আশ্রমধর্ম বলতে কী বোঝো? সংক্ষেপে আলোচনা করো
আশ্রমধর্ম
‘আশ্রম’ শব্দটির দ্বারা জীবনের এক একটি অধ্যায়কে বোঝানো হয়ে থাকে। মানবজীবনের চারটি স্তর। যথা- ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস। মানুষের জীবনে এক একটি পর্যায়ে এক-একটি আশ্রম অবস্থান করে, চারটি আশ্রমের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই বোঝা যাবে যে মোক্ষ লাভ করাকেই মানবজীবনের চরম লক্ষ্য হিসেবে স্বীকার করা হয়েছে। চারটি আশ্রম অতিক্রম করে মানুষ মোক্ষ লাভ করে। চারটি স্তরকে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
ব্রহ্মচর্য
ব্রহ্মচর্যই মানুষের জীবনের ভিত্তি রচনা করে। গুরুগৃহে বেদবিদ্যা অর্জনের মধ্য দিয়ে ব্রহ্মচারীর চরিত্র গঠিত হয়। চরিত্র গঠনই হল শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য, ‘ব্রহ্মানি চরতি ইতি ব্রহ্মচারী’- সেই ব্যাক্তিকেই ব্রহ্মচারী ব্যক্তি বলা যেতে পারে যে জীবনের সমস্ত কর্মের মধ্যেও ব্রহ্মভাবনায় লীন থাকে। ব্রহ্মচর্য জীবন ছাত্র পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। এই পর্যায়ে ব্যক্তি শিক্ষার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এবং ব্রহ্মচর্যের অনুশীলন করে। ছাত্র গুরুকূলে যায় পাঠ গ্রহণ করতে।
গুরুর সঙ্গে বসবাস করে বিজ্ঞান, দর্শন, শাস্ত্র ও যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান অর্জন করে। এই পর্যায়ে ব্রহ্মচারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার বিশেষ গুরুত্ব থাকে না। গুরুর ইচ্ছা-অনিচ্ছাই এখানে মুখ্য বিষয়। এই পর্যায়ে ব্রহ্মচারী উপার্জনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে।
গার্হস্থ্য
বিবাহিত জীবন বা সংসার জীবনকে গার্হস্থ্যাশ্রম বা কৃতদার গার্হস্থ্য বলা হয়। সাংসারিক জীবন মানুষের জৈব তৃয়ার নিবৃত্তি ঘটাতে পারে না। সংযত বিবাহিত জীবনযাপন করেই মানুষ নিজেকে পরবর্তী আশ্রমের জন্য প্রস্তুত করে। এই আশ্রমে ব্যক্তি বংশবৃদ্ধি ছাড়াও আরও বহুবিধ কর্তব্য পালন করে থাকে। যেমন- পিতামাতার সেবা, সন্তানের প্রতিপালন, অতিথি সেবা, দেবপূজা ইত্যাদি। এছাড়াও মানুষ গার্হস্থ্য আশ্রমেই নিজের ঋণশোধের চেষ্টা করে। যেমন- ব্রহ্মঋণ, পিতৃঋণ, দেবঋণ, ভূতঋণ ও নৃঋণ।
বাণপ্রস্থ
তৃতীয় আশ্রম হল বাণপ্রস্থ। গার্হস্থ্য জীবন সার্থকভাবে সমাপ্ত হলে মানুষ বাণপ্রস্থ জীবনে প্রবেশ করে। বাণপ্রস্থ পর্যায়ে মানুষ গার্হস্থ্য জীবনের যাবতীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়ে ইষ্টসাধনায় ব্রতী হয় এবং অহিংসা, করুণা, কৃচ্ছসাধন ইত্যাদি গুণের অধিকারী হয়। প্রকৃতপক্ষে বানপ্রস্থের উদ্দেশ্য চিত্তশুদ্ধি। চিত্তশুদ্ধি হওয়ার পর ব্যক্তি উচ্চতম স্তর অর্থাৎ সন্নাস জীবনে প্রবেশ করে।
সন্ন্যাস
যিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন তিনিই সন্ন্যাসী। কায়িক, বাচিক, মানসিক হিংসা পরিত্যাগ করাই হল সন্ন্যাসীর ধর্ম। জাগতিক লাভ- লোকসান সন্ন্যাসীকে কোনোভাবে বিচলিত করতে পারে না। সন্ন্যাসী গৃহে অবস্থান করতে পারে না। বিচরণই সন্ন্যাস আশ্রমের রীতি হওয়ায় সন্ন্যাসকে প্রব্রজ্যা বলা হয়। সন্ন্যাস আশ্রমে জীব আত্মনিমগ্ন থেকে শাস্ত্র চিন্তায় নিজেকে নিয়োজিত করে।
আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ