দূষণ প্রবন্ধ রচনা

দূষণ প্রবন্ধ রচনা

দূষণ প্রবন্ধ রচনা
দূষণ প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

"এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

-সুকান্ত ভট্টাচার্য জীবজগতের বাসভূমি হল পরিবেশ। আর এই পরিবেশের মধ্যেই লালিতপালিত হয় জীবকুল। পরিবেশই সহায়-সম্বল দিয়ে সবাইকে বাঁচিয়ে রাখে। আবার, এই পরিবেশই যখন রুদ্রমূর্তি ধারণ করে, তখন সভ্যতা বিনাশের দিকে এগিয়ে যায়। পরিবেশের নির্মলতা যখন বিঘ্নিত হয়, তখনই পরিবেশ জীবজগতের প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। পরিবেশ তার নির্মলতা হারালে হয়ে ওঠে দূষিত।

বিভিন্ন প্রকার দূষণ

১। জলদূমণঃ বর্তমানে অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে জলদূষণ। জল ছাড়া বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, এ কথা জেনেও আমরা জলকে দূষিত করে চলেছি। নগরের নোংরা আবর্জনা, কলকারখানার দূষিত বর্জ্যপদার্থ নির্বিচারে নদীতে ফেলা হচ্ছে। জমিতে কীটনাশক দেওয়ায়, সেই কীটনাশক জলের সঙ্গে পুকুর বা ডোবায় গিয়ে মিশছে। কলকারখানা বা বাড়ির কাপড় পরিষ্কারের দূষিত জল, রং, ডিটারজেন্ট জলে মিশে জলকে দূষিত করছে।

২। বায়ুদূষণঃ বলা হয়, সমগ্র জীবজগৎ বায়ুর সমুদ্রে ভাসমান। ফলে কোনোভাবে বায়ু দূষিত হলে তার খারাপ প্রভাব পড়ে জীবজগতে। বায়ুদূষণের নানা কারণ আছে। যেমন-১ কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ধোঁয়া বাতাসে মিশছে। ২ যানবাহনের পেট্রোল, ডিজেল দহনের ফলে বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাস বাতাসকে দূষিত করে। ৩ তাপবিদ্যুৎ ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নানান বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুকে দূষিত করে।

৩। মাটিদূষণঃ বিভিন্ন কারণে মাটিও আজ দূষিত-

  • জমিতে অত্যধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ;
  • পরিকল্পিত বৃক্ষচ্ছেদনে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি;
  • শিল্পকলকারখানার দূষিত বর্জ্যপদার্থ;
  • অ্যাসিড বৃষ্টি বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটির সঙ্গে মিশে মাটিকে দূষিত করছে।

৪। শব্দদূষণ বর্তমানে মানব সভ্যতার এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে উঠেছে শব্দদূষণ।১ যানবাহনের হর্ন, কারখানার বিকট আওয়াজ, মাইকের চিৎকার শব্দদূষণের প্রধান কারণ। ২ উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী পটকা বা বাজি ফাটানো, গান বাজানোর ফলে শব্দদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫। মানৰ দূষণ : মানব দূষণ হল মানুষের কার্যকলাপের কারণে সৃষ্ট দূষণ। এর মধ্যে রয়েছে যানবাহন এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, শিল্পকারখানা থেকে গ্যাসীয় নির্গমন, প্রক্রিয়াকরণ, পাথর চূর্ণ প্রভৃতি।

৬। দৃশ্যদূষণ : চোখ ও মনের পক্ষে ক্ষতিকারক যে-কোনো দৃশ্যই দৃশ্যদূষণের অন্তর্ভুক্ত। যেমন-দেয়ালে লাগানো যাত্রা, নাটক, চলচ্চিত্রের কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন; খোলা রাস্তার ধারে যেখানে-সেখানে মূত্র ত্যাগ ও থুতু ফেলা; দেয়ালে পিকের দাগ ইত্যাদি দৃশ্যদূষণ সৃষ্টি করে।

বিশ্ব উষ্ণায়ন

বিশ্ব উষ্ণায়ন হল ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়া। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন কাটা এবং পশুপালন ক্রমবর্ধমানভাবে জলবায়ু এবং পৃথিবীর তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করছে। এসবই বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে তোলে, যার প্রভাবে ভূপৃষ্ঠের উয়তা বৃদ্ধি পায়।

দূষণের ফল

জীবজগতের সকলেই কমবেশি দূষণের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়-

  • বায়ুদূষণের ফলে মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের রোগ সৃষ্টি হয়।
  • জলদূষণের ফলে আমাশয়, কলেরা প্রভৃতি জলবাহিত রোগ দেখা দেয়।
  • মাটিদূষণের ফলে একদিকে যেমন কৃষিব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি অন্যদিকে মাটিতে বসবাসকারী উপকারী জীবও মারা যায়।
  • শব্দদূষণে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, স্নায়ুর রোগ ও বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হয়।

প্রতিকার

দূষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে সবার প্রথমে চাই মানুষের সচেতনতাবোধ। আর তাই নির্বিচারে গাছ কাটা রোধ করতে হবে, বন্ধ করতে হবে পুকুর-নদীতে বর্জ্য ফেলা, প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগাতে হবে ও সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।

উপসংহার

সুস্থ জীবনের প্রতিশ্রুতি দিতে পারে সুস্থ স্বাভাবিক পরিবেশ। আমরা যদি আগামী পৃথিবীকে সুন্দর দেখতে চাই, তবে পরিবেশকে দূষণমুক্ত ও নির্মল রাখার ব্যবস্থা আমাদেরই করতে হবে। কারণ, পরিবেশ বাঁচলে তবেই আমরা বাঁচব।

আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

Leave a Comment