উনিশ শতকের নবজাগরণ বাঙালির সমাজজীবনে কী প্রভাব ফেলেছিল, তা সংক্ষেপে আলোচনা করো
অথবা,
আধুনিক যুগে বাংলার সমাজজীবনের যে ছবি পাওয়া যায়, তা আলোচনা করো
উনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণ বাংলার সমাজজীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। যেমন-
সতীদাহপ্রথা নিবারণ
হিন্দুসমাজের প্রথানুযায়ী, মৃত স্বামীর চিতায় বিধবা পত্নীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মতো ঘৃণ্য প্রথাকে নির্মূল করার জন্য রামমোহন রায় তাঁর প্রবন্ধ-নিবন্ধে, তাঁর ‘সম্বাদ কৌমুদী’ পত্রিকায় সতীদাহের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। পরবর্তীকালে ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়ম বেন্টিষ্কের সহায়তায় সতীদাহপ্রথা নিবারণের জন্য আইন প্রণীত হয়।
বিধবাবিবাহ প্রবর্তন
সমাজসংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিধবাবিবাহ প্রবর্তন। ১৮৫৫ সালে ‘বিধবাবিবাহ প্রচলিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক প্রস্তাব’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করে তিনি জনমত গঠনে প্রয়াসী হন। রক্ষণশীল হিন্দুসমাজের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও ১৮৫৬ সালে বিধবাবিবাহ আইনসিদ্ধ হয়।
বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধ
রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, কেশবচন্দ্র সেন প্রমুখ সমাজসংস্কারক সমাজের মধ্যে থাকা জাতিভেদ, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ইত্যাদি কুপ্রথার সম্পূর্ণ অবলুপ্তি ঘটাতে উদ্যোগী হন ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন।
ইয়ং বেঙাল বা নব্যবঙ্গ
হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র নেতৃত্বে হিন্দু কলেজের কিছু আদর্শবাদী যুবক বা ছাত্র, হিন্দুসমাজের বহু কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে। তারা যে চরমপন্থী আন্দোলন গড়ে তোলে তা-ই নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলন। ডিরোজিওপন্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন তারাচাঁদ চক্রবর্তী, কৃয়মোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাধানাথ শিকদার, প্যারীচাঁদ মিত্র, রামতনু লাহিড়ি প্রমুখ ব্যক্তিত্ব।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর