আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester
১। “যেয়ে ঠেলতে হবে তো আবার ঘানি সারা দিনমান।”-আলোচ্য অংশটি কে, কাকে বলেছে? ‘ঘানি’ শব্দটির অর্থ কী? অংশটির মধ্য দিয়ে বক্তার কী বলতে চেয়েছেন আলোচনা করো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক ‘আগুন’-এর তৃতীয় দৃশ্যে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতিনিধি সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে বলেছে।
‘ঘানি’ শব্দটির অর্থ তৈলবীজ থেকে তেল বের করার যন্ত্র।
নাট্যকার এখানে সতীশের মুখ দিয়ে ঘানি ঠেলা বলতে দীর্ঘদিন শ্রমসাধ্য কাজ করা বা কঠোর পরিশ্রম করার কথা বলেছেন। নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে নাট্যকার সতীশ, ক্ষিরি প্রমুখ চরিত্রগুলিকে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে চিত্রিত করেছেন। দিন আনা দিন খাওয়া কারখানার শ্রমিক সতীশ সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করে তাদের জীবন অতিবাহিত করে। কিন্তু খাদ্যসংকটের সময় খাদ্যের অভাবে তাদের বেঁচে থাকাটা বিরাট সমস্যার হয়ে দাঁড়ায়। এই সংকটকালে শ্রমজীবী মানুষগুলির নিজের জীবন, সংসারের প্রতি এক চরম বিতৃষ্ণা জন্মায়। তাই চরম ক্ষোভ, হতাশা থেকে সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে এ কথা বলেছে।
২। “এখন সকালবেলাই তোমার পিন্ডি জোগাই কোত্থেকে বলতো। খামকা চেঁচাচ্ছ ভোরবেলা।”- অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কে, কাকে এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য লেখো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে গৃহীত।
এই সংলাপটি তৃতীয় দৃশ্যে উল্লেখযোগ্য নারী চরিত্র সতীশের স্ত্রী ক্ষিরি সতীশকে বলেছে।
নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, সতীশ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অন্ন এবং সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাবের চিন্তায় চিন্তিত হয়ে ওঠে। খাদ্য সংকটকালে কঠোর পরিশ্রম করেও দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোগাড়ে সে ব্যর্থ হয়। তাই বাধ্য হয়ে পেটের আগুনের জ্বালায়, জীবন বাঁচাতে সতীশ মিস্ত্রি নামক এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেড়প’ বা দেড় পোয়া চাল কর্জ অর্থাৎ ধার করে আনে। কিন্তু সতীশ খিদের জ্বালায় সেই দেড় প’ চালের মধ্যে এক প’ চালের ভাত নিজেই খেয়ে নেয় এবং হাফ প’ তার পরিবারের স্ত্রী ক্ষিরি ও মেয়ে ফুলকি খায়। সেই চালও আর উদ্ধৃত নেই। তাই সকালবেলা সতীশ যখন ক্ষিরিকে খেতে দিতে বলে তখন ক্ষিরি তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে সতীশকে এ কথা বলে। কৃত্রিম খাদ্যসংকট সাধারণ মানুষের জীবনকে কীভাবে ক্ষতবিক্ষত করেছিল, তা স্পষ্টরূপে ফুটে উঠেছে এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
৩। “… আজকাল বড়ো ট্যাকট্যাকানি কথা হয়েছে। তোর সে মুখের সাজা কিন্তু আমি একদিন আচ্ছা করে দিয়ে দেব।”-আলোচ্য অংশটি কে, কাকে, কোন্ প্রসঙ্গে বলেছে? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে এ কথা বলেছে। সতীশ কারখানার কাজে যাওয়ার সময় ক্ষিরিকে খেতে দিতে বললে ক্ষিরি রেগে গিয়ে তীক্ষ্ণ ভাষায় জানায়, সকালবেলা কোথা থেকে সে পিন্ডি জোগাড় করবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সতীশ অপমানিত হয়ে, রেগে গিয়ে ক্ষিরিকে আলোচ্য কথাগুলি বলেছে।
সতীশ একজন হতদরিদ্র শ্রমিক। তৎকালীন খাদ্যসংকটের সময় কঠোর পরিশ্রম করে উপার্জন করেও খাদ্য এবং সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। সরকার থেকে রেশনে চাল তথা খাদ্য বিক্রির ব্যবস্থা থাকলেও তাতে কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তাই সংসার চালাতে, দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকতে সতীশ এবং সতীশের মতো সাধারণ মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে। অভাবের তাড়নায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়। তাই সকালবেলা সতীশ কাজে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী-ক্ষিরির কাছে দু-মুঠো খেতে চাইলে ক্ষিরি অত্যন্ত বিরক্তি ও ক্ষোভের সঙ্গে সংসার
খাদ্যশূন্য তা জানায়। এরই পাশাপাশি ক্ষিরি সতীশের আর্থিক অনটনের প্রতি বিরূপ মনোভাব পেশ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে কথাগুলি বলেছে।
৪। “যা, মরগে যা।”-অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কে, কাকে এই কথাটি বলেছে? অংশটির তাৎপর্য নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘আগুন’ নাটকটির তৃতীয় দৃশ্যে কারখানার শ্রমিক সতীশ তার স্ত্রী ক্ষিরিকে উদ্দেশ করে এই কথাটি বলেছে।
নাটকের তৃতীয় দৃশ্যে দেখা যায়, কারখানার শ্রমিক সতীশ সকালে কাজে যাওয়ার আগে তার স্ত্রী ক্ষিরির কাছে খাবার চায়। কিন্তু খাদ্য সংকটকালে সংসারে অভাব, খাদ্যের ঘাটতির কথা ক্ষিরি সতীশকে বিরক্তির সঙ্গে জানায়। গত রাতে সতীশ তার প্রতিবেশী মিস্ত্রির কাছ থেকে যে দেড় প’ চাল ধার করে এনেছিল, তাও শেষ। তাই ক্ষিরি ক্ষোভ প্রকাশ করে- “এখন সকালবেলাই তোমার পিন্ডি জোগাই কোত্থেকে বলতো।” – সাংসারিক অভাবের তাড়নায় ক্ষিরি সতীশকে আর্থিকভাবে দুর্বল, সংসার চালাতে অক্ষম পুরুষমানুষ বলে হেয় করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সতীশ রাগে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ক্ষিরিকে লাথি মারে এবং ‘হারামজাদি’ প্রভৃতি অশ্লীল কথা বলে ঝগড়া করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
৫। “… আজ নাকি দু সের করে দেবে।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে? কী দেওয়ার কথা বক্তা এখানে বলেছে? অংশটি নিজের ভাষায় আলোচনা করো। ১+১+৩
নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ মনোরমা তার স্বামী হরেকৃষ্ণকে এ কথা বলেছে।
বক্তা মনোরমা তার স্বামী হরেকৃষ্ণকে রেশনে চাল দেবে বা পাওয়া যাবে-এ কথা বলেছে।
ব্রিটিশ পরাধীন দেশে বাংলায় যে মন্বন্তর বা কৃত্রিম খাদ্যসংকট হয়েছিল, তাতে কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত শ্রেণির সকল মানুষ দু-মুঠো খাদ্যের আশায় দিশেহারা হয়ে উঠেছিল। নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে মনোরমা ও তার স্বামী হরেকৃষ্ণর কথোপকথনে সেই করুণ দৃশ্য ফুটে উঠেছে। হরেকৃষ্ণ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে যে চা, চিনি, চাল প্রভৃতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিছুই ঘরে নেই-কীভাবে সংসার চলবে, কীভাবে দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকবে তা নিয়ে তার স্ত্রী মনোরমার কাছে গভীর সংশয় প্রকাশ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মনোরমা হরেকৃষ্ণকে জানায়, আজ একটু কষ্ট করে একবার রেশনের দোকানের লাইনে গিয়ে চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনা উচিত। পাশাপাশি এও বলে যে, প্রতিবেশীর কাছ থেকে সে জানতে পেরেছে রেশনে নাকি দু-সের করে চাল দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে বক্তা মনোরমা আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
৬। “একেবারে ঘেন্না ধরিয়ে দিলে।”- অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কে, কাকে এ কথা বলেছে? বক্তার এ কথা বলার কারণ কী আলোচনা করো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি বিশিষ্ট নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটি ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে মধ্যবিত্ত সমাজের মানুষের প্রতিনিধি কেরানি হরেকৃষ্ণ তার স্ত্রী মনোরমাকে বলেছে।
নাটকে মধ্যবিত্ত মানুষের প্রতিনিধি হরেকৃষ্ণ ও মনোরমা নিজেদের মধ্যে সাংসারিক অভাব, চাল তথা খাদ্যের সংকট প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। মনোরমা তার স্বামী হরেকৃষ্ণের কাছে এই খাদ্য সংকটকালে অফিস থেকে চাল, ডাল প্রভৃতি খাদ্যদ্রব্য দিয়ে সাহায্য করার বিষয়ে জানতে চায়। কিন্তু হরেকৃষ্ণ হতাশ হয়ে, গভীর ক্ষোভের সঙ্গে অফিসের বাবুদের খাদ্য বিলি করা নিয়ে চরম কেলেঙ্কারির কথা জানায়। তাই হরেকৃষ্ণ অফিস থেকে খাদ্যদ্রব্য পাওয়ার আশা ত্যাগ করে কারণ এ বিষয়টি মিথ্যা আশা জাগানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এ প্রসঙ্গে হরেকৃষ্ণ মনোরমাকে উপযুক্ত কথাগুলি বলেছে।
৭। “যে রক্ষক সেই হল গিয়ে তোমার ভক্ষক। কাকে কী বলবে বল? হয়েছে যত সব চোর ছেঁচড়ের আড্ডা।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে? রক্ষককে ভক্ষক বলেছেন কেন বক্তা? বক্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ১+২+২
আলোচ্য কথাটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণ তার স্ত্রী মনোরমাকে বলেছে।
হরেকৃষ্ণ সমাজের মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি। সে পেশায় একজন অফিস কেরানি। প্রাক্ মন্বন্তর পরিস্থিতিতে এক চরম খাদ্যসংকট এবং খাদ্য নিয়ে কালোবাজারি সৃষ্টি হয়েছিল। তার ফলে কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণির মানুষের জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিসহ। তৎকালীন সরকার এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মী-যারা এই সংকটকালে সাধারণ মানুষের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা বা খাদ্য জোগান দেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন, তারাই সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে কালোবাজারির মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করেছিল। তাই হরেকৃষ্ণ রক্ষককে ভক্ষক বলে অভিহিত করেছে।
আলোচ্য সংলাপটি একটি প্রবাদ বাক্য। ‘যে রক্ষক সেই ভক্ষক’- অর্থাৎ রক্ষাকর্তাই হত্যাকারী। পরাধীন ভারতে বাংলার মন্বন্তরের প্রেক্ষাপটে ১৯৪৩-এ নাটকটি রচিত। তাই নাটকের মধ্যে মূলত খাদ্যসংকট, খাদ্য সংগ্রহের জন্য রেশনের লাইন প্রভৃতি প্রসঙ্গ ফুটে উঠেছে। নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণ ক্ষুধার জ্বালায় ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করে উক্ত প্রবাদ বাক্যটি বলেছে। আসলে তৎকালীন খাদ্যসংকটের সময় সরকার থেকে দুর্ভিক্ষকবলিত মানুষের জন্য রেশনে ন্যায্যমূল্যে খাদ্য বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের বিনামূল্যে বা অল্পমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্ত এই পরিস্থিতিতে কিছু ক্ষমতাশালী মানুষ খাদ্য নিয়ে কালোবাজারি শুরু করার ফলে সাধারণ মানুষকে চরম দুরবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। বক্তব্যটির মধ্য দিয়ে সমাজের বিত্তশালী মানুষের অমানবিক আচরণের প্রতি চরম বিদ্রুপ করা হয়েছে।
৮। “… দেখি, দাও টাকাটা, ঘুরে আসি। মিছে ভেবেই কি কিছু বার করতে পারবো।”-কে, কাকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে? বক্তা কোথা থেকে ঘুরে আসার কথা বলেছে? বক্তার ভাবনা সম্পর্কে আলোচনা করো। ১+১+৩
গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের চতুর্থ দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণ তার স্ত্রী মনোরমাকে এ কথা বলেছে।
বক্তা হরেকৃষ্ণ চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের জন্য রেশন দোকান থেকে ঘুরে আসার কথা বলেছে।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলার কৃত্রিম মন্বন্তরের প্রাক্-মুহূর্তে মানুষ খাদ্যের জন্য চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। দু-বেলা দু-মুঠো খাদ্য জোগাড় করতে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। সরকার থেকে ন্যায্যমূল্যে রেশনে চাল তথা খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের ব্যবস্থা করা হলেও, তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। আবার এর পাশাপাশি কিছু ক্ষমতাবান অসৎ মানুষের কালোবাজারির ফলে অবস্থা আরও সংকটজনক রূপ ধারণ করে। ফলে সাধারণ মানুষকে রেশনের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়। আবার কখনো-কখনো চাল তথা খাদ্যসামগ্রী না পেয়ে খালি হাতেও ফিরতে হয়। এই অনিশ্চিত, অসহায় ভয়ংকর খাদ্যসংকট পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে বক্তা হরেকৃষ্ণ তার মতামত – প্রকাশ করেছে।
৯। “সুবিধে হবে বলে মনে করছ, আচ্ছা!”-অংশটির উৎস নির্ণয় কথায় করো। কে, কাকে এ কথা বলেছে? বক্তার এরূপ কথা বলার কারণ কী আলোচনা করো। ১+২+২
আলোচ্য অংশটি প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম নাটক ‘আগুন’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রতিনিধি কেরানি হরেকৃষ্ণ তার স্ত্রী মনোরমাকে এ কথা বলেছে।
বিপদের সম্মুখীন হলে ধর্মপ্রাণ অসহায় মানুষ ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হয়। কিন্তু ঈশ্বরের স্মরণাপন্ন হয়েও মানুষ যখন সমস্যা বা বিপদ থেকে উদ্ধার পায় না তখন স্বাভাবিকভাবে ঈশ্বরবিশ্বাসে নিরাশ হয়ে পড়ে। নাটকে দেখা যায়, কৃত্রিম মন্বন্তরের সময় সাধারণ মানুষ খাদ্যের অভাবে দিশেহারা হয়ে শত চেষ্টা করেও খাদ্য সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়। আর এ কারণেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি কেরানি হরেকৃষ্ণ নিরাশ হয় এবং ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। তাই হরেকৃষ্ণর স্ত্রী হরেকৃষ্ণকে ঠাকুর নমস্কার করে রেশনের লাইনে যাওয়ার কথা বললে, হরেকৃষ্ণ প্রত্যুত্তরে আলোচ্য কথাটি বলেছে।
১০। “বেশ তো থাকতিস বাবা দেশঘরে। কেন খামোকা মরতে এলি।” -অংশটি কোথা থেকে গৃহীত? কে, কাকে এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য লেখো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্য থেকে গৃহীত।
আলোচ্য অংশটি পঞ্চম দৃশ্যে সারবন্দি রেশনের কিউতে একটি নামহীন চরিত্র প্রথম পুরুষ ওড়িয়া এক ব্যক্তিকে বলেছে।
ব্রিটিশ পরাধীন ভারতবর্ষে (১৯৪৩) বাংলায় মহামন্বন্তরের আগেই খাদ্য মজুত করে কৃত্রিম খাদ্যাভাব সৃষ্টি করে মন্বন্তরের যে প্রস্তুতি শুরু হয়, তারই জীবন্ত ছবি ‘আগুন’ নাটকে ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ চাল তথা খাদ্যের জন্য সাধারণ মানুষ রেশনের দোকানে লাইন দিয়ে দু-মুঠো খাদ্য সংগ্রহ করে বাঁচার চেষ্টা করে। নাটকের শেষ দৃশ্যে নাট্যকার সারবন্দি রেশনের কিউ দেখিয়েছেন- যেখানে বিভিন্ন ভাষা, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বহু মানুষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে খাদ্যের জন্য অপেক্ষমাণ। সেখানে এক ওড়িশার ব্যক্তিকে (নাটকে যার নাম ওড়িয়া) উদ্দেশ করে প্রথম পুরুষ এই মতামত জানায়। কেন-না ওড়িশার এই কৃত্রিম মন্বন্তরের প্রভাব বাংলার মতো তীব্র ছিল না। তাই ওড়িয়া তার দেশঘর অর্থাৎ ওড়িশা থেকে বাংলায় এসে যে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, সে প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করা হয়েছে।
১১। “দরজার পাল্লায় লটকানো বিজ্ঞাপন…”- অংশটির উৎস নির্ণয় করো। কীসের বিজ্ঞাপনের কথা বলা হয়েছে? অংশটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
রেশন দোকানে খাদ্যসামগ্রী বিক্রির পর ন্যায্যমূল্য নিয়ে অতিরিক্ত খুচরো পয়সা ফেরত দেওয়া দোকানদারের পক্ষে সবসময় সম্ভব হত না। খুচরো পয়সার অভাবের কথা ক্রেতাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্য দোকানদার রেশন দোকানের দরজায়- ‘খুচরা নাই’ এই বিজ্ঞাপন দিয়েছিল।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের প্রাক্-মুহূর্তে বাংলায় যে কৃত্রিম মন্বন্তর সৃষ্টি হয়েছিল, তার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য সরকার থেকে রেশনে ন্যায্যমূল্যে চাল তথা খাদ্যসামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাই সাধারণ মানুষ নিরুপায় হয়ে দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে বাঁচার তাগিদে রেশন দোকানের সামনে ভোরবেলা থেকে লাইন দিত। রেশন দোকানদার ক্রেতাদের খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করে ন্যায্য অর্থ নিয়ে খুচরো পয়সা ফেরত দিতে অনেকসময় ব্যর্থ হত। আর এর ফলে যেমন দেরি হত, তেমনই লাইনে গণ্ডগোল বেঁধে যেত। ফলে এক অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হত। তাই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোকানদার রেশন দোকানের দরজায় এই বিজ্ঞাপন লিখে দিয়েছিল।
১২। “নইলে কিন্তু চাল মিলবে না বলে দিচ্ছি।”-অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কে, কাকে এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নামক একাঙ্ক নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে সিভিক গার্ড রেশনের কিউতে চাল, খাদ্যসামগ্রীর জন্য অপেক্ষমাণ জনতাকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে।
১৯৪৩-এর মন্বন্তরের আগে বাংলাদেশে যে কৃত্রিম খাদ্যসংকট শুরু হয়েছিল, তার ফলে সরকার থেকে রেশনে ন্যায্যমূল্যে সাধারণ মানুষকে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। তাই স্বাভাবিকভাবেই রেশনে খাদ্য সংগ্রহের আশায় ভোর থেকেই বহু মানুষ এসে লাইন দিত। রেশনের দোকানের লাইন নিয়েও অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে কলহ, উত্তেজনা, চ্যাঁচামেচি লেগেই থাকত। এর ফলে নিয়ম করা হয় যে, রেশন থেকে খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহের জন্য আগে এসে টিকিট সংগ্রহ করে লাইনে দাঁড়াতে হবে, অনুমতি পত্র নিতে হবে। এই টিকিট ছাড়া খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করা হবে না। তাই সিভিক গার্ড রেশনের কিউতে অপেক্ষমাণ জনতাকে উদ্দেশ্য করে এ কথা বলে সচেতন করে দেন।
১৩। “ও সব আইনের কথা বলবেন আদালতে গিয়ে-এখানে নয়।”-কে, কাকে কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলেছে? মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩
উদ্ধৃতিটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য উক্তিটিতে ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে সিভিক গার্ড ১ম পুরুষ নামক ব্যক্তিকে এ কথা বলেছেন। রেশনের কিউতে অপেক্ষমাণ জনতার উদ্দেশে সিভিক গার্ড বলে রেশনের খাদ্যসামগ্রী কিনতে হলে খুচরো পয়সা সঙ্গে রাখতে হবে, নইলে চাল মিলবে না। আর উত্তরে ওই লাইনে অপেক্ষমাণ ১ম পুরুষ জানায় যে, খুচরো না থাকলে চাল পাওয়া যাবে না-এ কথা কোন্ আইনে বলা আছে। এই প্রসঙ্গে সিভিক গার্ড ১ম পুরুষকে আলোচ্য উক্তিটি বলেছে।
১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে কৃত্রিম খাদ্যসংকটের সময় বাংলার কৃষক-শ্রমিক- মধ্যবিত্ত প্রভৃতি সাধারণ মানুষেরা খাদ্যের আশায় সরকার পরিচালিত রেশনের দোকানে ভিড় জমায়। প্রতিদিন কাতারে কাতারে মানুষ খাদ্য সংগ্রহের লাইনে দাঁড়ায়। ফলে লাইনে ঝগড়া, বিতর্ক কলরবের পাশাপাশি দোকানদারের সঙ্গে খুচরো পয়সার অভাব নিয়েও চলে নানা সমস্যা। তাই লাইন ঠিক রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে খাদ্য বিতরণের জন্য সিভিক গার্ড নিয়োগ করা হয়। লাইনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিক গার্ড কিউতে অপেক্ষমাণ জনতাকে সচেতন করার জন্য জানায়, খুচরো পয়সা ছাড়া চাল বা খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিউতে অপেক্ষামাণ জনতার থেকে ১ম পুরুষ সিভিক গার্ডের কাছে জানতে চায়, কোন আইন বলা আছে যে খুচরো ছাড়া চাল দেওয়া হবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিভিক গার্ড তার ক্ষমতার ঔদ্ধত্যের পরিচয় দেয়।
১৪। “কেন বেচারিকে খামখা মারধোর করছেন মশাই।”-বক্তা কাকে এ কথা বলেছে? বক্তা কাকে ‘বেচারি’ বলে সম্বোধন করেছে? বক্তার এ ধরনের বক্তব্যের কারণ কী তা আলোচনা করো। ১+১+৩ অথবা, “ছি, ছি, এসব কী অত্যাচার।”-কে, কাকে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছে? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো।২+৩ অথবা, “এ কোন দিশি শাসন মশাই?”-কে, কাকে, কেন এ কথা বলেছে? অংশটি নিজের ভাষায় আলোচনা করো। ২+৩
আলোচ্য অংশটি গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
আলোচ্য অংশটির বক্তা নাটকের পঞ্চম বা শেষ দৃশ্যের নামহীন চরিত্র ৩য় পুরুষ সিভিক গার্ডকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে।
বক্তা ৩য় পুরুষ, ৪র্থ পুরুষ নামক চরিত্রকে ‘বেচারি’ বলে সম্বোধন করেছেন। অর্থাৎ ৪র্থ পুরুষকে নিরীহ অসহায় ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, রেশনের দোকানের সামনে অসংখ্য মানুষের সুবিশাল এক লাইন। কিউতে মানুষ খাদ্য সংগ্রহের আশায় দণ্ডায়মান। এই অগণিত জনতার লাইন ঠিক রাখার জন্য সিভিক গার্ড নিয়োজিত হয়েছে। সিভিক গার্ড একদিকে লাইন ঠিক করতে করতে হঠাৎ অন্যদিকে ছুটে যায়। অতিরিক্ত চাল সংগ্রহ করার সন্দেহে সিভিক গার্ড দুঃখী চেহারার এক ব্যক্তিকে (নাটকে যার নাম ৪র্থ পুরুষ) চপেটাঘাত করে। ৪র্থ এর প্রতিবাদ করলে তাকে সিভিক গার্ড তিরস্কারও করতে থাকে। এই প্রসঙ্গে রেশনের কিউতে দাঁড়িয়ে থাকা ৩য় পুরুষ সিভিক গার্ডকে এ কথা বলেছে। খাদ্য সংকটকালে দরিদ্র মানুষের ওপর শাসক শ্রেণির অত্যাচার, নিপীড়নের স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে আলোচ্য বক্তব্যের মধ্য দিয়ে।
১৫। “মুখ সামলে কথা বলো বলছি।”-কে, কাকে, কেন এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য লেখো। ২+৩
উদ্ধৃতিটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে গৃহীত। ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম বা শেষ দৃশ্যে রেশনের কিউতে খাদ্যের জন্য অপেক্ষমাণ জনতার মধ্যে দণ্ডায়মান ৪র্থ পুরুষের গালে সিভিক গার্ড হঠাৎ বিনা কারণে চড় মারে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ৩য় পুরুষ। এই নিয়ে সিভিক গার্ডের সঙ্গে ৩য় পুরুষের তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে। তখন ৩য় পুরুষ রাগে উত্তেজিত হয়ে সির্ভিক গার্ডকে উদ্দেশ করে বলে “… সিভিক গার্ড হয়েছেন তো একেবারে মাথা কিনে নিয়েছেন।” এরই পরিপ্রেক্ষিতে সিভিক গার্ড এ কথা বলেছেন।
রেশনের কিউতে দেখাশোনারত সিভিক গার্ড ৪র্থ পুরুষ নামক ব্যক্তিকে লাইনে না থাকার সন্দেহে হঠাৎ চড় মাড়ে। লাইনে অপেক্ষারত ৩য় পুরুষ নামক অপর এক ব্যক্তি সিভিক গার্ডের এই আচরণের প্রতিবাদ জানায় এবং সিভিক গার্ড হয়ে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি এই বলে ধিক্কার জানায়। এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সিভিক গার্ড অপমানিত হয়ে রেগে গিয়ে ৩য় পুরুষকে মুখ সামলে অর্থাৎ সংযত হয়ে স্থান-কাল-পাত্র বুঝে কথা বলতে হুকুম দেয়।
১৬। “তিনটি প্রাণী দুদিন অনাহারে আছি বাবা, দয়া কর।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে? বক্তার অনাহারে থাকার কারণ কী? অংশটির তাৎপর্য লেখো। ১+১+৩
উদ্ধৃতিটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের লেখা ‘আগুন’ নাটক থেকে গৃহীত।
‘আগুন’ নাটকের শেষ দৃশ্যে ৪র্থ পুরুষ নামক চরিত্রটি সিভিক গার্ডকে এ কথা বলেছে।
কৃত্রিম খাদ্যসংকটকালে বাংলার সাধারণ মানুষ দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য দিশেহারা হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতে বক্তা ৪র্থ পুরুষ দু-দিন কোনো খাদ্য জোগাড় করতে না পারায় অনাহারে দিন কাটায়। বাংলায় ১৯৪৩-এ মহামন্বন্তরের প্রাক্-মুহূর্তে কৃত্রিম খাদ্যসংকট শুরু হয়েছিল। বহু মানুষ পেটের খিদের জ্বালায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে উঠেছিল পাশাপাশি বহু মানুষ প্রতিদিন খাদ্য জোগাড় করতে না পেরে অনাহারে দিনের পর দিন অতিবাহিত করেছিল। নাটকের শেষ দৃশ্যে ৪র্থ পুরুষ নামক ব্যক্তিকে রেশনের লাইনে না থাকার সন্দেহে সিভিক গার্ড চড় মেরে লাইনের বাইরে বের করে দেয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৪র্থ পুরুষ সিভিক গার্ডকে এ কথা বলে অনুনয়-বিনয় করেছে।
১৭। “আমি কুকুর নই।”-অংশটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কে, কাকে এ কথা বলেছে? বক্তার এরূপ কথা বলার কারণ কী? ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
নাটকটির পঞ্চম দৃশ্যে ৪র্থ পুরুষ সিভিক গার্ডকে এ কথা বলেছে। রেশনের কিউতে বেনিয়ম করার মিথ্যা সন্দেহে ৪র্থ পুরুষকে সিভগার্ড চড় মেরে, কটুকথা বলে কিউ থেকে বের করে দেয়। ৪র্থ পুরুষ সিভিক গার্ডকে বহু অনুনয়-বিনয় করলেও সিভিক গার্ড তা মানতে নারাজ এবং কুকুরের মতো দুর দুর করে ভাগিয়ে দিতে থাকে। সিভিক গার্ডের কাছ থেকে অসম্মানজনক শব্দ শুনে ৪র্থ পুরুষ প্রতিবাদ করে জানায় যে, সে – কুকুর নয়। আসলে সমাজের ক্ষমতাশালী, শাসকশ্রেণি নিম্নশ্রেণির দরিদ্র ই মানুষের প্রতি যে চরম অবজ্ঞা, দুর্ব্যবহার করত তারই চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে আলোচ্য অংশের মধ্য দিয়ে।
১৮। আগুন! আগুন’ অথবা, “আগুন! আগুন জ্বলছে আমাদের পেটে।”-অংশটির উৎস নির্ণয় করো? বক্তা কাকে বা কাদের উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে? এ ধরনের বক্তব্যের তাৎপর্য আলোচনা করো। ১+১+৩
অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচর্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
অংশটির বক্তা যুবক নামক এক ব্যক্তি রেশনের কিউতে খাদ্যের জন্য অপেক্ষমাণ ১ম পুরুষ, ২য় পুরুষ, ৩য় পুরুষ, ৪র্থ পুরুষ, হরেকৃষ্ণ এবং লাইন দেখভাল করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিক গার্ডের উদ্দেশে এ কথা বলেছে।
ব্রিটিশ পরাধীন বাংলা দেশে যে কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তার ফলে বহু মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে জীবন কাটাতে থাকে। দুবেলা দু-মুঠো খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে থাকে। পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য সরকার থেকে রেশনে ন্যায্যমূল্যে চাল, খাদ্যসামগ্রী বণ্টনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কিছু অসৎ লোকের কালোবাজারির জন্য তা প্রায় ব্যর্থ হয়ে যায়। প্রতিদিন খাদ্যের সারিতে কাতারে কাতারে মানুষ খাদ্যের আশায় দীর্ঘ অপেক্ষা করে অল্প কিছু চাল নিয়ে বা কখনও খালি হাতে বাড়ি ফিরে যায়। খাদ্যের অভাবে মানুষগুলির পেটে যেন আগুন জ্বলতে থাকে। তাই যুবক নামক চরিত্রটি ক্ষোভে, কষ্টে, হতাশায় এই ব্যঙ্গার্থক কথা বলে জনগণকে যেমন প্রতিবাদী হওয়ার বার্তা দিয়েছে, ঠিক তেমনই শাসকশ্রেণির প্রতি তীব্র বিদ্রুপ করেছে।
১৯। “লুঙ্গি, টিকি, পৈতে, টুপি সব একাকার হয়ে গেছে।”-উদ্ধৃতিটি কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে? কে, কাকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে? বক্তার এরকম বলার কারণ কী? ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি বাংলা গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘আগুন’ নাটকের শেষ দৃশ্যে দোকানি নামক চরিত্রটি মুসলমান ভাই নামক চরিত্রকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে।
কৃত্রিম খাদ্যসংকটকালে বাংলার হতদরিদ্র জনসাধারণ রেশনের দোকানের লাইনের সামনে গিয়ে খাদ্য জোগাড় করত। তবে যে খাদ্য সংগ্রহ করত তাতে কখনও অর্ধাহারে বা কখনও খাদ্য না পেয়ে অনাহারে জীবন কাটাত। তাই প্রতিদিন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কাতারে কাতারে মানুষ সরকারি ন্যায্যমূল্যে রেশনের দোকানের সামনে লাইন দিত। এই কৃত্রিম খাদ্যসংকটের ফলে মানুষ ভেদাভেদ ভুলে খাদ্যের আশায়, জীবন বাঁচানোর তাগিদে এক হয়ে গিয়েছিল। তাই মুসলমান ভাই যখন রেশনের দোকানির কাছে জানতে চায়, কিউর সকল মানুষ চাল তথা খাদ্যসামগ্রী পাবে কিনা,তারই উত্তরে দোকানি এ কথা বলেছে। লুঙ্গি ও টুপি বলতে মুসলমান সম্প্রদায় এবং টিকি ও পৈতে বলতে হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা বলা হয়েছে। নাট্যকার এই সংলাপের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন।
২০। “সব্ব চাউড় খাউচি। এবে সব্ব এক হৈ গিলা। চাউড়ের কথা বড় মস্ত কথা আছে রে দাদা।”-কে, কাকে, কখন এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩
উদ্ধৃিতিটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
‘আগুন’ নাটকের শেষ দৃশ্যে ওড়িয়া নামক চরিত্রটি রেশন দোকান থেকে চাল নিয়ে কোঁচড়ে বাঁধতে বাঁধতে সহাস্য মুখে রেশনের দোকানিকে এ কথা বলেছে।
১৯৪৩-এর মন্বন্তরের প্রাক্-মুহূর্তে বাংলায় যে কৃত্রিম খাদ্যসংকট শুরু হয়েছিল, তার ফলে অগণিত জনতা খাদ্যের জন্য দিশেহারা হয়ে উঠেছিল। এই সময় মানুষ ধর্ম-বর্ণ-জাতিভেদ ভুলে দু-মুঠো খাদ্যের জন্য এক হয়েছিল কেবল বাঁচার তাগিদে। নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায়, খাদ্য সংকটকালে ন্যায্যমূল্যে রেশনের দোকানের সামনে ভোর থেকে অগণিত জনতার লাইন। সেই লাইনে হিন্দু, মুসলিম ওড়িয়া, নীচু জাত, উঁচুজাত অবাঙালি, মধ্যবিত্ত, গরিব প্রভৃতি নানা শ্রেণির মানুষ দাঁড়িয়ে দু-মুঠো চাল তথা খাদ্য সংগ্রহ করছে। তাই ওড়িয়া ব্যক্তি রেশন দোকান থেকে চাল সংগ্রহ করে কোঁচড়ে বাঁধতে বাঁধতে হাসিমুখে রেশন দোকানদারকে জানায়, পেটের খিদের জ্বালায় সবাই এক হয়ে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করছে। এই উক্তির মধ্য দিয়ে ওড়িয়া চরিত্রটির বাস্তববাদী চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
২১। “হাতি যখন নোদে পড়ে চামচিকে তায় লাথি মারে”; -কে, কাকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে? এ কথার অর্থ কী? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি প্রখ্যাত নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের প্রথম একাঙ্ক নাটক ‘আগুন’ থেকে গৃহীত। উদ্ধৃতিটি ‘আগুন’ নাটকের পঞ্চম বা শেষ দৃশ্যে রেশনের দোকানি রেশনের লাইন ঠিক রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সিভিক গার্ডকে উদ্দেশ করে এ কথা বলেছে।
‘হাতি যখন নোদে পড়ে চামচিকে তায় লাথি মারে’; -এটি একটি বাংলার আঞ্চলিক প্রবাদ বাক্য। হাতি নদীতে বা কাদায় পড়লে সামান্য ক্ষুদ্র চামচিকিও তাকে লাথি মারে। অর্থাৎ ক্ষমতাশালী বা শক্তিশালী ব্যক্তি যখন বিপদে পড়ে তখন নগণ্য, তুচ্ছ ব্যক্তিও তাকে অবহেলা বা হেয় করে। বাক্যটির মাধমে বক্তা দোকানি এ কথা বোঝাতে চেয়েছে।
কৃত্রিম খাদ্যসংকটকালে অগণিত জনগণ খাদ্যের জন্য হাহাকার করতে থাকে। মানুষ জাত-ধর্ম-বর্ণ ভুলে এক হয়ে খাদ্যের সন্ধানে মেতে ওঠে। সরকার থেকে ন্যায্যমূল্যে রেশনে খাদ্য বণ্টনের ব্যবস্থা করা হলে মানুষ নিজেদের সামাজিক, ধর্মীয় প্রভৃতি ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয় এবং পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে খাদ্যের লাইনে দাঁড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে থাকে। ঐক্যবদ্ধ জনতার সামনে ক্ষমতাসীন, ধনী মানুষদের ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি কমতে থাকে। এ প্রসঙ্গে দোকানি ওড়িয়া ব্যক্তির কথার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রবাদ বাক্যটি উচ্চারণ করেছেন।
২২। “বড্ড খাঁটি কথা বলেছ হে। বড্ড খাঁটি কথা হেঃ হেঃ।”-কে, কাকে এ কথা বলেছে? বক্তা কোন্ কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ কথা বলেছে? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ১+১+৩
অংশটি গণনাট্য আন্দোলনের পথিকৃৎ নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘আগুন’ নাটকের শেষ দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণ ওড়িয়া নামক ব্যক্তিকে এ কথা বলেছে।
ওড়িয়া ব্যক্তিটি রেশন দোকানদারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে কোঁচড়ে বাঁধতে বাঁধতে দোকানদারকে বলে যে, চাল অর্থাৎ খাদ্য পাওয়া এই সংকটকালে বড়ো জিনিস। এই চাল বা খাদ্যের জন্য সব মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষমাণ। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে হরেকৃষ্ণ তাকে সমর্থন জানিয়ে উক্তিটি করেছে।
রেশনের চাল সংগ্রহের লাইনে দীর্ঘ অপেক্ষার পর ওড়িয়া নামক ব্যক্তিটি দোকানদারের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করে। চাল পেয়ে ওড়িয়া উৎফুল্ল হয়ে হাসিমুখে দোকানিকে জানায় যে, এই সংকটকালে চাল বড়োি জিনিস, এই চালের জন্যই মানুষ ভেদাভেদ ভুলে এক হয়ে গেছে। সমাজ বাস্তবতার বাস্তব চিত্র ওড়িয়ার সংলাপে প্রকাশিত হয়েছে। এই চরম বাস্তবতাকে হরেকৃষ্ণ সমর্থন জানিয়ে ওড়িয়াকে এ কথা বলেছে।
৩২। “সমস্যা সব্বার।” অথবা, “একথা কি ভেবেছি কোনোদিন, স্বপ্নেও।”-অংশটির উৎস নির্ণয় নি করো। কে, কাকে এ কথা বলেছে? অংশটির তাৎপর্য নিজের ভাষায় লেখো। ১+১+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে কেরানি হরেকৃষ্ণ রেশনের লাইনে চাল সংগ্রহকারী ৪র্থ পুরুষ নামক সঙ্গী ব্যক্তিকে এ কথা বলেছে।
মন্বন্তরের প্রাক্-মুহূর্তে কৃত্রিম খাদ্যসংকটকালে বাংলার অগণিত জনগণ খাদ্যসংগ্রহের জন্য রেশনের দোকানের সামনে ভিড় জমাত। খাদ্যের চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় চাল তথা খাদ্য পাওয়ার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তাই প্রতিদিন বহু মানুষ লাইনে দাঁড়িয়েও খালি হাতে বাড়ি ফিরেছে। তাই সকলকে তৎকালীন এই সমস্যা বা সংকটের সম্মুখীন হতে হয়েছে। পাশাপাশি দু-বেলা দু-মুঠো চাল তথা খাদ্যের জন্য মানুষকে যে এই সমস্যা অভাবের মধ্যে পড়তে হবে, তা কেউ কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবেনি। কৃত্রিম খাদ্যসংকটে সাধারণ মানুষের সমস্যার জীবন্ত চিত্র ফুটে উঠেছে হরেকৃষ্ণর সংলাপটির মধ্য দিয়ে।
৩৩। “যথেষ্ট তো হয়েছে। এখন বাঁচতে হবে। বাঁচতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে ব্যাস্।” অথবা, “তা ছাড়া উপায় নেই, কোনো উপায় নেই।”-কে, কাকে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছে? অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো। ২+৩
আলোচ্য অংশটি নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ‘আগুন’ নাটক থেকে নেওয়া হয়েছে।
আগুন নাটকের শেষ দৃশ্যে রেশনের লাইনে চাল সংগ্রহের জন্য অপেক্ষমাণ ৩য় পুরুষ নামক ব্যক্তি হরেকৃষ্ণ এবং ৪র্থ পুরুষ নামক ব্যক্তির উদ্দেশে এ কথা বলেছে।
হরেকৃষ্ণ এবং ৪র্থ পুরুষ রেশনের লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে হওয়া ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিচ্ছিল। এমন সময় তাদের পাশে অবস্থানকারী ৩য় পুরুষ নামক চরিত্রটি আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
কৃত্রিম খাদ্যসংকটকালে সাধারণ মানুষ খাদ্যের জন্য হাহাকার করছিল। সমাজের প্রত্যেক মানুষের তখন একটাই লক্ষ্য ছিল দু-বেলা দু-মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকা। এই পরিস্থিতিতে মানুষ নিজেদের মধ্যে বৈষম্য ভুলে রাগ, অভিমান-মান-মর্যাদাকে দূরে সরিয়ে একত্রিত হয়ে বেশনের কিউতে দাঁড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছিল। তবুও লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে বা বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা নিয়ে তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি বা তর্ক-বিতর্ক দেখা গেছে। তাই লাইন দেওয়া নিয়ে হরেকৃষ্ণের সঙ্গে ৪র্থ পুরুষের ভুল বোঝাবুঝি হয়। খাদ্যসংকট নিয়ে হরেকৃষ্ণর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ৪র্থ পুরুষ জানায় যে, এই সংকটকালে বাঁচতে হলে মিলেমিশে থাকতে হবে, তা ছাড়া কোনো উপায় নেই। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংকট উত্তরণের বার্তা প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন – ছুটি গল্পের প্রশ্ন ও উত্তর