ধর্ম, অর্থ ও কামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো

ধর্ম, অর্থ ও কামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো

ধর্ম, অর্থ ও কামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো
ধর্ম, অর্থ ও কামের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো

ধর্ম, অর্থ ও কাম একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত নয়। বরং তিনটিই সহাবস্থান করে। ধর্ম, অর্থ ও কাম অনুশীলনকারী একজন ব্যক্তি বর্তমান এবং ভবিষ্যতে সুখ উপভোগ করেন। ধর্ম, অর্থ ও কাম একত্রে বা যে-কোনো দুটির বা এমনকি যে-কোনো একটির অনুশীলনে প্রবাহিত হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত। রামায়ণে এই ত্রিবর্গের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব লক্ষ করা যায়। আবার মহাভারতে আমরা দেখতে পাই যে, ব্যাসদেব ধর্মের পথে অর্থের এবং কামের চর্চার কথা বলেছেন।

মানুষের বিভিন্ন আচরণের ক্ষেত্রে ধর্মই নিয়ন্ত্রক। যেমন কাম ও অর্থ- এই দুটি পুরুষার্থ হলেও তা যদি ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয় তাহলে মানুষ বিপথগামী হতে পারে এবং তার ফলে সামাজিক কল্যাণ বিঘ্নিত হতে পারে। অর্থাৎ কাম পুরুষার্থ হলেও তা কল্যাণকর হয় যদি তা ধর্মের অনুশাসনের বিরোধী না হয়। অর্থ সম্বন্ধেও একই কথা প্রযোজ্য। ধর্মের দ্বারা পরিচালিত না হলে অর্থও অনর্থের মূল হতে পারে। সহজ কথায় বলা যায় যে, কাম ও অর্থ এই দুটি পুরুষার্থ ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেই মানুষ যথার্থ সামাজিক জীবনযাপন করতে পারবে। সুতরাং ত্রিবর্গকে বুঝতে হবে সমাজের কল্যাণের পরিপ্রেক্ষিতে।

অর্থের ক্ষেত্রে যেমন ধর্ম নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে সেই রকম কামের ক্ষেত্রেও ধর্মের নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ধর্মই কামকে সুরক্ষিত করে। কাম মূলত গার্হস্থ্য ধর্ম। তাই ধর্ম কামকে মানুষের গার্হস্থ্য জীবন থেকে নির্মূল করতে চায় না। ধর্ম কামকে ততটাই প্রশ্রয় দেয় যতটা তা মানুষকে বেঁচে থাকার প্রেরণা যোগায়। ত্রিবর্গের অন্তর্গত অর্থ ও কামের মধ্যে সম্পর্কটি অতি নিবিড়। কাম মানুষকে জীবনধারণের জন্য অর্থ সংগ্রহে প্রবৃত্ত করে। কাম শুধু ভোগ বা ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তিকে বোঝায় না। মানুষের জীবনধারাকে প্রবাহিত করে তাকে সংরক্ষণ করাই কামের উদ্দেশ্য। যে ব্যক্তি কামনা শূন্য সে কখনই ধর্ম, অর্থ ও কামের বাসনা করে না। অতএব কামই ত্রিবর্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

প্রবৃত্তির ক্ষেত্রে সংযম ও নিয়ন্ত্রণ আনাই ধর্মের কাজ। যে ব্যক্তি কাম ও অর্থকে আকাঙ্ক্ষা করেন তিনি প্রকৃত সুখ লাভ করেন না। শাস্ত্রে বলা হয়েছে – অর্থ ও কাম ধর্ম থেকেই আসে। “ধর্মাদর্থশ্চ কামশ্চ” এ কথার অর্থ হল – অর্থ ও কাম ধর্মের দ্বারা পরিচালিত হলেই তা পুরুষার্থরূপে গ্রাহ্য হয়।

সুতরাং ত্রিবর্গের অন্তর্গত ধর্ম, অর্থ ও কাম এগুলি একে অপরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে বলেছেন যে ধর্ম, অর্থ ও কাম এই ত্রিবর্গের সাধনা করা উচিত। কিন্তু অর্থ ও কাম যদি ধর্মের অনুশাসনের বিরোধী হয় তাহলে তাদের পরিত্যাগ করা উচিত। এর থেকে বোঝা যায় যে, ধর্মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কাম ও অর্থই প্রকৃত পুরুষার্থ। ধর্ম সমাজ কল্যাণের আদর্শে কাম ও অর্থকে নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment