এ. পি. জে. আব্দুল কালাম প্রবন্ধ রচনা 1600+ শব্দে

এ. পি. জে. আব্দুল কালাম প্রবন্ধ রচনা

এ. পি. জে. আব্দুল কালাম

ভূমিকা

ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে ভূখন্ডের একটি ফালি যেন সূচালো হয়ে মিলিয়ে গেছে। সেখানে ছোটো খাটো টিলা ও রয়েছে। সবথেকে উঁচু টিলাটির নাম গন্ধমাদন। রামায়নে উল্লেখ আছে যে, এই পাহাড় থেকে রাম শ্রীলঙ্কাকে দেখে সেতু নির্মাণের কথা ভেবেছিলেন। জায়গাটি রামেশ্বরম নামে পরিচিত। তবে এই স্থানটির আর একটি নাম পামবান দ্বীপ। এখানে যেমন আছে শিবের মন্দির তেমনি আছে পুরোনো মসজিদ পাড়ায় মসজিদ। ভারত মহান এক দেশ। এখানে আছেন সমস্ত ধর্মের মানুষ। নেই তাঁদের মধ্যে বিভেদ। সবাই আত্মীয় বা বন্ধুর মতো। এখানে প্রতিধ্বনিত হয় বিবিধের মাঝে ঐক্যের সুর।

৪৭৬ খ্রিঃ পাটনার নিকটবর্তী কুসুমপুর গ্রামে জন্মেছেন আর্যভট্ট। অঙ্কশাস্ত্রের বিভিন্ন শাখায় তিনি অনায়াসে বিচরণ করতে পারতেন। ৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে রাজস্থানের বিলামালা অঞ্চলে জন্ম ব্রহ্মপুত্রের। তিনি তিরিশ বছর বয়সে ‘ব্রহ্মসূত্র’ লিখে জ্যোতিবিদ্যার গবেষণাকে উন্নত করে তোলেন। শূন্যের ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন ভাস্করাচার্য। তিনি জন্মেছিলেন মহারাষ্ট্র-কর্ণাটকের সীমান্তবর্তী গ্রাম হিজলবাদে ১১১৪ খ্রিস্টাব্দে। এইভাবে অজস্র বিজ্ঞানীর জন্ম ভারতবর্ষে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে শক্তিধর দেশগুলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে করতে লাগল অবহেলা। তার কারণ আধুনিক সমরাস্ত্রে ভারত তাদের সাথে পাল্লা দিতে পারছে না বলে। মিসাইল, পরমাণু অস্ত্রে তারা বলীয়ান, ভারতবাসী প্রতিক্ষা করছিলেন এরূপ একজন বিজ্ঞানীর যিনি ভারতকে শক্তির মহিমায় জগৎসভায় উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করবেন। ভারতবাসীর এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছিলেন মিসাইস ম্যান এ. পি. জে আব্দুল কালাম যাঁর জন্ম পূর্ণ্যভূমি রামেশ্বরমের মসজিদ পাড়ায় ১৯৩১ খ্রিঃ ১৫ই অক্টোবর এক অতি দরিদ্র মুসলমান পরিবারে।

বংশ পরিচয়

আব্দুল কালামের পিতার নাম জয়নাল আবেদিন ও মাতার নাম আসিয়াল্লা। তাঁরা ছিলেন সাত ভাইবোন। জয়নাল সকাল হলে হাঁটতে হাঁটতে চলে যেতেন তাঁদের নারকেল বাগানে। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি ফেরি পারাপারের কাজ করতেন। জয়নাল থাকতেন মসজিদ পাড়ায় যেখানে আছে বহু পুরোনো একটি মসজিদ। এই মসজিদের ইমাম ও ছিলেন তিনি। জয়নালের বাড়ি রামেশ্বরম বা পামবান দ্বীপের একেবারে শেষ প্রান্তে, যে গ্রামটির নাম ধনুষকেড়ি।

এখানে হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করেন। এছাড়া খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ ও বাস করেন। জয়নালের বন্ধু ছিলেন রামেশ্বরমের মন্দিরের এক সময়ের পুরোহিত পক্ষীলক্ষন শাস্ত্রী ও ফাদার বোদান। তাঁরা তিনজন প্রতি শুক্রবার বিকেলে এক জায়গায় গিয়ে বসে গ্রামের কোনো সমস্যা হলে নিজেরা মিটিয়ে নিতেন। একসময় জয়নালের বাবা ঠাকুর্দার জমিজায়গা, ব্যবসা পত্তর ছিল শ্রীলঙ্কায় ও এখন সেসব আর নেই। আছে শুধু তার শেষ চিহ্ন ভিটে ও চুনসুরকীর ইটের তৈরী পাকা বাড়ি। সামান্য যা আয় হত তাই দিয়ে অ্যাসিয়াম্মা ভালোভাবে সংসার চালাতেন।

বাল্যকাল

কালাম যখন খুব ছোটো তখন হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তখন সরকারী ভাবে যা চাল, আটা, পাওয়া যেত তাই দিয়ে সকলের খাবারের ব্যবস্থা করতে হত। একদিন কালাম বেশী রুটি খেয়েছিলেন। যার ফলে তাঁর মাকে অভূক্ত থাকতে হয়েছিল। আব্দুল কালাম একথা তাঁর দাদার কাছে পরে জানতে পেরে মনে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন। তাঁর পিতার লেখাপড়া বেশী না থাকলেও সন্তানদের পড়াশুনার ব্যাপারে ছিলেন খুব উৎসাহী।

ছাত্রজীবন

আব্দুল কালাম প্রথমে ভর্তি হল রামেশ্বরম এলিমেন্টারি স্কুলে। তাঁর ঘনিষ্ট সহপাঠী ছিলেন রামনাথ শাস্ত্রী। তিনি স্কুলে প্রথম বেঞ্চে বসতেন রামনাথের পাশে। একদিন এক শিক্ষক সামাজিক রীতি অনুসারে কালামকে পেছনের বেঞ্চিতে বসার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। কারণ যেহেতু তিনি জেলে সম্প্রদায় যুক্ত তাই উচ্চ সম্প্রদায়ের রমানাথের পাশে তিনি বসতে পারেন না। লক্ষণ শাস্ত্রী নামে এক অভিবাভক এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করেন।

স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক শিবসুব্রহ্মমণিয়ম ছিলেন প্রগতি পন্থী। তাঁর আর্দশ আবদুল কালামের মনে খুবই প্রভাব বিস্তার করেছিল, যে শিক্ষক আবদুল কালামকে পেছনের বেঞ্চিতে বসতে বলেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁর ভুল বুঝতে পারেন এবং আবদুল কালামকে সামনের বেঞ্চে বসার ব্যবস্থা করে দেন। এই ঘটনা ঘটেছিল যখন তিনি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। আবদুল কালাম ছিলেন ছোটোবেলা থেকে খুব জেদী এবং বাস্তব সম্বন্ধে সর্তক। তিনি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে কোরান পড়ার জন্য যেতেন গৃহশিক্ষকের কাছে। তারপরে তাঁকে খবর কাগজ বিলি করতে হত বাড়ি বাড়ি। এরপরে যেতেন স্কুলে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র আট বছর। খবর কাগজ আসত তাঁর জ্যাঠতুত দাদা সামসউদ্দিনের কাছে।

আব্দুল কালামের ছোটোবেলা থেকে তাঁর বোন জোহবার স্বামী জলিলউদ্দিনের সাথে ছিল বন্ধুর মতো সম্পর্ক। জলিলউদ্দিন ছিলেন আব্দুল কালামের থেকে পনেরো বছরের বড়ো। আব্দুল কালাম তাঁর সাথে যেতেন সমুদ্রের তীরে। তাঁর মনে নানা প্রশ্ন ভিড় করত। জলিলউদ্দিনের কাছে প্রশ্ন করতেন জানার জন্য। তাঁর মনে হত মানুষ মন্দির বা মসজিদে যায় অজানাকে জানবার জন্য। তাঁর ধারণা ছিল মানুষের জীবনের সফল তার অর্ধেকটা আসে তাঁর পৌরুষের ওপর নির্ভর করে এবং বাবিকা ঈশ্বরের আর্শীবাদে।

তিনি বৃহত্তর শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশের উদ্দেশে ভর্তি হন স্টুয়াজ হাইস্কুলে। এখানে তিনি শিক্ষক ইয়াদুরাই সলোমনের সান্নিধ্য পান। সলোমনকে তাঁর মনে হত আদর্শ শিক্ষক। বৈদিক যুগের এক ব্রহ্মচারী। তাঁর ইচ্ছা করত, আকাশের নীল সীমানাতে ছোট্ট দুটি ডানা মেলে উড়ে যেতে। তিনি এসেছেন আকাশ পথে যেন তিরুচিরা পল্লীতে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভর্তি হলেন তিরুচিরা পল্লী সেন্ট জোসেফ কলেজে। এখানে চারবছর অধ্যয়ন করেন। এই সময় তিনি বিজ্ঞানের সাথে পরিচিত হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।

লেখা ধুলো রাজনীতি, বিনোদনের প্রতি তাঁর তেমন আগ্রহ ছিল না। কলেজ জীবনের শেষের দিকে তিনি ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি দর্শন শাস্ত্র পড়তে ও আগ্রহী ছিলেন। তাঁর প্রিয় ছিল পদার্থ বিজ্ঞান। তাই তাঁর জীবনে বিজ্ঞান চেতনার সাথে আধ্যাত্মিকার সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি মনে করতেন, বৈজ্ঞানিক অভিচেতনা আমাদের আধ্যাত্মিক জগতকে আলোকিত করে। বিজ্ঞানকে হৃদয়ে আকুল আর্তির সাহায্যে উপলব্ধি করলে আধ্যাত্মিক উপলব্ধির পথে অগ্রসর হওয়া যায় যা আত্মোপলব্ধি ঘটায়। তিনি জ্যোতিষ শাস্ত্রকে মনে করতেন একটি শিল্প, সঠিক অর্থে বিজ্ঞান নয়।

তাঁর মতে পৃথিবী হলো মহাবিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল গ্রহ। কারণ এখানে আছে প্রাণের স্পন্দন। সেন্ট জোসেফ কলেজ থেকে তিনি ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কৃতিত্বের সাথে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক হন। এরপর বৃত্তি নিয়ে ও বোন জোহবার আর্থিক সাহায্যে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকননোজি নামক শিক্ষানিকেতনে ভর্তি হন। এখানে থাকত দুটি এরোপ্লেনের সঙ্গে ওড়ার যন্ত্রপাতি। তাঁকে ভাবিয়ে তুলত, মানুষ কিভাবে কৃত্রিক ডানায় ভর করে আকাশে উড়তে পারে।

তিনি তামিল সঙ্গম’ নামে একটি সংস্থার সাথে যুক্ত হন। তিনি তামিল ভাষায় ‘আসুন আমরাই আমাদের নিজের বিমান বানাই’ নামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন এবং রচনাটি শ্রেষ্টত্বের সম্মান পেয়েছিল। এই কলেজে পড়ার সময় তিনি লো লেভেল বিমানের ডিজাইন তৈরী করেন চারজন সহপাঠীর সাথে এবং তা অধ্যাপকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি বাঙ্গালোরে এসে হিন্দুস্থান অ্যারোনটিক লিমিটেডে যোগ দেন ইঞ্জিন বদলানোর কাজে। এখান থেকে আবদুলকালাম স্নাতক হন।

কর্মজীবন

এয়ারফোর্সে চাকরির জন্য তিনি প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। নবম স্থান অর্জন করেন। কিন্তু প্রথম আটজন চাকরীর সুযোগ পেলেন। তিনি হৃষিকেশে এসে স্বামী শিবানন্দের সান্নিধ্যে এসে মলে নতুন উদ্যম পেলেন। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে এসে সিনিয়ার সায়েন্টিফিক অ্যাসিস্টান্টের পদে যোগ দেন। দিল্লি থেকে তিনি এলেন কানপুরে এমারক্রাফট অ্যান্ড আর্মামেন্ট টেস্টিং ইউনিটে কাজ করতে। এখানে তাঁর ভাল লাগল না। দিল্লি ফিরে গিয়ে লম্বালম্বি টেক অফের জন্য ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ম এর ডিজাইন তৈরীর কাজ পেলেন। এখানে তিন বছর কাজ করার পর ব্যাঙ্গালোরে এসে যোগদেন অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এসটাক্লিশ মেন্টে উঁচু পদে।

তাঁর মনে পড়ত ছেলে বেলার হারিয়ে যাওয়ার দিনগুলির কথা। তিনি তৈরী করেন হোভার ক্রাফট জেম (Gem) নাম করণ হয়েছিল নন্দী। কিছুদিন পরে যোগদেন ইন্ডিয়ান কমিটি ফর স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরো-য় রকেট ইঞ্জিনিয়ারের পদে। স্থাপিত হয় কেরালার থুম্বাতে রকেট লঞ্চিং স্টেশন। ছয়মাসের জন্য তাঁকে পাঠানো হয় আমেরিকার ন্যাশন্যাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসায় অভিজ্ঞতা অর্জন করতে। এখানে এসে তিনি ভার্জিনিয়ার পূর্ব উপকূলে ওয়ালপস দ্বীপে ফ্লাইট ফেসিলিটি কেন্দ্রে গেলেন। প্রতিষ্ঠানের চিত্রকলায় দেখলেন ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে টিপু সুলতানের সেনাবাহিনীর যুদ্ধের ছবি। তিনি জানতে পারলেন টিপু সুলতান ছিলেন রকেটবিদ্যার জনক, টিপু বাহিনীতে রকেট ছিল বলে ঐতিহাসিকদের অভিমত।

তিনি ভারতে ফিরে রকেট নির্মাণের গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে নাসার সহযোগীতায় ভারতের প্রথম রকেট নাইট ‘আপাসে’ (Apache) থুম্বার ইম্পিরিয়াল রকেট লঞ্চ স্টেশন বা টি. ই. আর. এল. এস থেকে উৎক্ষিপ্ত হয়। ১৯৬৭ খ্রিঃ ২০ শে নভেম্বর উৎক্ষিপ্ত হয় রোহীনি-৭৫। চেন্নাই থেকে একশ কিলোমিটার দূরে শ্রীহরি কোটায় স্থাপিত হয় ইন্ডিয়ান রকেট সোসাইটি। আব্দুল কালাম দায়িত্ব নেন এখানের এস. এল. ভি. এর প্রজেক্ট লিডারের। তাঁর বোনের চার বছরের সন্তান মারা গেল। মারা গেলেন তাঁর বোন জোহবার স্বামী জলিলউদ্দিন, পিতা জয়নাল আবেদিন ও মাতা আসিয়াম্মা। তিনি দুঃখে ভেঙে পড়লেন না। তাঁর ওপর যে দেশের মহান দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। তিনি ভালোবাসেন স্বদেশকে। তিনি শপথ নিয়েছেন যে স্বদেশকে পৃথিবীর দরবারে শক্তিশালী দেশ হিসাবে উচ্চাসনে বসাবেন।

১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই সকাল আটটা তিন কিনিটে ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট এস. এল. ভি. -৩ সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হল আকাশে।

১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হল। ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে তিনি ডিফেন্স ইলেকট্রনিক্স অ্যাপলিকেশন ল্যাবরেটরী বা ডি. ই. এ.এল এর ডিরেক্টরের পদে যোগ দেন। তাঁকে মাদ্রাজের আন্না বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স সম্মান প্রদান করা হয়। এই সময় মিসাইল টেকনোলজি কমিটি গঠিত হয় এবং পৃথ্বী, ত্রিশূল, আকাশ ও নার্স নামে চারটি ক্ষেপনাস্ত্র তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এসব কাজের পেছনে ছিলেন উদ্যমী আবদুলকালাম। এই ক্ষেপনাস্ত্রগুলির নাম রাখা হয়েছিল ভারতীয় পুরান থেকে। এরপরের পরিকল্পনা রি- এন্ট্রি এক্সপেরিমেন্ট ভেহিকল বা রেক্স। ওড়িশার বালেশ্বরের সমুদ্রের তীরে মিসাইল পরীক্ষার থান নির্বাচন করা হল। এরপরে চাঁদিপুরে ইন্টারিংটেস্টরেঞ্জ স্থাপনের জায়গা দেখা হলো। নাগ তৈরী হয়েছিল ১৯৮৪ সালের ২৬শে জুন।

১৯৮৫ সালের ১৬সেপ্টেম্বর শ্রী হরিকোটা থেকে ত্রিশূল উৎক্ষিপ্ত হয়। এটি এক ধরণের ব্যলেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র। কালাম ঠিক করলেন বিভিন্ন গবেষকদের সাহায্য নেবেন সারা ভারতের মানুষকে বিজ্ঞান চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দের ১৫শে ফেব্রুয়ারি সকাল এগারোটায় পৃথ্বী, ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২০শে এপ্রিল অগ্নি সফলভাবে উৎক্ষিপ্ত হল। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে কালামকে জহরলাল নেহেরু মুতি পুরস্কার প্রদান করা হয়।

১৯৯৮ সালে কালামকে সম্মানিত করা হয় ভারতরত্ন পুরস্কারে। সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থনে আবদুল কালাম দেশের একাদশতম রাষ্ট্রপি নির্বাচিত হলেন ২০০২ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুলাই। তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন ২০০৭ সালের ২৫শেজুলাই পর্যন্ত।

উপসংহার

স্টুয়াজ হাইস্কুলের শিক্ষক ইয়াদুরাই সলোমন কালামকে শিখিয়েছিলেন, জীবনে চলার পথে সফল হতে হলে মনে সব সময় ইচ্ছাও বিশ্বাস রাখতে হবে আর সবসময় আশাবাদী হতে হবে। আবদুল কালাম তাঁর জীবনে এই কথাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতেন। তাঁর জীবনে পিতা জয়নাল আবেদিন ও মাতা আসীয়াম্মার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। তিনি ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের উন্নয়নের মাপকাঠি নির্ধারণের জন্য রচনা করেন এক নিজস্ব প্রতিবেদন। এখানে রাজনীতির প্রবেশ ঘটেনি। ভারতে পারমাণবিক শক্তি ও মিশাইল নির্মাণে তাঁর ছিল গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তাই তাঁকে বলা হয় মিশাইল ম্যান।

তিনি ঈশ্বরকে স্মরণ করে বলেছেন, হে ঈশ্বর তুমি আমার ভারতবাসীকে আরও পরিশ্রমী এবং শক্তিশালি করে তোলো। আমি ধূলোতে মিশে যাবার আগে ভারতের এক গর্বিত নাগরিক হিসাবে আবার উত্থানের স্বপ্ন দেখবো। তিনি ছিলেন মুক্ত মনা। স্কুলের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলতেন নিজের ভবিষ্যতের কারিগর হতে, মন দিয়ে পড়াশোনা করতে। তিনি ভালোবাসতেন স্বদেশকে কর্মজীবনে তিনি ছুটি নিয়েছিলেন দুদিন পিতা ও মাতার মৃত্যুদিনে। এ এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা কর্মের প্রতি একাত্মতার।

শুধু ভারতবর্ষ নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাঁকে অজস্র পুরস্কারে সম্মাতি করেছেন। তিনি মনে করতেন দেশকে শক্তিশালি করে বিশ্বের দরবারে উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করাই হবে তাঁর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার। তিনি বলেছিলেন যে তাঁর মৃত্যুতে যেন ছুটি ঘোষণা না করা হয় তাঁকে যদি আমরা সত্যি ভালোবাসি সেদিন যেন মন দিয়ে কাজ করি। এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে জুলাই হার্টএ্যাটাকে শিলং-এ একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেওয়ার সময়। এইভাবে ভারতের মিসাইল ম্যান এর জীবনের সমাপ্তি ঘটে।

তাঁকে কেউ বলেছেন জনতার রাষ্ট্রপতি, কেউ বলেছেন তরুন প্রজন্মের দিশারি, কারও মতে প্রকৃত ভারতরত্ন, কারও মতে কর্মযোগী। আধুনিক উচ্চমানের দেশ গঠনের উদ্দেশ্যে জীবন সাধনায় সমগ্র ভারতকে তিনি একসূত্রে গেঁথে ছিলেন। আমার মতো ছাত্র ছাত্রদের কাছে আবুল পকির জননুল আবদিন আবুল কালাম একজন আর্দশ ব্যাক্তি যাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করলে নিজেরা অনেক বড়ো হতে পারবো।

আরও পড়ুন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment