গীতা অনুসারে নিষ্কাম কর্ম কী? এই তত্ত্ব কি গ্রহণীয়

গীতা অনুসারে নিষ্কাম কর্ম কী? এই তত্ত্ব কি গ্রহণীয়

গীতা অনুসারে নিষ্কাম কর্ম কী? এই তত্ত্ব কি গ্রহণীয়
গীতা অনুসারে নিষ্কাম কর্ম কী? এই তত্ত্ব কি গ্রহণীয়

নিষ্কাম কর্ম

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন প্রকৃতি। একজনের কাছে যা মুখ্য লক্ষ্য, অন্যজনের কাছে তা গৌণ হতে পারে। তবে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভের ক্ষেত্রে মানুষকে কর্ম করতেই হয়। একজন ধর্ম পালনের জন্য কর্ম করে, অপরজন অর্থের জন্য, আবার কেউ কর্মের জন্য এবং কিছু সংখ্যক মানুষ মোক্ষের জন্য কর্ম করে। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যেভাবে কর্ম করার উপদেশ দিয়েছেন তা হল ‘নিষ্কাম কর্ম’। শ্রীকৃয় এ প্রসঙ্গে বলেছেন-

"কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেযু কদাচন।
মা কর্মফলহেতুর্ভূমা তে সঙ্গোহত্ত্বকর্মণি।” (২/৪৭)

“কর্তব্যকর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে কখনো অধিকার নেই, সুতরাং তুমি কর্মফলের হেতু হয়ো না এবং কর্মত্যাগেও যেন তোমার আসক্তি না হয়।” অর্থাৎ “কর্ম করে যাও ফলের আশা কোরো না”। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যুদ্ধে নিযুক্ত করার জন্য নিষ্কামভাবে কর্ম করার কথা বলেছেন। যে কর্ম সম্পাদনের পশ্চাতে জীবের কোনো কামনা থাকে না, অর্থাৎ কামনারহিত যে কর্ম, সেই কর্মকে নিষ্কাম কর্ম বলে। রাগ, দ্বেষ, মোহমুক্ত হয়ে কর্ম সম্পাদনই নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠান।

নিষ্কাম কর্মে বিষয়ের প্রতি আসক্তি থাকে না। ফললাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে না। ফলের আকাঙ্ক্ষা না থাকায় নিষ্কাম কর্ম বন্ধনের হেতু হয় না, ফললাভের জন্য জীবকে বারংবার জন্মগ্রহণ করতে হয় না। নিষ্কামভাব না থাকলে ব্যক্তি শান্ত হয় না এবং যার শান্তি নেই সে ব্যক্তি সুখী হবে কী প্রকারে? তাই কামনা শূন্য হয়ে কর্ম করার কথা বলা হয়েছে।

জলপূর্ণ সমুদ্রে যেমন নদ-নদীর জলরাশি চারিদিক থেকে এসে মিশে যায়, কিন্তু সমুদ্র নিজ মহিমায় অচল রূপে বিরাজ করে, তেমনি সংযমী মানুষের মধ্যে সকল বিষয় প্রবেশ করে বিলীন হয়ে যায়, কোনোরূপ বিকার উৎপন্ন করে না। তিনি কর্মের কোনোরূপ ফলের আশা করেন না, তিনি পরমশান্তি লাভ করেন।

নিষ্কাম কর্ম তত্ত্বের গ্রহণীয়তা

এখন প্রশ্ন হতে পারে – নিষ্কাম কর্ম কি কর্মত্যাগ ও কর্মবিমুখতার আদর্শ প্রচার করে? এর উত্তরে গীতার শ্লোকে বলা হয়েছে “নিয়তং কুরু কর্ম”- কর্ম না করা অপেক্ষা কর্ম করাই শ্রেয়। কর্ম না করলে শরীর রক্ষা হবে না। তা ছাড়া সবরকম কর্মই বন্ধনের কারণ নয়। সকাম কর্মই একমাত্র বন্ধনের কারণ হয়।

জ্ঞানী ব্যক্তি নিষ্কাম কর্মের অনুষ্ঠান করেন। যে ব্যক্তি দুঃখে স্থির, সুখে স্পৃহাহীন ও আসক্তিশূন্য, ভয়শূন্য, ক্রোধশূন্য তিনিই বুদ্ধিমান স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তিই নিষ্কাম কর্মের অধিকারী হন।

এখন সংশয় হতে পারে নিষ্কাম কর্ম কি উদ্দেশ্যবিহীন? উদ্দেশ্য ছাড়া কোনো কর্ম করা যায় না। নিষ্কাম কর্ম যদি উদ্দেশ্যহীন হয় তবে এই কর্মের অনুষ্ঠান অসম্ভব। এর উত্তরে বলা যায় যে- নিষ্কাম কর্ম উদ্দেশ্যহীন নয়, সকাম কর্মেরও উদ্দেশ্য থাকে। পার্থক্য হল সকাম কর্মের উদ্দেশ্য হল বিষয়াসক্তি, যা জীবের বন্ধনের কারণ। অপরদিকে নিষ্কাম কর্মের উদ্দেশ্য হল পরম পুরুষার্থ অর্থাৎ মোক্ষলাভ করা। তাই বলা যায় গীতা অনুসারে নিষ্কাম কর্মতত্ত্ব গ্রহণীয়।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment