দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

দেশভ্রমণ - মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

"বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি 
দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী- 
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্দু মরু, 
কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু 
রয়ে গেল অগোচরে-"

বিপুল এ-বিশ্বে দু’চোখ ভরে দেখার জিনিস, জানার বিষয় কতভাবে কত দিকে যে ছড়িয়ে আছে তার যেন কোনো হিসেব নেই। নগর, জনপদ, রাজধানী, মানুষের অভিনব নানা কীর্তি আর গিরি নদী সিন্ধু মরু আমরা চোখের তৃয়া মিটিয়ে সবকিছুকে দেখতে চাই। অজানাকে জানা, অচেনাকে চেনা আর অদেখাকে দেখার জন্য মন আকুল হয়ে ওঠে। সে কারণেই মানুষ ছুটে চলে দেশে-দেশান্তরে, নগরে-প্রান্তরে বন্ধ ঘরের একঘেয়েমি ও ক্লান্তিকর জীবন থেকে মুক্তির বাতাস পেতেই প্রয়োজন দেশভ্রমণের।

অতীতকালে দেশভ্রমণ

সুদূর অতীতকাল থেকেই জ্ঞানের অন্বেষণে, দেশ বা ভূখণ্ড আবিষ্কারের নেশায় মানুষ ভ্রমণ করত দেশে দেশান্তরে। অতীতে বিজ্ঞান সভ্যতার তেমন অগ্রগতি ঘটেনি, পথঘাট ছিল দুর্গম, যানবাহনের অপ্রতুলতা ছিল, তবুও মানুষ শারীরিক কষ্ট, পথের বিপদ তুচ্ছ করে দেশ বিদেশে পাড়ি দিত। জানার অদম্য আকর্ষণে মানুষ তাই উপেক্ষা করেছে যাবতীয় প্রতিকূলতাকে, কখনো বা শুধুমাত্র নির্জন প্রকৃতির স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে থাকার একান্ত বাসনায় মানুষ পা ফেলেছে হিমালয়ের পাদদেশে, পাড়ি দিয়েছে সাহারার বুকে, আরব সাগরের সৈকতে। সুদূর অতীতে পর্যটক হিসেবে এদেশের বুকে এসেছেন হিউয়েন সাঙ, ফা-হিয়েন, মেগাস্থিনিস প্রমুখ। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার ছিল এক দূরস্ত অভিযান। আর ভাস্কো-ডা-গামা ভারতের কালিকট বন্দরে উপস্থিত হয়েছিলেন ঔপনিবেশিক মানসিকতায়।

দেশভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা

কেবলমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা আমাদের সমৃদ্ধ করে না। জ্ঞান বিকাশের অন্যতম পথ প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। দেশভ্রমণের মধ্য দিয়ে আমরা প্রত্যক্ষ করতে পারি ঐতিহাসিক নানা স্থান ও দর্শনীয় বিষয়, ভৌগোলিক মানচিত্রের নানা ছবি চোখের সামনে প্রত্যক্ষভাবে ভেসে ওঠে আর অনিবার্যভাবে আমরা দেখতে পাই সমাজজীবনের কত-না বিচিত্র রূপ ও ছবি। দেশভ্রমণের মাধ্যমেই আমাদের কাছে অতীতের ইতিহাস একেবারে জীবন্ত হয়। বর্তমানকালের সঙ্গে অতীতের ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধন রচিত হয়। এককথায় সার্বিকভাবে আমাদের মন আনন্দে আপ্লুত হয়, যখন আমরা আমাদের পঠিত গ্রন্থের নিষ্প্রাণ ছবিগুলোকে জীবন্তরূপে দেখি।

দেশভ্রমণ ও শিক্ষা

দেশভ্রমণ শিক্ষার একটি বিশেষ মাধ্যম একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দেশভ্রমণ মানে শুধুমাত্র ইতিহাসের উপাদান আর ভৌগোলিক মানচিত্রের ছবিগুলোকে দেখা নয়, দেশভ্রমণের মধ্য দিয়ে আমরা সভ্যতা-সংস্কৃতির ও জীবনচর্চার একটা বাস্তব রূপ অনুধাবন করতে পারি। বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষাগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে আলাপ হওয়ার ফলে বিভিন্ন ভাষা সম্বন্ধে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা জন্মায়। দেশভ্রমণ আসলে পরিচিত গন্ডির বাইরে অপরিচিত জগতে প্রবেশের বিশাল একটা ছাড়পত্র দেয়।

তাই যাবতীয় জড়তা, সংকীর্ণতা, সংকোচ, দ্বন্দু কাটিয়ে নতুনতর জীবনের সন্ধান পাওয়া যায়। দেশ-দেশান্তরে ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দুটি ভিন্ন দেশের নাগরিকবৃন্দের ভাব বিনিময়, ভালোবাসা বিনিময় ও সাংস্কৃতিক বিনিময় হতে পারে। আমাদের মননে-চেতনে নবতর উন্মেষ ঘটে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সেতুবন্ধনের ফলে। এই ধরনের শিক্ষা দেশভ্রমণ ছাড়া একেবারেই সম্ভব নয় তাই নানা বৈচিত্র্য আস্বাদনের মাঝে দেশভ্রমণ এনে দেয় জীবনের দিশা। তাই তো দেশভ্রমণ শিক্ষার প্রকৃত অঙ্গ।

আধুনিককালে দেশভ্রমণ

আধুনিককালে দেশভ্রমণ অতি সহজ হয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এবং বিশেষভাবেই প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে। একবিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আমরা দেশভ্রমণের জন্য যে সহজতম পদ্ধতিগুলি পেয়েছি সেগুলি হল-আধুনিকতম কম্পিউটারচালিত পদ্ধতিতে টিকিট সংরক্ষণ, হোটেল বা হলিডে হোম বুকিং এবং বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার পেশাদারি দক্ষতা। অতিসহজেই বাড়িতে বসেই আমরা দেশভ্রমণের রূপরেখা নির্মাণ করতে পারি এবং অতিসংক্ষিপ্ত সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। তাই দেশভ্রমণ আর কষ্টকর, দুর্গম অভিযান নয়, তা এখন এক নান্দনিক প্রয়াস।

উপসংহার

অনন্ত অসীম মহাবিশ্বের সবকিছুকে প্রত্যক্ষভাবে দেখা হয়তো কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়, তবুও যতটুকু দেখার সামর্থ্য অর্জন করতে পারি তার মাধ্যমেই দেশভ্রমণের যথার্থতা উপলব্ধি করা যায়। দেশভ্রমণ যদি সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষের পক্ষে সম্ভব হত তাহলে দেশভ্রমণের ইতিবাচক দিকটি আরো বেশি কার্যকর হত। কিন্তু আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের নাগরিকদের সবচেয়ে বড়ো বাধা আর্থিক অসংগতি। যদি কোনোদিন সরকারি উদ্যোগে বা বেসরকারি জনকল্যাণমূলক সংস্থার পরিচালনায় সমাজের সর্বশ্রেণির মানুষকে দেশভ্রমণের আনন্দ দিতে পারা যায়, তবে সেটাই হবে আমাদের অত্যন্ত সুখের ও গর্বের।

আরও পড়ুন – 

১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment