধারণ করে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলে। বৈদিক যুগে আদি ধর্মছিল হিন্দু ধর্ম। তাই এই ধর্মকে বলা হয় সনাতন ধর্ম। অন্যান্য ধর্মের উৎপত্তি হয় পরে। যেকোন ধর্মের মূল কথা ন্যায়, নীতি, সততা, মানবপ্রেম- সম্প্রীতি। কিন্তু বাস্তবে তা চোখে পড়ে কম। ধর্মের আর্দশে মানুষের মধ্যে শুভবোধের উন্মেষ হয়, চেতনার বিকাশ হয়। আচার-আচরণে মিল না থাকলেও যে ধর্মে যার আস্থা আছে তাকে সেই ধর্মের বিশেষ কিছু নীতি মানতে হয় এবং – তার ফলে সেই ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের বন্ধন গড়ে ওঠে।

ধর্ম কখনই ন্যায় নীতি, বিবেকের পরিপন্থী হতে পারে না। হিংসার স্থান ধর্মে থাকতে পারে না। মানুষ ধর্মও ধর্মতন্ত্রের বিভেদের কথা মনে রাখে না, সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ। আমাদের দেশের এক কলঙ্কের অধ্যায় জাতিভেদ প্রথা। কিন্তু ধর্মের আবরণে এই প্রথার গুরুত্ব বিবেচিত হয়নি। ধর্ম মানুষকে সমমনস্কতা হতে সাহায্য করে, লোভ-হিংসা থেকে বিরত থাকার কথা বলে। কোন ধর্ম কখনও বলে না অন্যধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু হতে। যেকোন ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে কিভাবে নিজেকে পবিত্র রেখে জীবনে কল্যাণও নিজের জীবনকে সুখময় করা যায় সেই বাণী উচ্চারিত হয়েছে।

ধর্মান্ধতা মানবজীবনের কলঙ্কময় অধ্যায়

ইতিহাসের পৃষ্ঠা খুললে দেখা যায় বার-বার পৃথিবীতে জ্বলে উঠেছে হিংসার আগুন, মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে শস্য-শ্যামল পৃথিবীর বুক, লুণ্ঠন, হত্যা, ধ্বংসে মেতে উঠেছে মানুষ, মানুষ খুন করেছে মানুষকে, ভাই করেছে ভাইয়ের ওপর নির্যাতন। এসব ঘটনার কারণ মৌলবাদ, ধর্মের অপব্যাখ্যা, যা বিকৃত মানসিকতার নির্দশন। ধর্মান্ধতাকে কেন্দ্র করে যে ভ্রান্ত ধারণা গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় ধর্মীয় কুসংস্কার। ভারতে একসময় কুসংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে নিজেকে অন্যায়-নীতির দাসত্বে পরিণত করে সতীদাহের নামে হাজার হাজার নিষ্পাপ নারীকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মেরেছে, পুরুষশাসিত সমাজ বিধবা বিবাহকে অনৈতিক অ্যাখ্যা দিয়েছে, স্বার্থান্বেষী এক সম্প্রদায়ের মানুষ কৌলিন্য প্রথাকে জিইয়ে রেখেছে।

অর্থনৈতিক রাজনৈতিক কারণেও এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সাথে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংঘাত ঘটতে দেখা গেছে। খ্রিস্টান ও মুসলমানদের মধ্যে প্রায় দু’শ বছর ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ হয়েছে। ১০৯৫ সালে পোপ দ্বিতীয় আরবান পবিত্র জেরুজালেমও সিরিয়াকে মুসলমান শাসন থেকে মুক্ত করার জন্য ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করেন। পোপের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক প্রভুত্ব বিস্তার ও যুদ্ধ বাজ নাইটের হাত থেকে চার্চের সম্পত্তি রক্ষা করা। সেসময় ১০৯৫ সাল থেকে ১০৯৭ সাল পর্যন্ত ইউরোপে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ।

কৃষকেরা বাধ্য হয়ে দলে দলে যোগদান করে যুদ্ধে। রোমান শাসিত খ্রিস্টান সম্প্রদায়-অধ্যুষিত কন্‌স্টানটিনোপল লুন্ঠিত হয় ১২০৪ সালে চতুর্থ ক্রসেড বা ধর্মযুদ্ধের সময়। এইসব ঘটনা থেকে সহজে প্রমাণিত হয় যে ধর্মযুদ্ধের উদ্দেশ্য ধর্মের মাহাত্ম প্রচার নয় লুণ্ঠন ও আর্থিক লোভ। স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা ধর্মের নামে বিভিন্ন দেশে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধাতে সর্বদাই সচেষ্ট।

ভারতে ধর্মান্ধতা

ভারতে ধর্মান্ধতা বিভিন্ন সময় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে সৃষ্টি করেছে বিভেদের প্রাচীর, দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছে বহু জনপদ, প্রাণ হারিয়েছে অনেক নিরীহ মানুষ। একই ভাষা, একই ঐতিহ্যবাহী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে বাস করেও ধর্মান্ধতার কারণে ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তান নামে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে। বাঙালিরা ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাগ করেছে দুই বাংলাকে। এই দেশভাগ কোনও সম্প্রদায়ের কলা্যাণ করেনি, বেড়েছে হিংসা-বিদ্বেষ। আবার একই ধর্মে বিশ্বাসী মানুষের মধ্যে জাতির নাম করে ব্রাক্ষ্মণতন্ত্র হিন্দুদের মধ্যেও রচনা করেছে বিভেদ। ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার: ধর্মান্ধতার সহায়ক শক্তি হল কুসংস্কার। ধর্মান্ধ

স্বার্থান্বেষীরা কুসংস্কারকে হাতিয়ার করেছে যে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ইতিহাসে। কোপারনিকাস ও গ্যালিলিও যখন বললেন যে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে তখন খ্রিস্টীয় ধর্মশাস্ত্রের সাথে বিজ্ঞানের মিল না হওয়ায় ধর্মযাজকেরা প্রভুত্ব হারানোর ভয়ে রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা তাঁদের ওপর নির্যাতন করতে পিছপা হননি। হিন্দু ধর্মযাজকেরা যখন দেখল সমুদ্র যাত্রার ফলে বিভিন্ন দেশের সাথে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন হওয়ায় মানুষের মন থেকে ধর্মান্ধতা দূর হয়ে যাচ্ছে তখন সমুদ্রযাত্রা নিষিদ্ধ করল ধর্মের দোহাই দিয়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে সমুদ্র যাত্রার কারণে প্রখ্যাত সাহিত্যিক-কবি-নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে জাতিচ্যুত করা হয় এবং এরূপ ঘটনা ঘটলে প্রায়শ্চিত্তের নির্দেশ দেয় যাজক সম্প্রদায়।

বিজ্ঞান ও ধর্মান্ধতা

বিজ্ঞান দূর করে ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কার। কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার মূল কারণ অন্ধবিশ্বাস। বিজ্ঞান নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে প্রমাণ করে আসল সত্য কি এবং চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় প্রকৃত সত্যকে অস্বীকারের অর্থ হল নিজের জ্ঞানকে জলাঞ্জলি দিয়ে অজ্ঞানতাকে প্রশয় দেওয়া। রোগীর কষ্ট নিবারণের জন্য অপারেশনের সময় এ্যানাস্থেসিয়া প্রয়োগকে খ্রিস্টান ধর্মযাজকরা ধর্মবিরোধী বলে প্রচার করেন। অনেক সময় প্রকৃত সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে বিজ্ঞানের সাথে কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞান মানুষকে যে সঠিক পথে চলার প্রকৃত উপায় নির্ধারণ করে তা ধর্মান্ধ ও কুসংস্কারে বিশ্বাসীরা নিজ স্বার্থহানির ভয়ে সহজে মেনে নেয় না।

কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা মোচনে ছাত্র সমাজের দায়িত্ব

কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার প্রধান কারণ সুশিক্ষার অভাব। যাঁরা শিক্ষা দান করেন ও যাঁরা শিক্ষাগ্রহণ করেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাঁদের এসব সংস্কার থেকে প্রথমে মুক্ত করতে হবে নিজেদের। আমাদের দেশে জন্মগ্রহন করেছেন স্বামী বিবেকানন্দের মতো অজস্র মনীষী। তাঁরা কুসংস্কার দূরীকরণে ছাত্রমাজের ভূমিকার কথা বলেছেন। তাঁদের প্রর্দশিত পথে কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা থেকে মানুষের মুক্তি নির্ভর করছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। ছাত্র-ছাত্রী ও সর্বশ্রেণীর মানুষকে ধর্ম সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে, বুঝতে হবে কুসংস্কার মানুষকে চক্ষু থেকেও অন্ধ করে রাখে এবং বিজ্ঞান মনস্কতা মানুষকে সঠিক সত্যের সন্ধান দেয়।

আরও পড়ুন – তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment