ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তিগুলি বিশ্লেষণ করো

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তিগুলি বিশ্লেষণ করো

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তিগুলি বিশ্লেষণ করো
ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তিগুলি বিশ্লেষণ করো

ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিপক্ষে যুক্তি

আধুনিক রাষ্ট্রে সরকারের যাবতীয় কাজকর্ম পরিচালনা করার জন্য প্রধান তিনটি বিভাগ রয়েছে। এগুলি হল-আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। আইনবিভাগের কাজ আইন তৈরি করা, শাসন বিভাগের কাজ ওই আইন প্রয়োগ করা আর বিচার বিভাগের কাজ ওই আইন অনুসারে বিচার কাজ সম্পাদন করা। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির মূল কথা হল রাষ্ট্রপরিচালনার তিন প্রধান স্তম্ভ আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতার সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য। বস্তুত, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি বলতে এমন এক ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগ যথাক্রমে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে।

বিপক্ষে মুক্তি

[1] বাস্তবায়ন দুরূহ: ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির বিরুদ্ধে প্রধান সমালোচনা হল বাস্তবে এই নীতির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ সম্ভব নয়। কারণ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের প্রধান তিনটি বিভাগকে কখনোই পুরোপুরি স্বতন্ত্র করা যায় না।

[2] পূর্ণ প্রয়োগ অনভিপ্রেত: জন স্টুয়ার্ট মিল, ব্লুন্টস্ট্সি, ফাইনার, ল্যাস্কি প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর মতে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিটির পূর্ণ প্রয়োগ আদৌ কাম্য নয়। অধ্যাপক ল্যাস্কির মতে আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে কাজ করলে এই স্বাতন্ত্র্য বিরোধ ডেকে আনবে। ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পটভূমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বয়ং ম্যাডিসন ও অন্য যুক্তরাষ্ট্রীয়পন্থীরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল ছিলেন যে, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রশাসন অচল হয়ে পড়বে।

[3] ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ নয়: গিলক্রিস্ট, স্যাবাইন প্রমুখ আধুনিক লেখকরা ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতিকে ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলে মেনে নেননি। কারণ, আইন বিভাগ যদি স্বৈরাচারী হয়, তবে তার দ্বারা প্রণীত স্বৈরাচারী আইনকে কার্যকর করতে শাসন বিভাগ যেমন বাধ্য থাকে, তেমনি সেই আইন অনুসারে বিচারকার্য সম্পাদন করতে বিচার বিভাগও বাধ্য। সুতরাং, ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ কখনোই ব্যক্তিস্বাধীনতার রক্ষাকবচ হতে পারে না।

[4] তিন বিভাগের অসম ক্ষমতা: সমালোচকরা শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সমক্ষমতাসম্পন্ন বলতে রাজি হননি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন বিভাগ তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষমতার অধিকারী। কারণ আইন বিভাগের প্রণীত আইন অনুসরণ করে শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে চলতে হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে আইনসভা হল চূড়ান্ত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।

[5] জৈব মতবাদীদের সমালোচনা: বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্লুন্টসলির মতে সরকার হল জীবদেহের মতো। দেহ থেকে মস্তিষ্ককে পৃথক করলে জীবদেহের মৃত্যু যেমন অবশ্যম্ভাবী, ঠিক তেমনি সরকারের প্রধান বিভাগগুলিকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী।

[6] মার্কসবাদী সমালোচনা: মার্কসবাদী সমালোচকরা সমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ তত্ত্বের সাফল্য সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। মার্কসবাদীদের মতে, অসমাজতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সরকার এক বিশেষ শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে চলে। কাজেই এই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ অর্থহীন।

[7] সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় প্রয়োগ অসম্ভব: যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বা মন্ত্রীসভা-চালিত শাসনব্যবস্থা রয়েছে (যেমন ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি), সেখানে আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় থাকায় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির প্রয়োগ সম্ভব নয়।

উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, বাস্তবে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পূর্ণ প্রয়োগ কখনোই কাম্য নয়। তবে আংশিক ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রয়োজন। কারণ ন্যায় ও নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বাতন্ত্র্য অপরিহার্য।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment