একটি ছুটির দিন রচনা 500+ শব্দে

একটি ছুটির দিন রচনা

একটি ছুটির দিন রচনা
একটি ছুটির দিন রচনা

একটি ছুটির দিন রচনা

ভূমিকা

অন্যদিন ভোরে ঘুম ভাঙলে ও বিছানা থেকে উঠতে ইচ্ছে করেনা। আজকের সকাল যেন অন্য সকালের থেকে আলাদা, ভোরের নরম রোদ মনের জানালায় উঁকি মারছে। ঘরের বাইরে পা রেখে দেখি, ঝলমলে রোদ ঢেউ খেলে যাচ্ছে গাছপালায়, দূরের গ্রামে, যতদূর দৃষ্টি যায়। সপ্তাহের প্রত্যেক রবিবার ছুটির দিন। রবিবার এলেই মনে হয় দিনটা ফুরোলেই সোমবার, স্কুলে যেতে হবে। কিন্তু স্কুলে যখন গরমের, বর্ষার বা পুজোর ছুটি পড়ে তার আনন্দই আলাদা। তবে আমার কাছে পুজোর ছুটির আকর্ষণ খুব বেশি, বিশেষ করে দুর্গাপুজোর ছুটি।

ছুটির আগের দিন

চঞ্চল মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝরতে ঝরতে এখন আকাশ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আকাশ নীল হতে শুরু করছে, গড়িয়ে পড়ছে সোনালী রোদ। সবুজ ধান খেতে ঢেউখেলে যাচ্ছে দুরন্ত হাওয়া। গ্রামের দুর্গা মন্দিরে প্রতিমা তৈরীর কাজ প্রায় শেষ। প্রতিমা শিল্পী তার তুলির শেষ টান দিচ্ছে, ফুটে উঠছে প্রতিমার চক্ষু, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় দেখে এসেছি। কাল থেকে শুরু হবে দুর্গাপুজো, বন্ধ থাকবে স্কুল। আমি আনন্দে এতই উত্তেজিত যে মনে হচ্ছে যেন উত্তপ্ত হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছি। নিজেকে মনে হচ্ছে হাল্কা।

ছুটির দিনের সকাল

অন্যদিন নিদ্রাদেবী কিছুতেই আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যেত না ভোর হলে ও। আজ ভোরের আগেই ঘুম ভেঙে গেল। ঘরের দরজা খুলে চলে এলাম উঠোনে- হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভোরের প্রকৃতি। শিউলি তলায় ফুলের নকশিকাটা আলপনা, হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসছে শিউলি ফুলের মিষ্টিগন্ধ, কুবোপাখির কুবকুব শব্দ, পুজোর মন্ডপ থেকে আগমণী গানের সুর, ঢাকের বাদ্যির শব্দ। আজ যে ষষ্ঠী, মা দুর্গার বোধন। আজ থেকে কয়েক দিনের জন্য পড়া শোনা বন্ধ, বাঁধন হারা, ইচ্ছে করছে আকাশকে জড়িয়ে ধরি বুকে। বাবা এনেছেন কয়েকটি পত্রিকার পুজো সংখ্যা। মন ছপট্ করছে পত্রিকার মধ্যে কি লেখা আছে পড়ার জন্য। পত্রিকার গন্ধে মন মাতোয়ারা, উদ্‌ভ্রান্ত।

বেলা বাড়ার সাথে সাথে

ছুটে গেলাম পুজোর মন্ডপে। বন্ধুরাও এসে গেছে। মেতে উঠলাম খেলাধূলা-গল্প গুজবে। প্রতিদিনের নিয়ম মেনে চলা জীবন-ছন্দের তাল কেটে গেছে পুজোর আনন্দের মূর্ছনায়। ভুলে গেলাম সময় মত খাওয়াদাওয়ার। আজ যে আমি স্বাধীন, নাই পড়াশোনা স্কুলে যাওয়ার তাড়া, পুজোর ছুটির দিনগুলির মধ্যে ঝরে পড়ছে অন্য এক রূপ-রস-গন্ধ। প্রত্যেক রবিবারও ছুটির দিন, বাবা, মা, দাদা, দিদির শাসনের মধ্যে দিনটি কাটে, সময় মতো পড়তে বসা, দুপুরে বিশ্রাম করা।

অন্যদিনের গম্ভীর পৃথিবীকে আজ মনে হচ্ছে স্নেহময়ী, করুণাময়ী, অপরূপা। শরতের সে কি রূপ! চারদিকে সবুজের হাতছানি, বৃক্ষসকল ও ফল-ফুল পাতার গয়নায় সুসজ্জিত পুজোর আনন্দে। দুপুরে বেরিয়ে পড়লাম ছুটির প্রথম দিন বন্ধুদের সাথে, কাছেই নদী, শোনা যাচ্ছে কলকল শব্দে গান গেয়ে তার অবিশ্রান্ত পথ চলার ধবনি, নদীর তীরে এলাম আগে কখনও সেপথ মাড়াবার সুযোগ হয়নি, মনের ইচ্ছা মনেই গুমরে কেঁদেছে।

সান্ধ্য ভ্রমন

আজ দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরে বিশ্রামের কথা ভুলে গেছি। ঘড়ির কাঁটা যেন দ্রুত ঘুরছে। তাড়াতাড়ি এসে গেল বিকেল এবং তারপর সন্ধ্যা। আমাদের গ্রামে বেশ কয়েকটি ক্লাবে ও গ্রামের একটি মন্দিরে দুর্গাপুজো হয়। মন্দিরটি আমার বাড়ির কাছে। সেখানেই কেটেছে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত, বিকেল সন্ধ্যাও। আমার এক বন্ধু শহরে থাকে। সে আমাকে বলেছিল, পুজোর ছুটির দিনগুলি তার কাটে অন্যভাবে, সকালে টি.ভি. ম্যাগ্যাজিন পড়ে ও বিকেলে পুজো প্যান্ডেলে ঘুরে। পুজোর কয়েক দিন খাবারের তালিকা ও বদলে যায়- ভালো ভালো খাবার খায়, হোটেলে রেস্তোরাঁয় গিয়ে।

উপসংহার

গ্রামের পুজোর সাথে আছে প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক এবং শহরের পুজোর সাথে আছে বাহ্যাড়ম্বরের প্রতিযোগিতা। গ্রামে থাকি। তাই আমার পুজোর দিন কাটে অন্য দিনের স্কুল ও বাড়ির চার দেয়ালের বন্দী-জীবনের গন্ডি পেরিয়ে অনন্ত আকাশের নীচে নিজেকে হারিয়ে ফেলার মধ্যে, রবিবারের ছুটির সাথে পুজোর ছুটির পার্থক্য এখানে।

আরও পড়ুন – পরিবেশ দূষণ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment