একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা

একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা
একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা

একটি ঝড়ের রাতের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানুষের জীবনে ঘটে কত বিচিত্র ঘটনা, সব ঘটনা কি মনে দাগ কাটে? কিছু কিছু ঘটনা মানুষের মনে স্মৃতি হয়ে থেকে যায় যা কখনও ভুলা যায় না। আমার এই স্বল্প জীবনে অভিজ্ঞতা কম। কিন্তু যখন একা থাকি তখন মনের পর্দায় একটি ঘটনার কথা প্রায়ই ভেসে ওঠে, তার বিভীষিকাময়ী বিধবংসী ছবি আজও ভুলতে পারিনি- তা হল একটি ঝড়ের রাত। এখনও মনে মনে তার ভয়ঙ্কর রূপ প্রত্যক্ষ করে ভয়ে শিউরে উঠি।

ঝড়ের সংকেত

ভাদ্রের শেষ, আকাশ নীল হতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হয়ে ঝরতে ঝরতে মেঘগুলো যেন ক্লান্ত। কিন্তু সেদিন সকাল থেকে মেঘগুলো খুব গম্ভীর, চারদিকে থমথমে পরিবেশ। সারি সারি পিঁপড়ের মুখে ডিম, চলে যাচ্ছে অন্য কোথাও। পাখি তার বাসা ত্যাগ করে হঠাৎ ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাচ্ছে। সন্ধ্যার আগে ঘন কালো মেঘাদিনের আলোকে শুষে নিল। আমাদের গ্রামের পূর্বদিকে খালি নদী। তাকিয়ে দেখলাম কালো থামের মতো রেখা দেখা যাচ্ছে, আকাশ থেকে জল তুলছে। মনে মনে ভাবলাম, হাতিটি বিশাল যার শুঁড় আকাশকে স্পর্শ করছে। নদীতে নেমে এসেছে।

পাড়ার বৃদ্ধ দাদু বললেন, ইন্দ্রদেবের হাতি শুঁড় দিয়ে আকাশে তখন আমি বেশ ছোটো। বড়োরা যা বলতেন আমি বিশ্বাস করতাম। দাদার কাছে গিয়ে ইন্দ্রদেবের হাতির জল তোলার কথা বলতে তিনি হাসলেন। কিছু সময় থেমে বললেন এসব গল্প-কথা। কালো থামের মতো মোটা রেখা হল জলস্তম্ভ। ঘূর্ণি বায়ুর ঝড়ে নদীর জল থামের মতো উঁচুতে উঠে যায়। এই ঝড়ের কবলে পড়লে নৌকা, এমনকি জাহাজও ঝড়ের হাওয়ায় শূণ্যে ভাসতে পারে। বাবা আমাদের ডেকে বললেন, তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে ফেলতে। যেকোন সময় ঝড় হতে পারে, তখন গ্রামে বিদ্যুতের আলো ছিল না। রাতের সাথী ছিল হ্যারিকেনের আলো। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়ির মাটির দেয়াল, একতলা বা দোতলা, খড়, টালি, টিনের চালা। ভয়ের আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করল।

রাত্রির ঝড়

সেদিন অমাবস্যা। সূর্যাস্তের পরে গাঢ় অন্ধকার যেন আকাশ থেকে চুইয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগল। বাড়তে থাকল বাতাসের স্রোত রাত্রি বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে। হঠাৎ বাতাসে ভেসে এল বিকট শব্দ যেন কোন এরোপ্লেন উড়ে আসছে খুব নিচু দিয়ে। ক্রমে ক্রমে বাড়ছে বাতাসের বেগ, গাছপালা বাতাসের সাথে লড়াই করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শেষ চেষ্টা করতে থাকল। বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ যেন বৃক্ষরাজি রাগে ফুঁসছে, তাদের নাসিকা গর্জন। আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে মুষলধারে বৃষ্টি, আকাশ চেষ্টা করছে উন্মত্ত বাতাসের মস্তিষ্কে জল ঢেলে তাকে শান্ত করার।

চারদিকে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিবেশ। বেড়ে চলেছে দুঃসহ ভয়াল দুর্যোগের রাত। ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় উন্মত্ত বৃষ্টি ও ঝড়। বাড়ছে বৃষ্টি ও ঝড়। ঝড়ের দাপটে বার বার খুলে যাচ্ছে জানলা ও দরজার পাল্লা। মাঝে মাঝে বাজপড়ার শব্দে কেঁপে উঠছে ধরিত্রীরর বুক, গাছ-পালা, বাড়ি-ঘর, আমাদের বুকও। অন্ধকারের এমন ভয়াল রূপ আগে আমি দেখিনি। ঝড়ের দাপট এতই বাড়তে লাগল যে আমার মনে হল আজ বুঝি ঝড়ের অতলে তলিয়ে যাবে সব কিছু-গাছপালা, বাড়িঘর, নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পৃথিবীর বুকে গড়ে ওঠা সভ্যতা। জল ক্রমে নৃত্য করতে থাকল উঠোনের নীচে।

বুঝতে অসুবিধা হল না যে ঝড়ের দাপটে নদীর জল উঠে এসেছে ডাঙায়। অসহায় মানুষের কান্না: আবার খুলে গেল জানলার পাল্লা। বৃষ্টির ফোঁটা ধারাল পেরেকের মতো ছুটে আসছে ঘরের ভেতরে। দরজায় করাঘাতের শব্দ শুনে প্রথমে মনে হয়েছিল ক্ষিপ্ত বাতাসের ধাক্কা। কিন্তু কান্নার শব্দ শুনে এগিয়ে গেল দাদা দরজার দিকে। আলতো দরজা খুলতে তেরো-চৌদ্দজন লোক হুড়মুড় করে ঘরের ভেতরে চলে এল। সাথে তাদের ছোটো ছোটো ছেলে-মেয়ে, একজন বৃদ্ধ এবং কয়েকজন বৌও। সকলের মুখে ফুটে উঠছে আতঙ্কের ছবি। তারা বলল, ঝড়ে ভেঙে গেছে বাড়িঘর। আমাদের বাড়ি উঁচু জায়গায়, দালান বাড়ি হওয়ায় তখনও অক্ষত আছে, ঝড়ে ভাঙেনি ও বন্যার জল ছুঁতে পারেনি।

ঝড়ের পরের দৃশ্য

ভোর হয়ে আসছে, কমে গেল ঝড়ের বেগ। নেমে এল নিস্তব্ধতার পরিবেশ, ঠিক যেন যুদ্ধের পরের দৃশ্য। আকশে রক্তিম আলোর আভা। বাবা বললেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় পৃথিবীরর বুকে সৃষ্টি হয় ইলেকট্রোম্যাগনেটিভ ফোস্। যার ফলে আকাশ জুড়ে আলোর আভা। অন্যদিনের মতো সেদিনও রাতের পরে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। পরিচিত গ্রামের ছবি হারিয়ে গেছে, যেন অপরিচিত কোন গ্রামে এসে হাজির হয়েছি। বড় বৃক্ষগুলো আর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নেই। তাদের উৎপাটন করে কেউ দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। কোনো কোনো গাছের কান্ড দাঁড়িয়ে আছে, নাই ডালপালা। বেশীরভাগ বাড়ি ভেঙে পড়েছে অথবা উড়ে গেছে চালা, কুঁড়ে ঘরগুলো হারিয়ে গেছে জলের তলায়। দ্রুত গতিতে বয়ে যাচ্ছে জলের স্রোত।

দূর থেকে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি নৌকা উঠে এসেছে নদীর চরে, একটা জাহাজ কাত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নদীর চরের গা ঘেঁষে। অসহায় মানুষ আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে অথবা কোনো নিরাপদ জায়গায়। জলে ভেসে যাচ্ছে মৃত গোরু, ছাগল প্রভৃতি পশু, বাড়ির চালের ভগ্ন অংশ আসবাবপত্রও।চারদিকে সর্বস্বাস্ত মানুষের বুকফাটা হাহাকার, শোকার্তদের ক্রন্দন। পৃথিবীর সেকি বিধবস্ত চেহারা, নেমে এসেছে শ্মশানের দৃশ্য। বেলা বাড়ার পরে এসে গেলসরকারী উদ্ধারকারীর দল।

উপসংহার

ঝটিকা বিক্ষুদ্ধ দুর্যোগময় রাত্রির স্মৃতিকে আমার মন থেকে আজও মুছে ফেলতে পারিনি, সেদিন বুঝতে শিখিনি যে প্রকৃতির আছে যেমন শান্ত রূপ, তেমনি আছে ধবংসের তান্ডব-নৃত্য। শুভ্রজ্যোৎস্না-পুলকিত যামিনি দেখে কখনও কি ভাবা যায় তার আড়ালে লুকানো আছে তমসাময়ী ঝটিকা-ক্ষুব্ধ রাত্রি। প্রকৃতির দুটি রূপ-ভয়াল ও স্নেহময়ী, কখনও রুদ্রমূর্তি, কখনও অপরূপা-লাবণ্যময়ী। সেদিন তরুণদলকে দেখেছি উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসতে। মনে মনে শপথ গ্রহণ করেছিলাম সেদিন, আমিও বড়ো হলে নিজেকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করব।

আরও পড়ুন – বাংলার উৎসব রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment