গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো
গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো

ভিনসেন্ট শিয়েন (Vincent Sheean) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ লিড, কাইন্ডলি লাইট (Lead, Kindly Light)-এ বলেন যে, সত্যাগ্রহ ধারণাটি গান্ধির চূড়ান্ত আবিষ্কার বা সৃষ্টি।

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আন্দোলনের বিভিন্ন রূপ 

গান্ধিজির মতে, সত্যাগ্রহের বহুবিধ পথ যেমন- অসহযোগ (Non-Cooperation), আইন অমান্য (Civil Disobedience), অনশন (Fasting), ধর্মঘট (Strike), পিকেটিং (Picketing), হিজরাত (Hijrat), গঠনমূলক কর্মসূচী (Constructive Programme), অন্যান্য পদ্ধতি (Others) I 

[1] অসহযোগ : অসহযোগ কথাটির অর্থ হল নিজের জনগণের সপক্ষে সরকারকে নিয়ে আসা। যে-কোনো দেশের শাসনব্যবস্থা সরকার ও জনগণ উভয়ের সহযোগিতায় গড়ে ওঠে। কিন্তু জনগণ যদি সহযোগিতা প্রত্যাহার করে, তাহলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়ে। গান্ধিজি অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে এই পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটান। তাঁর মতে এ হল এক প্রতিবাদ, দেশবাসীর মধ্যে মর্যাদা ও ক্ষমতার বোধ জাগিয়ে তোলার অন্যতম চেষ্টা। সত্যাগ্রহের অস্ত্রাগারে অসহযোগ হল প্রধান অস্ত্র। তবে অসহযোগ ছিল সত্য, নীতি-নৈতিকতা ও অহিংসার পথ ধরে সরকারের সহযোগিতা আদায়ের উপায়।

[2] আইন অমান্য: আইন অমান্য অনুগামীদের নিয়ে পদযাত্রায় গান্ধিজি ডান্ডি যাত্রা সশস্ত্র বিপ্লবের বিকল্প রূপ, যাকে গান্ধিজি একটি বিশুদ্ধতম সংবিধানসম্মত বিক্ষোভের রূপ বলে বর্ণনা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে হিন্দ স্বরাজ গ্রন্থে গান্ধিজি বলেন, সরকারের আইন যদি নাগরিকদের স্বার্থবিরোধী হয় বা তাদের আদর্শ মূল্যবোধকে আঘাত করে তাহলে নাগরিকরাও সেই আইন মেনে চলতে বাধ্য নন। তাই তারা সংঘবদ্ধভাবে সেই আইনকে প্রতিরোধ করতে পারে।

[3] অনশন: সত্যাগ্রহের সবচেয়ে কষ্টদায়ক ও সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র হিসেবে ‘অনশন’ পদ্ধতিটি উল্লেখযোগ্য। অনশনের আহবান আসে আত্মার গভীর থেকে। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ শাসকের ভারত ছাড়া করার জন্য গান্ধিজি ২১ দিনের এক ঐতিহাসিক অনশনে বসেছিলেন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে অনশনকারী হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত থাকবে। তিনি অনশনকে আবেগপূর্ণ অগ্নিময় হাতিয়ার (Fiery Weapon) বলেছেন। এটি হল একটি আত্মিক কর্মদ্যোগ। 

[4] ধর্মঘট: গান্ধিজির মতে, ধর্মঘট স্বেচ্ছাধীন, বিশোধক দুঃখ-যন্ত্রণা, যা বিপথগামী প্রতিপক্ষকে পরিবর্তিত করার জন্য গ্রহণ করা হয় (“Strike was a voluntary, purificatory suffering undertaken to convert the erring opponent”)। তিনি মনে করতেন ধর্মঘটীরা যুক্তিযুক্ত বিচার-বিবেচনা করে তাঁদের দাবিগুলি উপস্থাপন করবেন।

[5] পিকেটিং: পিকেটিং হল অহিংসভাবে যুক্তি দিয়ে জনমত তৈরি অথবা বক্তব্যের মাধ্যমে কিছু বিষয় সম্পর্কে বোঝানোর পদ্ধতি। পিকেটিং করার উদ্দেশ্য ছিল নৈতিক সুখ-শান্তি ও জাতির আর্থিক ভিত্তিকে নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা।

[6] হিজরাত: কোনো ব্যক্তির পক্ষে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে সামিল হওয়া অসম্ভব হলে তিনি নিজ বাসস্থান বা পৈত্রিক ভিটে, আত্মীয়-পরিজন পরিত্যাগ করে অন্য স্থানে গমন করতে পারেন। বলা যায়, হিজরাত হল নিজ ইচ্ছায় স্থায়ী বাসস্থান ত্যাগ করে অন্যত্র গমন (A Voluntary migration from permanent place of residence)। এটি করতে মানসিকভাবে কঠোর হতে হয়। কারণ ‘হিজরাত’ অনুসরণকারীকে তার প্রিয় জন্মস্থান, ছেলেবেলায় কাটানো স্মৃতি ত্যাগ করতে হয়। তাই এটি } নৈতিক ও আত্মিক শক্তির পরিচয় দেয়।

[7] গঠনমূলক কর্মসূচি: গঠনমূলক কর্মসূচি বা পরিকল্পনা ছাড়া সত্যাগ্রহ পক্ষপাতদুষ্ট হাতের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে গান্ধি মনে করতেন।

[৪] অন্যান্য পদ্ধতি: পূর্বে আলোচিত পদ্ধতিগুলি ছাড়াও গান্ধিজি অন্য আরও কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করেছিলেন। যেমন-আবেদন- নিবেদনের নীতি, অর্থনৈতিক বয়কট, পারস্পরিক আলোচনা ও মতান্তর, প্রচার, সভাসমিতি ও পত্রপত্রিকা এবং প্রয়োজন হলে বিকল্প সরকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

আরও পড়ুন – সরকারের বিভিন্ন রূপ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment