কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বৃত্রসংহার সার্থক সাহিত্যিক মহাকাব্য নয়-আলোচনা করো
‘বৃত্রসংহার’ মহাকাব্য নয়
কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘বৃত্রসংহার’ কাব্য (প্রথম খন্ড-১৮৭৫ ও দ্বিতীয় খণ্ড-১৮৭৭) মধুসূদন পরবর্তী কাব্যধারায় গুরুত্বপূর্ণ স্বাক্ষর রাখলেও, কাব্যটিকে যথার্থ সাহিত্যিক মহাকাব্য বলা যায় না নিম্নলিখিত কারণে-
মৌলিকতার অভাব
কাব্যকাহিনি ও বিষয় সন্নিবেশে মহাকাব্যের উপযোগী হলেও চরিত্রাঙ্কনে হেমচন্দ্র মধুসূদনের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-কে হুবহু অনুকরণ করেছেন। এ বিষয়ে তাঁর মৌলিকতা অতি সামান্য। বস্তুত, ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রায় প্রত্যেকটি চরিত্রের সঙ্গে ‘বৃত্রসংহার’-এর চরিত্রের গভীর সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। রাবণের সঙ্গে বৃত্রাসুর চরিত্রের, ইন্দ্রের সঙ্গে রামচন্দ্রের, লক্ষ্মণের সঙ্গে জয়ন্ত, মেঘনাদের সঙ্গে রুদ্রপীড়ের, সীতার সঙ্গে শচী চরিত্রের মিল পাঠকের চোখ এড়িয়ে যায় না। ছন্দরচনায় অক্ষমতা: ‘বৃত্রসংহার’ কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দ মিলহীন পয়ারে পরিণত হয়েছে।
শব্দ যোজনা
শব্দ যোজনার ক্ষেত্রে, কবি হেমচন্দ্র মাইকেল ব্যবহৃত শব্দের হুবহু অনুকরণ করেছেন। ফলে, মৌলিকতার অভাব এক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়।
কাব্যমাধুর্যের অভাব
‘বৃত্রসংহার’ মহাকাব্য কায়িক বিশালতা লাভ করলেও এর চরিত্রের মধ্যে অপার বিস্ময় নেই, মহাকাব্যোচিত মানবভাগ্যের নিদারুণ ট্র্যাজেডিও ‘বৃত্রসংহার’ কাব্যে অনুপস্থিত।
সর্বোপরি, এ কথা অবশ্যস্বীকার্য যে, কবি হিসেবে মধুসূদন দত্তের আবির্ভাব না হলে কবি হেমচন্দ্রের কাব্যগরিমা কখনোই পরিলক্ষিত হত না। ‘বৃত্রসংহার’ নামক এই বৃহৎ কাব্যে মহাকাব্যোচিত গুণের একান্ত অভাব রয়েছে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর