ঋণ পরিশোধ করার জন্য গার্হস্থ্য আশ্রমে যে পঞ্চযজ্ঞের উল্লেখ পাওয়া যায়, তা বর্ণনা করো
পঞ্চযজ্ঞ
ঋণ পরিশোধ প্রসঙ্গে বৈদিক সাহিত্যে গার্হস্থ্য আশ্রমে পঞ্চ মহাযজ্ঞের উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলি হল- ব্রহ্মযজ্ঞ, পিতৃযজ্ঞ, দেবযজ্ঞ, নৃযজ্ঞ এবং ভূতযজ্ঞ। এইসব ঋণ পরিশোধমূলক যজ্ঞের মাধ্যমে মানুষ দাতাকে কিছু উৎসর্গ করে। প্রাপ্ত ঋণ পরিশোধের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে কিছু অর্পণ বা নিবেদন করে।
ব্রহ্মযজ্ঞ
“অধ্যাপনং ব্রহ্মযজ্ঞঃ।” উন্নত ধ্যান-ধারণা, উন্নত জ্ঞান, উন্নত জীবনবোধ ইত্যাদি যা কিছু আমরা সত্যদর্শী মুনিঋষিদের কাছ থেকে পেয়েছি পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তা পৌঁছে দেওয়াটাই হল মুনিঋষিদের প্রতি কৃতজ্ঞচিত্তে ঋণশোধ। তাই ব্রহ্মযজ্ঞকে ‘ঋষিযজ্ঞ’ বলা হয়।
পিতৃযজ্ঞ
“শ্রাদ্ধম্ পিত্যজ্ঞঃ।” বৈদিক মতে আমাদের পরলোকগত পিতৃপুরুষের যে অবদান আমাদের উপর আছে সেই ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ তিথিতে তাদের স্মরণ করে জলদান ইত্যাদি হল পিতৃযজ্ঞ। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের পিতৃপুরুষের কাছে নানাভাবে ঋণী। সেই ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য তর্পণ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের স্মরণ করা হয়।
দেবযজ্ঞ
“হোমঃ দেবযজ্ঞঃ।” বৈদিক মতে, নিশ্চেতন বস্তু ও ঘটনার অন্তরালে কোনো চেতন ও বুদ্ধিমান সত্তা অবশ্যই আছে। এই নিসর্গ দেবতাগণ প্রতিনিয়ত মানুষের উপকার করে চলেছে। আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে জল, বায়ু, অগ্নি না থাকলে মানুষ বাঁচতে পারত না। তাই এই নিসর্গ দেবতাদের কাছে মানুষ ঋণী। দেবতাদের কাছে এই উদ্দেশ্যে হোম করাই হল দেবযজ্ঞ।
ভূতযজ্ঞ
“ভূতেভ্যঃ বলিপ্রদানম্ ভূতযজ্ঞঃ।” ভূতযজ্ঞ বলতে বোঝায় আমাদের চারপাশের দৃষ্ট-অদৃষ্ট, ক্ষুদ্র-বৃহৎ, সূক্ষ্ম-স্থল সকল প্রকার জীব ও উদ্ভিদের পরিচর্যাপূর্বক ঋণশোধ প্রক্রিয়া। এদের প্রত্যেকের অস্তিত্বের উপর মানুষের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই মনুষ্যজাতি এদের কাছে ঋণী। তাই তাদের সেবা বা যত্ন নেওয়া এবং সংরক্ষণ করা মানুষের দায়িত্ব।
নৃযজ্ঞ
“অতিথি পূজনম্ মনুষ্যযজ্ঞঃ।” প্রতিটা মানুষ সমগ্র মানবজাতির কাছে নানাভাবে ঋণী। এজন্য নির্বিশেষে ক্ষুধার্ত মানুষকে অন্নদান করে, বস্ত্রহীন মানুষকে বস্ত্রদান করে, গৃহহীন মানুষকে আশ্রয় দান করে মানুষের প্রতি মানুষের ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এই প্রকার ঋণশোধ হল নৃযজ্ঞ।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ