গীতায় বর্ণিত কর্মযোেগ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

গীতায় বর্ণিত কর্মযোেগ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

গীতায় বর্ণিত কর্মযোেগ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো
গীতায় বর্ণিত কর্মযোেগ ধারণাটি ব্যাখ্যা করো

কর্মযোগ

‘কর্ম’ ও ‘যোগ’- এই দুটি শব্দ যুক্ত হয়ে ‘কর্মযোগ’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদ্ গীতায় ‘কর্মযোগ’ শব্দটিকে কর্মের কৌশল অর্থে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কর্মযোগ বলতে কর্মের সেই পদ্ধতি বা প্রণালীকে বোঝানো হয়েছে যেখানে কর্মের সিদ্ধি-অসিদ্ধি, লাভ-ক্ষতি, সুখ-দুঃখ প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে সমমনোভাবাপন্ন হয়ে উদাসীন ও নিরাসক্ত থেকে নিষ্কামভাবে ও নিঃস্বার্থভাবে কর্ম সম্পাদন করা হয়। ভগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ কর্মযোগ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বারবার বলেছেন কর্ম ফললাভের উপায় নয়, কর্মই লক্ষ্য।

গীতায় কর্মযোগের ধারণা

শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বরকেই সমস্ত জীবের স্রষ্টা ও পরিচালক বলে উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ ঈশ্বরকে যন্ত্রী ও সমস্ত মানুষকে যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ঈশ্বর আমাদের সকল কর্মের নিয়ামক। তাই গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, আমরা কর্ম করতে পারি; কর্মে আমাদের অধিকার আছে। কিন্তু যেহেতু আমরা কর্মের প্রকৃত কর্তা নই, তাই কর্মফলের প্রতি আমাদের কোনো আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত নয়।

কর্মযোগের শিক্ষা এই যে, আমাদের সমস্ত ইন্দ্রিয়, সমস্ত কর্মের পশ্চাতে আত্মা আছে। এই আত্মা দেহ, মন ও ইন্দ্রিয়াদি থেকে স্বতন্ত্র। অথচ দেহ-ইন্দ্রিয়াদি আত্মায় অধিষ্ঠিত থেকেই নিজ নিজ কর্ম সম্পাদন করে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে সূর্য যেমন সকল বস্তুকে প্রকাশিত করলেও ঐ সকল বস্তুর দোষ-গুণে লিপ্ত হয় না, সেইরকম আত্মাও জীবের কোনো কর্মে লিপ্ত হন না।

গীতায় কর্মযোগের তিন প্রকার ব্যাখ্যা

গীতায় নিষ্কাম কর্ম বা কর্মযোগের তিন প্রকার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

• প্রথম ব্যাখ্যা: “সমত্বম্ যোগঃ উচ্যতে” (২/৪৮), অর্থাৎ যোগী বা স্থিতধী ব্যক্তি কখনোই কর্মের সফলতায় বা বিফলতায় আনন্দিত বা বিষাদগ্রস্ত হন না, তাঁর মনে একই ভাব বর্তমান থাকে।

• দ্বিতীয় ব্যাখ্যা: “যোগঃ কর্মসু কৌশলম্” (২/৫০), অর্থাৎ যোগ হল একপ্রকার কৌশল বা কর্মপ্রণালী যা সফলতায় ও বিফলতায় সমভাব বজায় রেখে পরমগতির দিকে ধাবিত হয়। একে কৌশল বলা হয়েছে এই কারণে যে, কর্ম স্বভাবতই পাপ বা পুণ্য উৎপন্ন করে আত্মার বন্ধনের কারণ হয়। কিন্তু এই কর্মকে ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জনপূর্বক অনুষ্ঠানের দ্বারা মুক্তির উপায়ে পর্যবসিত করা সম্ভব।

• তৃতীয় ব্যাখ্যা: “যোগঃ দুঃখ সংযোগ বিয়োগঃ” (৬/২৩), অর্থাৎ যোগ হল সর্বপ্রকার দুঃখ থেকে বিযুক্ত হওয়া, যা একমাত্র সম্ভবপর হয় দুঃখ ও সুখের সমভাব বর্তমান থাকলে।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment