একজন রিক্সা চালকের আত্মকাহিনী রচনা 500+ শব্দে

একজন রিক্সা চালকের আত্মকাহিনী রচনা

একজন রিক্সা চালকের আত্মকাহিনী রচনা
একজন রিক্সা চালকের আত্মকাহিনী রচনা

ভূমিকা

আমি একজন রিক্সাচালক। আমি রিক্সা চালাই এখন শহরের অলি গলিতে, কখনও রাজপথে। আমিও একজন মানুষ, মানুষ হয়েও মানুষ বয়ে বেড়াই, দুবেলা দু’মুঠো অন্নের সংস্থানের জন্য। হাড় কাঁপুনি শীতে, গ্রীষ্মের প্রখর তাপে, জল থৈ থৈ বর্ষায় আমার কোনদিন ছুটি থাকে না। পেটের ক্ষুধারতো ছুটি থাকতে পারেনা।

আমার শৈশব

জন্মেই দেখেছি পৃথিবীর শষ্য শ্যামল রূপরেখার মধ্যে আত্মগোপন করে আছে রূঢ় বাস্তবের মর্মান্তিক আর্তনাদ। জন্মেছি গ্রামে। আমরা খুব গরিব। বিপুলা পৃথিবীর এক কুঁড়ে ঘরে আমরা থাকতাম নদীর চরে। রাক্ষসী নদীর স্রোত গ্রাস করল সমস্ত গ্রামকে। আমাদের মতো অনেকেই বাধ্য হল গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে। বাবা মা ও ছোট্ট বোনের সাথে আমাদের আস্তানা হল অন্য গ্রামের বটগাছের তলায় রাস্তার ধারে। বাবা রিক্সা চালাতেন অমসৃন মাটির রাস্তায়। দেখতাম ছোট ছেলে মেয়েরা যাচ্ছে স্কুলে, আমারও ইচ্ছা হত স্কুলে যেতে। কিন্তু স্কুলের দরজা ছিল তখন গরিবদের জন্য বন্ধ। কয়েকদিনের জরে মারা গেলেন বাবা। বাবার রিক্সা নিয়ে শুরু হল আমার কর্মজীবন। কৈশোর পেরিয়ে শৈশবে পা দিলাম। শুনলাম শহরে গেলে কাজের অভাব হয় না। তাই আমি মা ও ছোট বোন চলে এলাম কলকাতায়।

গ্রাম ছেড়ে কলকাতায়

বিচিত্র কলকাতা শহর। দিনের আলোয় জনঅরণ্যে ভরে যায় সারা শহর। মাটির ওপরে ছুটছে ট্রাম, বাস, মোটর নানা ধরণের যানবাহন, মাটির তলায় মেট্রোরেল। আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকার পাশেই বস্তির কুঁড়েঘর। ঝাঁচকচকে পথঘাট- বৃষ্টি হলে তার উপর ঢেউ খেলে জলের স্রোত। রাতের শহরের অন্য এক রূপ- রং বাহারি আলোয় সেজে ওঠে সে, তখন সে রূপসী তিলোত্তমা।

কলকাতায় ঠিকানা

গ্রামে আমার ছিল আস্তানা একদিন, ছিল বাড়ি একটা ঠিকানাও। কলকাতায় এসে আমার আস্তানা হল রাজপথের ধারে একটা বাড়ির ঝুলা বারান্দার তলায়। মা ও বোন কাজ পেল বড়লোকের বাড়িতে বাসন মাজার ঘরদোর পরিষ্কার রাখার। আলাপ হল এক অবাঙালি রিক্সাওয়ালার সাথে। সে নিয়ে গেল এক মহাজনের কাছে। সেই মহাজনের অনেক রিক্সা আছে, ভাড়ায় খাটানো তাঁর ব্যবসা। তাঁর কাছ থেকে রোজ ভাড়ায় প্রথমে নিলাম হাতে টানা রিক্সা।

বিচিত্র পৃথিবীর বিচিত্র কর্মধারা

কখনও কখনও আমি অবাক হই, বিস্ময়ে ও দুঃখে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে জল। গ্রীষ্মের তীব্র রোদে বা খানাখন্দ ভরা রাস্তায় রিক্সা টানতে টানতে যখন হাঁপিয়ে পড়ি তখন রিক্সার আরোহীর ধমক খাই, বলেন “থামলে কেন, জোরে আরও জোরে রিক্সা চালাও বড্ড আস্তে চালাচ্ছ।” কেউ বুঝেনা আমার মনের কথা। রোদ- বৃষ্টিতে খালি পেটে রিক্সা টানতে টানতে আমি যে ক্লান্ত থাকি কেউ ভেবে দেখেছেন? ওদের মতো আমিও পৃথিবীতে জন্মেছি স্বাধীন ভাবে সমাজই সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে বিভেদ।

অভিজ্ঞতা

প্রথম প্রথম রিক্সা টানতে খুব অসুবিধা হত। অচেনা পথঘাট, অজানা নিয়ম কানুন, অরোহীর নানা বায়না তিরষ্কার, পুলিশের জুলুম। লাঞ্ছনা – তিরষ্কার হজম করতে করতে এসব সওয়া হয়ে গেছে, হারিয়ে ফেলেছি প্রতিবাদের ভাষা, দারিদ্র যে অভিশাপ। কেউ বুঝবার ও চেষ্টা করে না যে বুকের রক্ত নিঃশেষিত করে আরোহীর সেবা করছি, সামান্য পয়সার বিনিময়ে, তাঁদের আরাম দিচ্ছি!

উপসংহার

এখন আমি জেনে গেছি সব নিয়ম কানুন। আমার আর ভুল হয়না। তবে এখনও আমার আশ্রয় সেই বাড়ির বারান্দার নীচে, আহার রাস্তার ধারে, আমার বাড়ির ছাদ খোলা আকাশ, নিদ্রা গাছের তলায়। গ্রীষ্মের রোদে পিচগলা রাস্তার উত্তাপ, শীতের উত্তুরে হওয়ার কামড় বা বর্ষার ঝড় বন্যার দুর্যোগ সবই এখন নিত্য সঙ্গী। অসুবিধা হয় না এদের আপন করে নিতে। তবুও যেন সীমাহীন শূণ্যতার হাহাকারময় কান্না মাঝে মাঝে বুকের মধ্যে সৃষ্টি করে অসহ্য যন্ত্রণা – যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, বুঝা যায় অনুভবে। দুঃখের মাঝেও আছে আনন্দ- মা বোন ও আমি যখন রাস্তার আলোয় একসাথে বসে গল্প গুজবে মেতে উঠি রাত্রে বাসায় ফিরে।

আরও পড়ুন – ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment