টীকা লেখো: দাদু দয়াল
দাদু দয়াল
ভক্তিবাদী সাধক দাদু দয়াল (১৫৪৪ ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন বিশিষ্ট কবি এবং হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের অন্যতম প্রচারক।
(1) প্রথম জীবন: দাদু দয়ালের জন্ম বৃত্তান্ত কবীরের মতোই রহস্যাবৃত। এমনকি তাঁর জন্মস্থান রাজস্থান নাকি আহমেদাবাদ তা নিয়েও রয়েছে বিস্তর মতান্তর। তবুও দয়াল সম্পর্কে যতটুকু জানা যায় তা হল, দাদু দয়ালের পিতা (সম্ভবত লোদি রাম) ছিলেন একজন ধর্মান্তরিত মুসলমান এবং পেশায় ধুনুরি। রামানন্দ গোষ্ঠীর এক প্রবীণ সন্ন্যাসীর কাছে তিনি দীক্ষাগ্রহণ করেছিলেন।
(2) মতাদর্শ: দাদু দয়াল বলতেন, ‘আমি হিন্দু হতে চাই না, মুসলিমও হতে চাই না, আমি শুধু চাই দয়াময়কে।’ তাঁর মতে, ঈশ্বরের রাজ্যে হিন্দুর মন্দির, মুসলমানের মসজিদ এসব কিছুই নেই, সেখানে নেই কোনও সাম্প্রদায়িকতার স্থানও। দাদু কবীরের মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি কোনও শাস্ত্র মানতেন না। দাদু বলতেন, আত্মোপলব্ধিই মানবজীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত। যেহেতু সকল মানুষের অন্তরেই ঈশ্বর অধিষ্ঠান করেন, তাই মানুষে মানুষে কোনও ভেদ নেই।
(3) মতপ্রচার: দাদু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন সহজবোধ্য হিন্দি ভাষায় গ্রন্থ লিখতে। তাঁর দুই কন্যা- মাতাবাঈ ও নানীবাঈ বহু ভক্তিমূলক সংগীত রচনা করেছিলেন। মুঘল সম্রাট আকবরের সভাসদ ভগবানদাস তাঁর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন। ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে ফতেহপুর সিক্রিতে দাদুর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মুঘল সম্রাট আকবরের। দাদুর অন্যান্য শিষ্যদের মধ্যে সুন্দর দাস, রজ্জব দাস, মোহন দফতরি, তিল্য ছিলেন অন্যতম। এঁরা দাদুর কবিতা ও বাণীর সংকলন করেছিলেন। দাদুর অনুগামীরা দাদুপন্থী নামে পরিচিত। এই অনুগামীরা মূলত তিনটি শ্রেণি, যথা- বিরক্ত বা সাধু (অস্ত্রধারী), যে-কোনো রাজপুরুষের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত এবং বিস্তারকারী (গৃহী ভক্ত)-তে বিভক্ত ছিলেন।
(4) প্রভাব: দাদুর লক্ষ্য ছিল সর্বধর্মসমন্বয়, যাকে বাস্তবায়িত করতে তিনি পরব্রহ্ম সম্প্রদায় স্থাপন করেন। বস্তুত দাদু দয়ালের অসাম্প্রদায়িক মনোভাব হিন্দু-মুসলিম ঐক্যস্থাপনের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলেছিল। তাঁর কবিতা ও বাণীগুলি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর