কর্মবাদ কি মোক্ষপ্রাপ্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ

অথবা, কর্মবাদের সঙ্গে মোক্ষপ্রাপ্তির কি কোনো বিরোধ আছে?

কর্মবাদ কি মোক্ষপ্রাপ্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ
কর্মবাদ কি মোক্ষপ্রাপ্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ

কর্মবাদ কি মোক্ষপ্রাপ্তির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ

সর্বজনীন নীতি হিসেবে এ কথা স্বীকার করা হয় যে ‘কর্মমাত্রই জীবকে ফলভোগ করতেই হবে’। কোনো জীবের পক্ষেই কর্মফলকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এই কর্মফল ভোগ করার জন্যই জীবকে পুনঃপুন জন্মগ্রহণ করতে হয় এবং সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। কর্মনিয়ম যদি অপ্রতিরোধ্য হয়, কর্মনিয়মকে যদি লঙ্ঘন করা না যায় তাহলে ভারতীয় নীতিশাস্ত্রকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়- ‘মোক্ষপ্রাপ্তি কীভাবে সম্ভব?’ ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে যারা চতুর্বর্গ পুরুষার্থকে স্বীকার করেন তারা মোক্ষকে পরমপুরুষার্থ বলেন। কর্মমাত্রই যদি ফল দান করে তাহলে জন্মজন্মান্তরে সেই ফলের দ্বারা আমরা আবদ্ধ হয়ে থাকব। সুতরাং পরমপুরুষার্থ মোক্ষকে জীব কোনোভাবেই লাভ করতে পারবে না। যে ব্যক্তি সৎ কর্ম সম্পাদন করে তাকেও ফললাভের জন্য পুনরায় জন্মগ্রহণ করতে হয়, ঠিক যেমন অসৎ কর্ম যে ব্যক্তি সম্পাদন করে তাকে অসৎ কর্মের ফলভোগের জন্য জন্মগ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ পুণ্য সঞ্চয় করেও সৎ কর্মের সম্পাদন করেছেন যে ব্যক্তি, সংসার দশা থেকে তিনিও মুক্তি লাভ করতে পারেন না। তাহলে কি কর্মনিয়ম মোক্ষপ্রাপ্তিকে প্রতিহত করে? মোক্ষের ধারণা কি কর্মবাদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ?

ব্যাখ্যা

এই প্রশ্নের সমাধানের জন্যই ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে নিষ্কাম কর্মের ধারণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে নিষ্কাম কর্মতত্ত্বের উপদেশ দিয়েছেন। কোনো ফলের আকাঙ্ক্ষা করে যখন কর্ম সম্পাদন করা হয়, তখন সেটিকে সকাম কর্ম বলে। সকাম কর্ম সম্পাদন করলে মানুষকে কর্মের ফলভোগের জন্য বারবার জন্মগ্রহণ করতে হয় এবং বন্ধনদশা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় না। অপরপক্ষে নিষ্কাম কর্ম করলে ফলের আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাতে যেমন কর্মফল সঞ্চিত হয় না, তেমন সঞ্চিত কর্মফল বিনষ্ট হয়। অহংবোধকে দূরে রেখে আত্মজ্ঞান উপলব্ধি হওয়ার পর ব্যক্তি কামনাশূন্য হয়ে যে কর্ম সম্পাদন করে তাই হল নিষ্কাম কর্ম। এই কর্মে কামনা থাকে না তাই ফল উৎপন্ন হয় না এবং ফললাভের জন্য জীবকে পুনরায় জন্মগ্রহণ ও সংসার বন্ধনচক্রে আবর্তিত হতে হয় না। নিষ্কাম কর্ম সম্পাদন করে জীব পুনর্জন্ম থেকে তথা সংসারদশা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। অর্থাৎ কর্মের নিয়ম কিন্তু নিষ্কাম কর্মের প্রতি প্রযোজ্য নয়। এইরূপ কর্ম, কর্মনিয়মের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।

সুতরাং বলা যায় যে কর্মবাদের সঙ্গে মোক্ষপ্রাপ্তির কোনো অসংগতি নেই।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment