উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের আখ্যানকাব্যের ধারা সম্পর্কে যা জানো লেখো
আখ্যানকাব্য
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে দেবদেবীর মাহাত্ম্যজ্ঞাপক যেসব কাব্য রচিত হয়েছে, তার মধ্যে কাহিনি বিদ্যমান থাকায় তাদের কাহিনিকাব্য বা আখ্যানকাব্য বলে অভিহিত করা হয়েছে। সাধারণত আখ্যানকাব্যের মধ্যে একটি গতিশীল ঘটনাসমন্বিত কাহিনি থাকে, সেইসঙ্গে উপযুক্ত চরিত্রচিত্রণ করেন কবি। কবিত্বই এখানে প্রাধান্য পায়। উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইতিহাস ও পুরাণকে আশ্রয় করে স্বদেশভাবনা ও জাতীয়তাবোধের প্রকাশকে গুরুত্ব দিয়ে একশ্রেণির কাহিনিকাব্য লেখা হয়। এই আমলে যে কয়েকজন কবি কাহিনিকাব্য রচনায় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন তাঁরা হলেন মধুসূদন দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও নবীনচন্দ্র সেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘ললিতা তথা মানস’ (১৮৫৬) বাংলার প্রথম আধুনিক আখ্যানকাব্য। মধুকবির ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০), রঙ্গলালের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮), ‘কর্মদেবী’ (১৮৬২), ‘শূরসুন্দরী’ (১৮৬৮), ‘কাঞ্চীকাবেরী’ (১৮৭৯), হেমচন্দ্রের ‘বীরবাহু’ (১৮৬৪), ‘বৃত্রসংহার’ (প্রথম খণ্ড-১৮৭৫, দ্বিতীয় খন্ড-১৮৭৭), নবীনচন্দ্রের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ (১৮৭৫), ‘ক্লিওপেট্রা’ (১৮৭৭), ‘রঙ্গমতী’ (১৮৮০) কাব্যগুলি যথার্থ কাহিনিকাব্য। এইসকল কাব্যে যে আখ্যান বর্ণিত আছে সুেগলির খ্যাতি সর্বাত্মক হয়ে ওঠে। কাহিনিবর্ণনা, চরিত্রনির্মাণ, ভাবের অভিনবত্বে এই কাব্যগুলি প্রশংসার যোগ্য। এগুলি ছাড়াও অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর ‘ভারতগাথা’, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ভারত- উদ্ধার’, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’, ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চিত্তমুকুর’ বাংলা আখ্যানকাব্যের শাশ্বত সম্পদ।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর