উনিশ শতকের নবচেতনার উন্মেষ বাংলা সাহিত্যকে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল আলোচনা করো
বাংলা গদ্যচর্চার সূত্রপাত: উনিশ শতকের নবচেতনার উন্মেষে বাংলা সাহিত্য শতধারায় বিকশিত হয়। ১৮০০ সালে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ঠিক তার পরের বছর মে মাসে কেরির তত্ত্বাবধানে বাংলা বিভাগের কাজ শুরু হয়। কেরি নয় জন পণ্ডিতকে নিয়োগ করেন এবং তাঁদের দ্বারা সূত্রপাত ঘটে বাংলা গদ্যচর্চার। বাংলা গদ্যের বিকাশে রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কালীপ্রসন্ন সিংহ, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ সাহিত্যিকদের অবদান চিরস্মরণীয়।
সাময়িকপত্র: উনিশ শতকে নবচেতনার উদ্বোধন, পরিপোষণ ও প্রচারের ক্ষেত্রে সাময়িকপত্র ছিল এক বড়ো মাধ্যম। সাধারণ মানুষের জীবনধারা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার সার্বিক পরিচিতি ফুটে ওঠে সাময়িকপত্রের 3 মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, সাময়িকপত্রের দৌলতেই বাংলা গদ্য সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ ‘দিগদর্শন’, ‘সম্বাদ কৌমুদী’, ‘বঙ্গদর্শন’ প্রভৃতি পত্রিকার উল্লেখ করা যেতে পারে।
কাব্যরচনার সূচনা: উনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের ফলে কাব্য-কবিতার ক্ষেত্রে মধুসূদন দত্ত পুনরুজ্জীবিত করলেন মহাকাব্যের ভারতকে। তিনি ইউরোপের হোমার, ভার্জিল, মিল্টন প্রমুখ আদি মহাকবিকে অনুসরণ করে কাব্য রচনা করলেন। তা ছাড়া হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরও পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখ সাহিত্যিকদের হাত ধরে বাংলা কাব্যসাহিত্য উন্নতির শিখরে পৌঁছোয়।
নাটক রচনার সূত্রপাত: উনবিংশ শতাব্দীর নবজাগরণের ফলে বাংলা নাট্যসাহিত্যের উন্মেষ ঘটে। ইউরোপীয় নাট্যাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মৌলিক এবং বাস্তবধর্মী নাটক রচনার প্রয়াস দেখা যায়। এক্ষেত্রে হরচন্দ্র ঘোষ, রামনারায়ণ তর্করত্নের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। এর পরে দীনবন্ধু মিত্র, গিরিশচন্দ্র ঘোষ, অমৃতলাল বসু, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মনীষীগণ নাট্যসাহিত্যকে পূর্ণ ও সমৃদ্ধ করে তোলেন।
এভাবে উনিশ শতকের বাঙালিচিত্তে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটা বৃহৎ পরিবর্তন সূচিত হয় এবং এরই পথ ধরে সাহিত্যচর্চাতে আসে অভিনবত্বের আস্বাদ-যা বাঙালি জাতির জীবনকে নানাভাবে উদ্দীপ্ত করে।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর