তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
ভূমিকা
প্রত্যেকে সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখে, সে চায় জীবনকে আনন্দমুখর করে গড়ে তুলতে। স্বপ্ন উৎসাহিত করে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে, স্বপ্ন ভবিষ্যৎ জীবনের চূড়ান্ত সাফল্য এনে দিতে সাহায্য করে। জীবনের স্বপ্ন তাই সাফল্য লাভের স্বপ্ন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন। আমাদের জীবন মাঝ সমুদ্রে ভাসমান তরণীর মতো। নাবিক আকাশের ধ্রুবতারা দেখে সঠিক পথে অগ্রসর হয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছায়, জীবনের ধ্রুবতারা হল তার জীবনের লক্ষ্য। প্রত্যেকের শৈশব থেকে জীবনের লক্ষ্য থাকা উচিত। শৈশব থেকে লক্ষ্য স্থির করে জীবন-সাদ্রে পাড়ি দিলে তবেই আসবে সাফল্য।
প্রয়োজন জীবনের লক্ষ্য স্থির করার
সুদৃঢ় সংকল্প এনে দেয় জীবনে সাফল্য। সেই সংকল্প হবে দোদুল্যমান জীবন-তরণীর কান্ডারী; জীবনের যাত্রা পথের ক্লান্তিহীন সদা-জাগ্রত অভিভাবক। সোনা ফলাতে হলে মানব জীবনে, উপযুক্ত সময়ে বীজ বপন প্রয়োজন, সেজন্য দরকার সাধনা ও পরিশ্রম, নির্দিষ্ট করতে হয় জীবনের চলার পথ। তা না হলে পথভ্রষ্ট হতে পারে। সেই পথ-রেখাই সফলতার শিখরে পৌঁছে দেবে। তাই জীবন শুরুর প্রাতেই স্থির করে নিতে হয় জীবনের লক্ষ্য কি হবে।
আমার জীবনের লক্ষ্য
প্রত্যেকের জীবনের লক্ষ্য তো এক হয় না। আমার জীবনের লক্ষ্য আধুনিক যুগের একজন সুদক্ষ কৃষক হওয়া। আমার এই কথা শুনে হয় তো কেউ উপহাস করতে পারে। কৃষকের কথা বললে সকলে আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারার মান্ধাতা আমলের শিক্ষাহীন, নিরক্ষর কৃষকের কথা বলবেন। আমি তা হতে চাই না, চাই আধুনিক যুগের সুশিক্ষিত, সুদক্ষ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রগতিশীল কৃষক হতে।
এরূপ লক্ষ্য স্থির করার কারণ
প্রাচীন কালে কৃষি ছিল জীবনধারণের প্রধান উপায়। তাই কৃষিকে মনে করা হত লক্ষ্মী, সৌভাগ্যদাত্রী। কেউ চায় ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, শিক্ষক প্রভৃতি হতে। প্রত্যেক বৃত্তির গুরুত্ব আছে। এইসব বৃত্তিগ্রহণের মূল লক্ষ্য চাকুরি পাওয়া। যে কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল উৎস, আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের জীবিকার সন্ধান দেয়, তার পরিচালনার দায়িত্ব মুষ্টিমেয় নিরক্ষর, রুগ্ন, নিরক্ষর, পরিবর্তন-বিমুখ, দরিদ্র কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা কর্তব্য বিমুখ হয়ে নিশ্চিন্তে থাকি। আমাদের দেশের অভিশপ্ত কৃষিক্ষেত্র অগ্রগতির পরিচালকের প্রত্যাশায় বসে আছে। শিক্ষিত তরুণদের কি উচিত নয় সেই ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসার, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কৃষিতে সবুজ বিপ্লব আনার জন্য। কবিগুরু বলেছেন, “ফিরে চল মাটির টানে।” আমি তাঁর নির্দেশে এবং প্রেরণায় মাটির টানেই ফিরে যেতে চাই মা মাটির কাছে।
সার্থকতা
ভারতের কৃষিক্ষেত্রের দিকে তাকিয়ে দেখি উপযুক্ত শিক্ষা-পরিচালনার অভাবে এখনও কৃষি সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। ভারত সরকার চায় কৃষির অগ্রগতি। আমাদের এগিয়ে আসতে হবে দেশকে কৃষি-সমৃদ্ধিশালিনী করতে। তাই আমার জীবনের স্বপ্ন কৃষি-সেবা।
সংকল্পের সাধনা
আমার পাঠ্য হবে কৃষি-বিজ্ঞান। কৃষি-বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নেমে পড়াবো কৃষিক্ষেত্রে, উদ্ভাবন করবো কৃষিকে কিভাবে আধুনিক বিজ্ঞানের পথ অনুসরণ করে এগিয়ে নেওয়া যায়। মনে রাখা প্রয়োজন, ভারতের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান, কিন্তু জমি নির্দিষ্ট। সেই জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে ফসল না ফলাতে পারলে দেশে দেখা দেবে খাদ্য সংকট। তাছাড়া রয়েছে বেকার সমস্যা। কৃষি জমিতে অন্য শিল্প গড়ে উঠলে কিছু মানুষ যেমন চাকুরি পাবে তেমনি কমে আসবে খাদ্য ভান্ডার। উন্নত পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে বহু মানুষের কর্মে নিযুক্ত হওয়াও সম্ভব হবে।
উপসংহার
উন্নত বীজ, সারের প্রয়োগ, নলকূপের থেকে পাম্পের মাধ্যমে জলসমস্যার সমাধান, চিরাচরিত লাঙলের পরিবর্তে ট্রাক্টর ও উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, উন্নত পদ্ধতির প্রয়োগ প্রভৃতির মাধ্যমে এবং জনকল্যাণমুখী সরকারের প্রচেষ্টায় কৃষির উন্নতি ঘটলেও শিক্ষা প্রভৃতির অভাবে আমাদের দেশে এখনও কৃষিক্ষেত্রে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি। আমি কৃষিবিদ্যা অধ্যয়ন করে সুশিক্ষিত কৃষক হয়ে সেই আশা পূরণ করতে চাই।
আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা
Amar jiboner lokkho ki ?
এটা আপলোড করা আছে দেখুন।