‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ কি শুধুই একটি ছোটোগল্প নাকি আধুনিক বাস্তবতার ছাঁচে ঢালা শকুন্তলা কাহিনি’-বিচার করো।
অথবা, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ বাংলা সাহিত্যের প্রচলিত নারীবঞ্চনার গল্প কি না আলোচনা করো।
তেলেনাপোতা আবিষ্কার ও শকুন্তলা কাহিনির তুলনা
মহাকবি কালিদাসের ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাট্যের আখ্যান প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পকাহিনির সঙ্গে প্রাথমিকভাবে সমধর্মী মনে হয়। এই দুই আখ্যানই নারীর অসহায়তা, বঞ্চনা এবং সামাজিক অসম্মানকে প্রকাশ করেছে। আশ্রমকন্যা শকুন্তলাকে অরণ্যের আশ্রমিক পটভূমিতে দেখে রাজা দুষ্যন্ত মুগ্ধ হন। গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে সরল যামিনীকে দেখে মুগ্ধ হয় গল্পকথক। কিন্তু দুষ্যন্ত বিয়ে করে শকুন্তলাকে সামাজিক স্বীকৃতি দেন। গল্পকথক প্রতিশ্রুতি দিয়ে যামিনীর নিরাশ মনে আশার দীপ জ্বালেন কিন্তু শহরে চলে আসার পর আর ফিরে যাননি কখনও। পটভূমি পৃথক হলেও নারীদের অসহায়তা প্রকাশে দুটি কাহিনিই সমধর্মী। কিন্তু যামিনী কখনোই শকুন্তলা নয়। আধুনিক বাস্তবতার ছাঁচে ঢালা কাহিনি ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ শকুন্তলা-দুষ্যন্তের মতো প্রেমমুখ্য কাহিনি নয়। ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ কাহিনি পরিস্থিতির ওঠা-নামায় প্রেম-বিরহ-সন্তানজন্ম-ভাগ্যবিড়ম্বনা পরিশেষে মিলনে সমাপ্ত। কিন্তু যামিনী চিরবঞ্চিতা। শরৎচন্দ্রের ভাষায়, “সংসারে যারা শুধু দিলে, পেলে না কিছুই”-তাদের প্রতিনিধি যামিনী; নিরঞ্জন যার কাছে কখনোই ফেরে না এবং কথকও নিরঞ্জনের ছদ্মবেশে সেই একই প্রতারণাকে স্বীকৃতি দেয়।
উপসংহার
অভিশাপে বিস্মৃত রাজা দুষ্যন্ত অভিশাপ কেটে গেলে ভরত ও শকুন্তলাকে সসম্মানে, সাদরে গ্রহণ করতে দ্বিধা করেননি। পক্ষান্তরে, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে লেখক নগরের যন্ত্রণাদগ্ধ মানুষের মনে রোমান্টিকতা সৃজন করেও তার নাগরিক চরিত্রকেই মুখ্য করেছেন। সে চরিত্র যান্ত্রিক, রোমান্টিকতা তার ক্ষণিক বিলাসিতা। সে বিলাসিতায় যামিনী দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশার মতো কল্পনা মাত্র।
তাই সামগ্রিক বিশ্লেষণে বলা যায়, ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ বাংলা সাহিত্যের গতানুগতিক নারীবঞ্চনার গল্পের ধারায় স্বতন্ত্র।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর