কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিবৈশিষ্ট্য আলোচনা করো
কাব্যসমূহ: রবীন্দ্রোত্তর যুগের অন্যতম প্রধান কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বাংলা কবিতার অঙ্গনে আপন স্বাতন্ত্র্য প্রকাশে অনন্য হয়ে উঠেছেন। সাম্যবাদী চিন্তা-চেতনার শরিক এবং বামপন্থী মতাদর্শের প্রতীক হিসেবেই তিনি বাংলা কবিতার জগতে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল-‘পদাতিক’ (১৯৪০), ‘অগ্নিকোণ’ (১৯৪৮), ‘চিরকুট’ (১৯৫০), ‘ফুল ফুটুক’ (১৯৫৭), ‘যতদূরেই যাই’ (১৯৬২), ‘কাল মধুমাস’ (১৯৬৬), ‘ছেলে গেছে বনে’ (১৯৭২), ‘একটু পা চালিয়ে ভাই’ (১৯৭৯), ‘জল সইতে’ (১৯৮১), ‘চইচই চইচই’ (১৯৮৩), ‘যা রে কাগজের নৌকা’ (১৯৮৯), ‘ধর্মের কল’ (১৯৯১) ইত্যাদি। এ ছাড়া অনুবাদ কাব্যের মধ্যে উল্লেখ্য-‘হাফিজের কবিতা’, ‘নাজিম হিকমতের কবিতা’।
কবিবৈশিষ্ট্য: শাণিত ব্যঙ্গ ও স্যাটায়ারের মধ্য দিয়ে রোমান্টিকতার বিপরীতে বস্তুনিষ্ঠার প্রকাশ লক্ষ করা যায় প্রথম সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কাব্য ‘পদাতিক’-এ। পরবর্তী পর্যায়ে ‘অগ্নিকোণ’ কাব্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গণ-অভ্যুত্থানের কথা এবং ‘চিরকুট’-এ কবির রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রকাশিত হয়। কবিতার প্রধান গুণ সহজসরল বর্ণনাভঙ্গি। সুধীন্দ্রনাথের মতো তাঁর কবিতা আভিধানিক শব্দার্থের দুর্বোধ্যতার আড়ালে হারিয়ে যায়নি, বরং পরিচিত চিত্রকল্পের সাহায্যে তিনি তাঁর কবিতাকে সাধারণের কাছে সহজবোধ্য করেছেন। তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতের করুণ অবস্থা দেখে বেদনার্ত কণ্ঠে জানান-সব আরম্ভেরই একটা শেষ আছে, সব শেষেরই একটা আরম্ভ; তাই কবির আহ্বান-
"শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে- একটু পা চালিয়ে ভাই, একটু পা চালিয়ে।” আরও পড়ুন - নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা