কবি যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তকে ‘দুঃখবাদী কবি’ বলা হয় কেন? আধুনিক কাব্য-কবিতার ধারায় তাঁর কবিকৃতি আলোচনা করো
দুঃখবাদী বলার কারণ: যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তকে ‘দুঃখবাদী কবি’ বলা হয়। তিনি রবীন্দ্রনাথের আনন্দবাদের বিপরীতে তাঁর কাব্যসাধনা করেছেন। তিনিই প্রথম কবি যাঁর কাব্যে বেদনা, রিক্ততা, হতাশাবোধ, ব্যর্থতার করুণ ক্রন্দন ধ্বনিত হয়েছে। তাঁর কাব্যের নামকরণ থেকেও তাঁর দুঃখবাদী ভাবনার আভাস পাওয়া যায়। যেমন- ‘মরুমায়া’, ‘মরুশিখা’, ‘ত্রিযামা’ প্রভৃতি। তাঁর দুঃখবাদের উদ্ভব মানবপ্রীতি থেকে। আসলে কবির এই দুঃখবাদের মধ্য দিয়ে জীবনের প্রতি গভীর ভালোবাসাই প্রকাশিত হয়েছে।
কাব্যসমূহ: রবীন্দ্রনাথ প্রভাবিত কালপর্বে একজন ব্যতিক্রমী কবিব্যক্তিত্ব হলেন যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত। রবীন্দ্রকাব্যের রোমান্টিকতা থেকে যতীন্দ্রনাথ কবিতাকে নিয়ে এলেন দুঃখজর্জরিত বাস্তবের প্রাত্যহিক আবর্তের মাঝখানে। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘দুঃখবাদী কবি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁর রচিত কাব্যসম্ভার- ‘মরীচিকা’ (১৯২২), ‘মরুশিখা’ (১৯২৭), ‘ত্রিযামা’ (১৯২৮), ‘মরুমায়া’ (১৯৩০), ‘সায়ম’ (১৯৪০) এবং ‘নিশান্তিকা’ (১৯৫৭-মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়)।
নিস্পৃহতা: কর্মজীবনে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদেই হয়তো তিনি জগৎ ও জীবনকে বৈজ্ঞানিক, নিস্পৃহ ভঙ্গিতে দেখার চেষ্টা করেছেন। কবি পৃথিবীর সর্বত্র দেখেছেন দুঃখের উপস্থিতি, দুঃখবেদনারত মানুষের কান্না। কবির প্রকৃতিচেতনা, রোমান্টিক সৌন্দর্যের বিরোধিতা, ঈশ্বরবিশ্বাস এবং মানবপ্রেম দুঃখবাদী দর্শনের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে।
প্রকৃতিচেতনা: যতীন্দ্রনাথের দুঃখবাদ চূড়ান্ত মনে করা সর্বাংশে যথাযথ নয়। ‘মরু’ চিহ্নিত কাব্যসম্ভারের পরবর্তী পর্যায়ে তিনি মরূদ্যানকে খুঁজে পেয়েছিলেন। তাই ‘সায়ম’ কাব্যগ্রন্থ থেকে প্রকৃতিবন্দনাও ধরা পড়ে তাঁর কাব্যে। প্রেম সম্পর্কেও কবির ধারণা ‘ত্রিযামা’-র ‘ভোরের স্বপ্ন’ কবিতায় নতুনভাবে ধরা পড়ে। জীবনসায়াহ্নে এসে প্রেম ও সুন্দরকে তিনি পেতে চেয়েছেন।
রবীন্দ্র প্রভাবিত বাংলা কাব্যে সম্পূর্ণ নতুন দৃষ্টিতে জগৎ ও জীবনকে দেখানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে পরবর্তী সময়ের অনুপ্রেরণার শক্তি হিসেবে যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত বাংলা সাহিত্যে চির উজ্জ্বল এক নক্ষত্র হয়ে রয়েছেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর