কর্ম-কর্তব্যবাদ কী? এর বিভিন্ন রূপ উল্লেখ করো

কর্ম-কর্তব্যবাদ কী? এর বিভিন্ন রূপ উল্লেখ করো

কর্ম-কর্তব্যবাদ কী? এর বিভিন্ন রূপ উল্লেখ করো

কর্ম-কর্তব্যবাদ

কর্ম-কর্তব্যবাদ অনুসারে দাবি করা হয় যে, কোনো বিশেষ পরিস্থিতির বিচারেই আমাদের ঠিক করতে হয় যে, কোনো কর্ম বা কর্মনীতি যথার্থ কি যথার্থ নয়। এক্ষেত্রে তাই কোনো সার্বিক কর্মনীতিকে অনুসরণ করা হয় না। এরূপ মতবাদের সমর্থকরূপে উল্লেখ করা যায় যে, ই এফ ক্যারিট (E F Carritt), এইচ এ পিচার্ড (H A Prichard) এবং জে বাল্লার (J Butler) প্রমুখের নাম। এঁরা সকলেই দাবি করেন যে, সার্বিক কোনো নীতি বা নিয়ম নয়, পরিস্থিতির বিচারই হল কর্মে যথার্থতা বিচারের প্রকত মানদণ্ড। কর্ম-কর্তব্যবাদকে আবার দু-ভাগে ভাগ করা যায়, যথা- [1] চরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ (Extreme form of Deontolgoy Theory) এবং [2] নরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ (Moderate form of Deontology Theory)।

কর্ম-কর্তব্যবাদ-এর বিভিন্ন রূপ

চরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ

চরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ অনুসারে শুধু পরিস্থিতির বিচারের ওপরই কর্মের যথার্থতা নির্ণয়ের জন্য গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতির বিচার ছাড়া আর অন্য কোনো বিচার্য বিষয়কেই এখানে গ্রহণ করা হয়নি। চরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ তাই পরিপূর্ণভাবে কর্মনীতিকে উপেক্ষা করেছে। চরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ অনুসারে তাই আমাদের সবসময়ই চিন্তা করতে হয় যে, এই পরিস্থিতিতে আমাদের ঠিক কী করা উচিত? অর্থাৎ বলা যায় যে, পরিস্থিতির তাৎক্ষণিক বিচারে আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করে নিতে হয়, এক্ষেত্রে কর্মনীতির কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই।

কর্তব্যবাদের এরূপ রূপটিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সার্বিক কর্মনীতি বলতে কোনো কিছুই প্রকৃতপক্ষে নেই। আর যদি তা থাকেও তার প্রয়োগ একেবারেই অসম্ভব। এরূপ মতবাদীরা তাই দাবি করেন যে, উচিতার্থক নৈতিক বচনগুলি সবসময়ই বিশেষ বিশেষ ঘটনার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, কোনো সার্বিক ঘটনার ক্ষেত্রে নয়। সুতরাং উচিতার্থক বচনগুলি হল বিশেষ বচন। এই সমস্ত বিশেষ বচন সবসময়ই এক-একটি বিশেষ পরিস্থিতিকে সূচিত করে, কোনো সার্বিক পরিস্থিতিকে নয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে বচনগুলি তাই একপ্রকার অনুজ্ঞা বা আদেশরূপে উপস্থাপিত হয়, যেমন-তুমি এটি করো অথবা তুমি এটি কোরো না।

চরম কর্তব্যবাদীরা তাই বলেন-প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত অথবা প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া উচিত-এরূপ কোনো সার্বিক নিয়ম বা নীতি নেই, যা সকলেই মানতে বাধ্য। আর থাকলেও, এই ধরনের নীতিগুলি একেবারেই অচল এবং এগুলির কোনো বাস্তব প্রয়োগও নেই। সে কারণেই বলা যায় যে, পরিস্থিতি অনুসারে বিচার করে বলতে হয় এই পরিস্থিতিতে তোমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত বা উচিত নয়। অথবা এই পরিস্থিতিতে তোমার প্রাপ্য ফিরিয়ে দেওয়া উচিত বা উচিত নয় ইত্যাদি। কর্ম-কর্তব্যবাদী বাটলার (Butler) তাই সংগতভাবেই উল্লেখ করেছেন যে, কোনো সৎ ব্যক্তি কর্ম সম্পাদন করার পূর্বে, সার্বিক কোনো নিয়ম বা নীতিকে অনুসরণ না করে, শুধু নিজেকেই প্রশ্ন করে যে, এই বিশেষ পরিস্থিতিতে সে যা করতে চলেছে-তা এই পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক কি ঠিক নয়।

নরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ

নরমপন্থী কর্ম-কর্তব্যবাদ অনুসারেও দাবি করা হয় যে, ঘটনার পরিস্থিতি বিচার করেই কোনো কাজ করা উচিত কি উচিত নয় তা নির্ধারণ করা হয়। এর পিছনে কোনো সার্বিক নৈতিক নিয়ম নেই। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, নরমপন্থী কর্তব্যবাদীরা উচিতার্থক সার্বিক নৈতিক নিয়মের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করেননি। তাঁরা আরও বলেন যে, বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির বিচার করে আমাদের মধ্যে ঔচিত্য সংক্রান্ত একপ্রকার বোধ জন্মায়। এরূপ নৈতিক বোধের ওপর ভিত্তি করে একটি সার্বিক নৈতিক নিয়ম গঠন করা হলেও হতে পারে। এরূপ সার্বিক নিয়মের সম্ভাবনাকে তাই তাঁরা স্বীকার করে নিয়েছেন।

অবশ্য এই ধরনের নিয়মগুলিকে তাঁরা কখনোই মুখ্য হিসেবে গ্রহণ করেননি। এগুলিকে তাঁরা গৌণ বিষয়রূপেই উল্লেখ করেছেন। তাঁদের মতে, একমাত্র বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির বিচারই মুখ্যরূপে গণ্য এবং এগুলিকেই অনুসরণ করে কোনো কর্ম বা কর্মনীতির নৈতিক বিচার করা হয়। সংক্ষেপে তাই বলা যায় যে, নরমপন্থী কর্তব্যবাদ পুরোপুরিভাবেই পরিস্থিতিনির্ভর হলেও, তা সার্বিক নিয়মের সম্ভাবনাকে একেবারেই অস্বীকার করেননি। তাঁরা যা বলতে চান, তা হল বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতির বিচার করে সার্বিক কর্মনীতি গঠন করা হলেও হতে পারে।

আরও পড়ুন – নৈতিক মতবাদরূপে কর্তব্যবাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment