ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা
ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য

ছাত্র সমাজের সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রবন্ধ রচনা

সূচনা

জাতির ভবিষ্যৎ হল বলিষ্ঠ ছাত্র-সমাজ। যখন সমাজ থাকে সুপ্ত, হয়ে যায় আত্মবিস্মৃত, তখন যুব-সমাজ তথা ছাত্র-সমাজই আগে জেগে ওঠে উচ্ছ্বাসভরা দেহ-মন, হৃদয়ে অসীম দুঃসাহস ও বাহুতে নবীন বল নিয়ে। চোখে তাদের স্বপ্ন-জয়ের প্রত্যাশা, বুকে তাদের অসীম সাহস, অসম্ভবকে জয় করার দুর্জয় প্রতিশ্রুতি। প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা তরুণ ছাত্র-সমাজ জাতির ভবিষ্যতের প্রতীক, জাতির সবচেয়ে বলিষ্ঠ অংশ।

সমাজের অপরাজেয় শক্তি ছাত্র-ছাত্রী

সমাজের অন্যায়-প্রবঞ্চনা-অসত্যের বিরুদ্ধে ছাত্র-সমাজের সংগ্রাম চিরন্তন। যেখানে অন্যায়-অবিচার, অসহায় মানুষের পীড়িতের ক্রন্দন-রোল সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের নির্ভীক উপস্থিতি, তাদের সোচ্চার প্রতিকারের জন্য। ছাত্র-সমাজ যদি তাদের বিকাশের ও কাজের উপযুক্ত সুযোগ পায় তাহলে তারা অনেক অসাধ্য-সাধন করতে পারে, সমাজ কল্যাণের বহু রুদ্ধ দ্বার উদ্ঘাটিত হতে পারে। কিন্তু অনেক সময় সামাজিক দায়-দায়িত্ব অর্পিত হয় বার্ধক্যে জর্জরিত বয়স্কদের ওপর। যার ফলে সমাজ-কল্যাণে এগিয়ে এসে ছাত্র-ছাত্রীরা যে কাজ সহজে করতে পারত তা বহুক্ষেত্রে বাস্তবায়িত হয় না, জরাগ্রস্ত সমাজ এই দুর্জয় শক্তির খোঁজ রাখে না। যে ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে জরাগ্রস্ত সমাজকে প্রাণচঞ্চল করে তুলতে পারত তারা সামাজিক বাধা-বিপত্তির দুর্ভেদ্য-প্রাচীরের গন্ডীতে আবদ্ধ হয়ে অনেক সময় সমাজ-বিরোধী কাজে জড়িয়ে ফেলে নিজেদের।

ছাত্র-সমাজ ও সামাজিক নেতৃত্ব

ছাত্র-সমাজ কেন পথভ্রষ্ট হয় তার সঠিক কারণ অনুসন্ধান না করে অভিভাবকরা দোষের দায়ভাগ তাদের ওপর চাপিয়ে অনেক সময় নিজেদের নির্দোষ বলে তা প্রমাণ করেন। ছাত্র-ছাত্রীরা ভোরের নবারুণ, অফুরন্ত তেজ-দীপ্তিতে ভরপুর। তাদের চোখ স্বপ্নবিভোর-নতুন সৃষ্টিকে আলিঙ্গন করার, ন্যায়-নীতি-অগ্রগতিকে আহ্বান করার। অভিভাবকদের দিক-নির্দেশনা ও কর্মপ্রবর্তনার অভাবে অফুরন্ত গতি ও কর্মোদ্যমতার উৎস ছাত্র-সমাজ বিপরীতমুখী হলে তাদের অফুরন্ত কর্মশক্তি বিপরীতগামী হয়ে ধ্বংসের নেশায় মেতে ওঠে।

ছাত্র-ছাত্রীদের অনৈতিককর্মে লিপ্ত হওয়া কখনই বাঞ্ছনীয় নয়-নিন্দনীয়; কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীদের বিপথগামী হওয়ার নেপথ্যে কারা দায়ী তাঁদের দায়িত্ব সঠিক না সম্পাদন করার জন্য, তা অনুসন্ধান করা খুবই বাঞ্ছনীয়। ছাত্র-ছাত্রীরা অভিভাবকের উচ্চাশা পূরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার আজ, পর্বত-প্রমাণ পাঠ্যসূচির গুরুভারে জর্জরিত, দুর্নীতি ও বিকৃতির বিষফল-ভোগী। যখন দেশ ছিল পরাধীন ছাত্র-ছাত্রীরা জীবন বাজি রেখে এগিয়ে গেছে দেশ-মায়ের মুক্তির জন্য, ফাঁসির-মঞ্চে গেয়েছে জীবনের জয়গান। তাদের আত্মত্যাগের অবিস্মরণীয় কাহিনি আজও ইতিহাসের পাতায় জ্বলজ্বল করছে। বিমান ক্রাই

ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি

সমাজের সর্বক্ষেত্রে থাবা বসিয়েছে প্রভুত্ব বিলাসী রাজনীতি। রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে ছাত্র-সমাজ বহু ক্ষেত্রে রাজনীতির শিকার হয়, অধ্যয়ন থেকে তাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। রাজনীতি বিশারদেরা হয় রাজনীতি-ব্যবসায়ী, তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাজনৈতিক সুবিধা প্রাপ্তির দিকে।

কারণ

আজ ছাত্র-ছাত্রীদের চোখের সামনে থেকে মহান-আদর্শের রঙিন স্বপ্ন অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, ন্যায়-নীতিবোধ স্বার্থপরের জাঁতাকলে ম্রিয়মান, বস্তুতান্ত্রিক সমাজে ভোগ-সুখ অর্থই পরমার্থ, নাই আদর্শের হাতছানি-তাদের কর্মপ্রেরণার, দায়িত্ব-চেতনার উৎস মরুপথে হারিয়ে ফেলছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ, ছাত্র-ছাত্রীরা পথহারা, উদ্ভ্রান্ত। এমন ভ্রান্ত অভিভাবকত্বের দম্ভকে সম্বল না করে যাঁরা বয়সে প্রবীণ তাঁদের চিন্তার সময় এসেছে, ছাত্র-ছাত্রীদের মহত্তর ও উন্নত সামাজিক দায়িত্বে অভিষিক্ত করা। অমরা ছাত্র-ছাত্রীদের সমাজ-কল্যাণ কর্মে উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি, ক্ষুদ্র-স্বার্থে, দলাদলিতে তাদের জড়িয়ে দিচ্ছি।

সমাজ-সেবা ও ছাত্র-সমাজ

ভারতের মতো দেশে, যেখানে অন্তহীন দুঃখ-দারিদ্র, নিরক্ষরতা-অশিক্ষা-কুশিক্ষার শুষ্কতাপে যেখানে নিরানন্দ মরুভূমি বসে আছে স্থায়ী আসন পেতে, যেখানে রোগ-তাপ-জর্জরতায় ও প্রাকৃতিক দৈব-দুর্বিপাকে প্রতিবছর বিপন্ন হয় অজস্র মানুষ, ছাত্র-ছাত্রীদের সেখানে সমাজে ভূমিকা অসামান্য। অর্থাৎ লোক-সেবার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে ছাত্র-সমাজের প্রয়োজনীয়তা খুবই বেশি। অজ্ঞানান্ধ-মানবতার আর্ত-হাহাকারে আকাশ যখন পূর্ণ হয়ে ওঠে, বাতাস ভারী হয় দুঃখ-বেদনায় তখন আমাদের দেশের ছাত্র-সমাজের কি কিছুই করণীয় নেই? ছাত্র-ছাত্রীরা নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারে না চিরকাল। তাই তাদের দেখা যায় লোকসেবায়-সমাজসেবায় স্বেচ্ছাকৃতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে।

উপসংহার

সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অভিভাবকেরা তাঁদের মহান মানবতার দিকটি সম্বন্ধে উদাসীন, এই ব্যর্থতা তাঁদের অভিভাবকত্বের ব্যর্থতা। সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগ জর্জরতার মূলে আছে শতাব্দী-লালিত অশিক্ষা। অশিক্ষার জগদ্দল পাথরকে জনজীবনের বুক থেকে সরাতে পারলে জনগণকে সচেতন ও স্বনির্ভর জীবন-যাপনে উদ্বুদ্ধ করে লোক-সেবার মহত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন সম্ভব হতে পারে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করে তুলতে পারলে উচ্ছৃঙ্খলতা ও বিপথগামিতা প্রতিরুদ্ধ হয়ে তারা ধ্বংসাত্মক ও নৈরাজ্যসৃষ্টির অপচেষ্টা থেকে নিরত হবে ও দায়িত্বশীলতার উন্মেষ ঘটবে।

আরও পড়ুন – নেলসন ম্যান্ডেলা প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment